- ফিচার
- ঘরের নতুন সাজ
ঘরের নতুন সাজ

এই করোনাকালে জীবনযাপনের ধারা বদলেছে অনেকটাই। যারা বাইরের জগতে দিনের অনেকটা সময় কাটাতেন, তারাও বাধ্য হয়েই খানিকটা অন্তর্মুখী হয়েছেন। ফলে বাড়ির সঙ্গে নাড়ির টান তৈরি হচ্ছে অনেকের। এর দু'রকম দিকই হতে পারে- টানা চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থেকে যেমন একঘেয়েমি আসছে, তেমনই অনেকে এটাকেই স্বাভাবিক ধরে নিয়ে নিজেদের অন্দরকে সাজিয়ে তুলছেন মনের মতো করে। কেউ নিজের জন্য তৈরি করছেন কাস্টমাইজড কোজি স্পেস। কেউ আবার বাড়িতে কাজের জায়গাকে সাজিয়ে তুলছেন কমফোর্ট জোন হিসেবে। বেডরুম, লিভিং রুমেরও ছোটখাটো মেকওভার সেরে ফেলছেন কেউ কেউ। আর এসবের মধ্যে বাদ যাচ্ছে না রান্নাঘরও। প্যানডেমিকে অনেকেরই শখ হয়ে উঠেছে রান্না করা। অনভ্যস্ত রাঁধুনি হলে রান্নাঘরে থাকতেও বোরিং লাগবে। তাই সেখানেও একটু ভালো লাগার ছোঁয়া দিচ্ছেন অনেকে। সব মিলিয়ে প্যানডেমিক যেমন জীবনধারা বদলেছে, আর অন্দর সাজের চরিত্রেও যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
বাজেট মেনে ঘর সাজানো :যেহেতু প্যানডেমিকের সৌজন্যে অনেকেরই আর্থিক সামর্থ্য কমেছে, তাই বাজেট লিভিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন বেশিরভাগ ক্রেতাই। বাজেটের কথা মাথায় রেখে অনেক ইন্টেরিয়র কোম্পানিই আজকাল ঝুঁকছে প্যাকেজড ডিলে। এক জায়গা থেকেই যাতে ক্রেতা নানা ধরনের প্রোডাক্ট ও ফার্নিশিং পেয়ে যান, তার দিকেও খেয়াল রাখছেন তারা। অর্থাৎ, সাধ্যের মধ্যে বাড়ি সাজানোর সাধ যাতে সাধারণ মানুষ মেটাতে পারেন, সেদিকেই খেয়াল রাখা হচ্ছে বেশি।
কাস্টমাইজড অন্দর :ছিমছাম অন্দরের কনসেপ্টই এখন ইন। তার মানে এই নয়, বাহুল্য পুরোপুরি বাদ দিচ্ছেন সবাই। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা জমকালো সাজ পছন্দ করলেও সাধারণের ক্ষেত্রে ছিমছাম অন্দরই বেশি জনপ্রিয়। তবে এখন কাস্টমাইজড ইন্টেরিয়র স্পেসের চাহিদা বাড়িয়েছে। এ ধরনের অন্দরের মূল কথাই হলো ডিক্লাটারড স্পেস। অনেকটা ওপন স্পেস রাখতে পারেন। আসবাবও হবে ছিমছাম। সোফা বা অন্যান্য আসবাবের ক্ষেত্রে মোনোক্রোম কালার প্যালেট ব্যবহার করতে পারেন। হালকা দেয়ালের রং, উজ্জ্বল আলোতেও অনেকটা ডিক্লাটারড দেখাবে আপনার ঘর। স্টাইলিশ স্টোরেজ স্পেস আর ফাংশনাল ফার্নিচার এর অঙ্গ।
রিসাইকেলড লিভিং :আজকাল অনেকেই ফোকাস করছেন রিসাইকেলড পণ্যের ওপরে। কাঠ বা ধাতুর কোনো পুরোনো জিনিসকেই নতুনভাবে উপস্থাপিত করা হচ্ছে। রিসাইক্লিংয়ের ফলে অন্দর সাজের বাজেটও কিছুটা কমছে বটে। বাড়িকে পরিবেশবান্ধব বানাতে অনেকে এখন রেনওয়াটার হারভেস্টিংয়ের ওপরেও জোর দিচ্ছেন। বাড়ির লাগোয়া বারান্দায় সবুজ কৃত্রিম ঘাসের গালিচা বা হ্যাঙ্গিং পট রাখতে পারেন। বাঁশ, বেত, পাটের আসবাব রাখতে পারেন। বায়োডিগ্রেডেবল উপাদান বা জুট ফাইবারের জিনিসও ভালো।
ওপেন কিচেন :লকডাউনে পরিবারের সবাই রান্নাঘরে বেশি সময় কাটাচ্ছেন। এ বছরে ওপেন কিচেনের চাহিদা খুব বেশি। লিভিং রুমের সঙ্গে লাগোয়া খোলামেলা রান্নাঘর চাইছেন অনেকেই। তন্দুর, মাইক্রোওভেন, ডিশওয়াশার, ইনডাকশন- সবই থাকছে এক জায়গায়। রান্না করার জন্য অটোমেটেড কিচেন গ্যাজেটের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। এখন অনেকে ওয়াশিং মেশিনও ওপেন কিচেনে রাখছেন।
রিল্যাক্সিং কর্নার :কোন ঘর কীভাবে সাজাবেন, তা নির্ভর করে ঘরের সাইজের ওপর। ছোট ফ্ল্যাটে অনেকেই চাইছেন ঘরের লাগোয়া বসার জায়গা। সেটাই হবে তার কোজি কর্নার, হয়তো খানিকক্ষণ বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলেন। রিল্যাক্সিং কর্নার এখন বেশ ইন।
লিভিং রুমের সাজ :ছোট বাড়ি সাজানোর জন্য রিইউজেবল প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। যে জিনিসগুলো প্রয়োজনীয়, সেগুলো দিয়েই ছিমছাম ঘর সাজান। লিভিং রুমের কোজি সিটিং জরুরি, বাড়ির সবাই একসঙ্গে খেলা বা টিভি দেখতে পারবেন। একটু জায়গা থাকলে একটা কোণে দোলনাও রাখা যেতে পারে।
ছিমছাম বেডরুম :লিভিং রুম একটু জমকালো হলেও বেডরুম হবে সিম্পল অ্যান্ড ন্যাচারাল। কালার কম্বিনেশন থেকে শুরু করে আসবাব, বেডরুমের লুক হতে হবে ভীষণ সুদিং। যাতে বাইরে থেকে বেডরুমে ঢুকলে মনে হয় নিজের ঘরে এলাম।
ওয়ার্কস্পেস :যারা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন, তারা অনেকেই অফিসের ফিল বাড়িতেই চাইছেন। বাড়ি যদি অগোছালো থাকে, তাহলে সেই ফিল তো আসবে না। অনেকেই তাই শুধু পরের কয়েক বছর বাড়ি থেকে কাজ করতে হবে ভেবেই বাড়ির মেকওভার করছেন। বাড়িতেই তৈরি করছেন মেকশিফট ওয়ার্কস্পেস। রাতে যারা কাজ করেন, তারা বেডরুমে ব্ল্যাক আউট কার্টেন চাইছেন। দিনের বেলায় পর্দা ফেলে দিলেই পুরো রাতের পরিবেশ হয়ে যাবে। সাউন্ডপ্রুফ আর হিটপ্রুফও হয়ে যাচ্ছে ঘর। ফলে এসি কনজাম্পশনও কমবে।
মন ভালো রাখতে আলো :আলোর নানা বৈচিত্র্য আছে এখন। আলোর ব্যবহারের ওপর মন ভালো থাকা নির্ভর করে। বাড়ির কোনো কোণে ডেকোরেটিভ লাইট রাখতে পারেন। আবার কোথাও হয়তো সিলিং থেকে এমনভাবে লাইটগুলো পড়ছে, ঘরের অ্যাম্বিয়েন্সই বদলে গেল। গ্লোয়িং সিলিংয়ের দিকেও ঝুঁকছেন অনেকে। অটোমেশনও করছেন অনেকে। ঘরের রং নির্ভর করে সাইজের ওপরে। লিভিং রুমের দেয়াল আসবাবের সঙ্গে মিলিয়ে করুন। আসবাব ও দেয়াল দুটিই নিউট্রাল হলে সুদৃশ্য আলো দিয়ে সাজাতে পারেন। ছোট ঘরে অবশ্যই নুড কালার বেছে নিন। অনেকে হালকা রঙের দেয়ালের সঙ্গে কনট্রাস্ট লাউড কালারড আসবাব চান। া
বিষয় : ঘরের সাজ ঘর সাজানো ঘরের টুকিটাকি
মন্তব্য করুন