- ফিচার
- দাঁড়কাকের সেবী 'ক্রিস্টোফর স্কাইফ'
দাঁড়কাকের সেবী 'ক্রিস্টোফর স্কাইফ'

আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে 'কাক' অশুভ বলে চিহ্নিত করা হয়। অথচ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে তাকেই শুভ শক্তি মনে করে তড়িঘড়ির যেন শেষ নেই। ভাড়া করা কর্মীও রয়েছে শুধু কাকের দেখভালের জন্য। কারণ টাওয়ার অব লন্ডনে কাকের গুরুত্ব অন্যরকম। তাদের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, কাক যদি কখনও টাওয়ার অব লন্ডন ছেড়ে চলে যায়, তাহলে সেটি ধসে পড়বে এবং সাম্রাজ্যের অনিষ্ট হবে। তাই তো কাক ধরে রাখতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। টাওয়ার অব লন্ডনকে ঘিরে বিভিন্ন গল্প-কাহিনি, রহস্যময়তার কোনো শেষ নেই। মূলত কুসংস্কারের বেড়াজালের কারণে সপ্তদশ শতাব্দী থেকে রাজকীয় ডিক্রির দৌলতে সেখানকার কাক বিশেষ সুরক্ষার আওতায় রয়েছে।
'ইওম্যান ওয়ার্ডার্স'রা টাওয়ারের রক্ষী হিসেবে কাক পাহারা দেন। যদিও টাওয়ারটি এককালে রাজপ্রাসাদ, কারাগার এবং অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে। টাওয়ার অব লন্ডনে দাঁড়কাক প্রকৃত রক্ষী হিসেবে সুপরিচিত। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভাগ্য নির্ভর করছে কাকের ওপর। তাই ক্রিস্টোফর স্কাইফ কাকের যাবতীয় দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বর্তমান রেভেন মাস্টার তিনি। নিজের কাজের গুরুত্ব বর্ণনা করে তিনি বলেন, 'কিংবদন্তি অনুযায়ী কাক যদি কখনও টাওয়ার অব লন্ডন ছেড়ে চলে যায়, তাহলে সেটি ধুলায় লুটিয়ে যাবে এবং আমাদের সাম্রাজ্যের অনিষ্ট হবে। সে কারণে এই প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব।'
২০১১ সাল থেকে ক্রিস্টোফর স্কাইফ টাওয়ার অব লন্ডনে রেভেন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রিস্টোফর স্কাইফ আজীবন এই দায়িত্ব পালনের ব্রত নিয়েছেন। সপরিবারে তিনি টাওয়ারেই বাস করেন। কাক যাতে পালিয়ে না যায়, সারা দিন ধরে তিনি সে বিষয়ে মাথা ঘামান। সঠিক খোরাক এ ক্ষেত্রে অন্যতম নিরাপদ কৌশল। বর্তমানে আটটি পাখির দেখাশোনাই তার একমাত্র কাজ। কাকগুলো তাদের ইচ্ছামতো উড়ে বেড়াতে পারে। ক্রিস্টের মতে, 'প্রাণীগুলোর প্রত্যেকের নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা বড়ই অদ্ভুত। কোনো কোনো কাক বেশ উদ্ধত, কোনটি আবার খুব লাজুক। অন্যদিকে কিছু কাকের মধ্যে রয়েছে ভীষণ কৌতূহল। আমাকে তাই কাকের চরিত্র সম্পর্কে অভ্যস্ত হতে হয়। শুধু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই আমি সেই কাজ করতে পারি।'
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছেড়ে কাক যাতে কোনোভাবে পালাতে না পারে, তাই মাঝে মধ্যেই ক্রিস্টোফর কাকের ওজন ও বয়সের মাপে তাদের ওড়ার পাখা একটু ছেঁটে দেন। ফলে কাক এখন টাওয়ারের আশপাশেই উড়ে বেড়ায়।
প্রতি সন্ধ্যায় ক্রিস্টোফর স্কাইফ তার কাকেদের ঘুম পাড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় তার দিনের কাজ শেষ হয় এবং সাম্রাজ্যের ধ্বংস এড়াতে তিনি আরও একবার সফল হন। পরদিন আবার সকালে উঠে তার প্রথম কাজ কাকের কাছে যাওয়া এবং তদারকি করা। এভাবেই কাকের সেবার মধ্য দিয়ে তার দৈনন্দিন জীবন কাটে।
মন্তব্য করুন