- ফিচার
- প্রাণীদের বন্ধু শামীম
প্রাণীদের বন্ধু শামীম

কুকুর, বিড়াল, বন্যপাখি যাই হোক বিপদগ্রস্ত হলে ছুটে যান শামীম
তার বুকভরা মায়া। কুকুর, বিড়াল, বন্যপাখি যাই হোক। বিপদগ্রস্ত হলে ছুটে যান। করোনাকালে যখন খাবারের সংকট, মালিকহীন কুকুরগুলো খাবারের জন্য করছিল হাহাকার, তখন তিনি হাজার হাজার কুকুর-বিড়ালকে খাবার দেন। অসুস্থদের সেবা করে সুস্থ করে তোলেন। ২০১৯ সালে গড়ে তুলেছেন অ্যানিম্যাল লাভার্স অব পটুয়াখালী, প্রাণীকল্যাণ সংগঠন নামে একটি সংগঠন। প্রাণীপ্রেমী এই তরুণের নাম মো. শামীম। তার দাদি কুকুর-বিড়াল পছন্দ করতেন। তার ছিল ১৫টির মতো বিড়াল। শামীমের মাও বিড়াল পুষতেন। কুকুর ছিল অনেকগুলো। এসব দেখেই তার আগ্রহ হয়।
কুকুর-বিড়ালের প্রতি তার গভীর মায়া জন্মে। বলা যায় নানা রকম প্রাণীর সঙ্গে কেটেছে তার ছোটবেলা। শামীম বিজিপিতে সৈনিক পদে কর্মরত আছেন। বাবা, ভাই, এক বোন রয়েছে তার। ২০১৫ সাল থেকে তিনি কুকুর-বিড়াল বাঁচাতে কাজ করছেন। কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হয়। তাই কুকুর নিধনের রব ওঠে।
২০১৯ সালের ঘটনা। পটুয়াখালী পৌরসভায় কুকুর নিধনের উদ্যোগী হয়েছিল কিছু মানুষ। শামীম তখন এগিয়ে আসেন। সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হন, নিধন নয়, ভ্যাকসিন দিলেই হয়। ভ্যাকসিন দিলে জলাতঙ্ক হবে না। বলা যায়, তার আপ্রাণ চেষ্টায় বেঁচে যায় অসংখ্য প্রাণীর প্রাণ। ২০২০ সালে পটুয়াখালী পৌরসভার অভ্যন্তরীণ ১২০-এর অধিক মালিকানাহীন কুকুর-বিড়ালকে ভ্যাকসিন দিয়েছেন অ্যানিম্যাল লাভার্স অব পটুয়াখালীর সদস্যরা। সংগঠনটি পটুয়াখালীর সব উপজেলায় ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
সংগঠনটি অসহায় প্রাণীদের কল্যাণে যেমন কাজ করছে, তেমনি বৃদ্ধি করেছে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা। এই সংগঠনের ব্যানারে কয়েকশ কুকুরকে বিভিন্ন রকম সেবা দেওয়া হয়েছে। শামীম বলেন, ২০২০-২১ সালে যখন করোনার প্রকোপ ছিল, মানুষ বাসা থেকে কম বের হতো। তখন কুকুর-বিড়ালের খাবার সরবরাহ করেছি। অসুস্থদের সুস্থ করে তুলেছি। রাস্তার অসহায়, ছিন্নমূল কুকুরদের পরম বন্ধু শামীম। কোথাও কেউ বন্যপ্রাণী অবৈধভাবে পালন করলে, বন্যপ্রাণী শিকার করছে কেউ। এমন খবর শুনলেই শামীম ছুটে যান। সহায়তা নেন বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ও সামাজিক বন বিভাগের। বন্যপ্রাণী মুক্ত করে ছেড়ে দেন। আবার কোথাও বন্যপ্রাণী হত্যা, ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। শামীম সে খবরও পৌঁছে দেন বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে। ২০১৯ সালে তার সংগঠন প্রায় ৩০৩টি (বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, মেছোবিড়াল, শিয়াল, বেজি, ভোঁদড়, বনবিড়াল, বিষধর ও নির্বিষ সাপ ইত্যাদি) বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে অবমুক্ত করে। মানুষকে সচেতন করার বিকল্প নেই। তাই পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যপ্রাণীবিষয়ক সচেতনতামূলক সভা ও ক্যাম্পেইন করেছেন। সংগঠনের সদস্যরা যেন অনুপ্রেরণা পান, সে জন্য তিনি ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে পুরস্কৃত করেছেন। যারা মালিকবিহীন কুকুর-বিড়াল, বন্যপ্রাণী বাঁচাতে ভূমিকা রেখেছেন।
পটুয়াখালীর বাসিন্দা আয়নাল হক বলেন, আগে যত্রতত্র পাখি শিকারিদের দেখা মিলত। হাটবাজারে বন্যপাখি বিক্রি হতো। অ্যানিম্যাল লাভার্স অব পটুয়াখালী সংগঠনের সদস্যরা কাজ করায় এখন আর এসব দেখা যায় না।
এই পৃথিবীটা শুধু মানুষের নয়। সব প্রাণীর। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার সবার আছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণী ও পাখি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বন, বন্যপ্রাণী বাঁচাতে হবে। এই দায়িত্ববোধ থেকেই শামীম প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করছেন।া
আরও পড়ুন
মন্তব্য করুন