- ফিচার
- খাবারে খুঁজুন ভিটামিন
খাবারে খুঁজুন ভিটামিন

খাবার থেকে তো আমরা বেশকিছু ভিটামিন পেয়ে থাকি। এ ছাড়া সম্পূরক খাদ্য হিসেবে কিছু মাল্টিভিটামিন সেবন করে থাকি। অনেক সময় ওষুধগুলো আমরা আপনমনে বা অন্যের পরামর্শ বা অন্যদের দেহে সুফল এনেছে, তা শুনেই খেয়ে ফেলি। চিকিৎসকের পরামর্শ বা ব্যবস্থাপত্রের ধার ধারি না। অথচ শরীরে প্রয়োজনের বেশিমাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করলে তা থেকে হতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা।
বিশেষ করে তেলে দ্রবীভূত ভিটামিনগুলো, যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে মাত্রাধিক সেবনে শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থাকে আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলি হাইপার ভিটামিনোসিস। স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে প্রকৃতি থেকে আহরিত ভিটামিনই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য ভিটামিন ওষুধ কিনে বাড়তি পয়সা খরচ করার দরকার নেই।
ভিটামিন এ
ভিটামিন এ-র সম্পূরক ট্যাবলেড অধিক পরিমাণে সেবন করলে ত্বক শুস্ক হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, এর জন্য গায়ের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়, নখ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, ক্লান্তি জেঁকে ধরে, পেটে ব্যথা অনুভূত হয় এবং সবচেয়ে যেটা আশঙ্কাজনক তা হচ্ছে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। সুডোটিউমার সেরিব্রি বা ব্রেনের ভেতরের উচ্চচাপ দেখা দিতে পারে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি সেবনে। ভিটামিন এ-র সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী উৎস হচ্ছে রঙিন ফল ও শাকসবজি। যেমন- আম, মিষ্টিআলু, গাজর, পেঁপে, কুমড়া।
ভিটামিন বি
লম্বা সময় কাজ করার ফলে রাতে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে। এটা ভিটামিন বি টুয়েলভের অভাবজনিত একটি রোগ। এই রোগের চিকিৎসায় ভিটামিন বি টুয়েলভের সম্পূরক ওষুধ দেওয়া হয়। এ ছাড়া মেরুদণ্ডের স্নায়ুক্ষয় ভিটামিন মারাত্মক অভাবজনিত কারণে দেখা দিতে পারে। আবার দীর্ঘদিন এই ট্যাবলেড সেবনের ফলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতিও হতে পারে। এ জন্য শরীর এমনকি অসাড় হয়ে যেতে পারে।
তাই যে কোনো ভিটামিন খাবার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তার মাত্রা জেনে নেওয়া আবশ্যক। শাক, ডাল, অঙ্কুরিত ছোলা, শিমজাতীয় শস্য এবং চর্বিবিহীন মাংস প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নিশ্চিত করতে হবে।
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি দেহের লৌহ উপাদান শোষণের কাজে ব্যবহূত হয়। এ ছাড়া ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঠাণ্ডা, কাশি, অ্যালার্জিকে প্রতিরোধ করে। এত গুণসমৃদ্ধ ভিটামিনটি যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয়, তাহলে পেটে ব্যথাসহ বমি বমি ভাব হতে পারে। হাড়ের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। লেবু, আমড়া, তেঁতুল, টমেটো, জাম্বুরা, পেয়ারা, কমলা, সজনে, বেল- এসব সাধারণ ফলমূলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি।
ভিটামিন ডি
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নয়নশীল দেশের মানুষের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষই ভিটামিন ডি-র অভাবে ভোগে। এই অভাব পূরণের জন্য সবাই কমবেশি ভিটামিন ডি-র সম্পূরক ওষুধ খেয়ে থাকেন।
এই সম্পূরক ট্যাবলেড রক্তে ভিটামিন ডি-র ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, যা দেহের নরম অঙ্গ যেমন হৃদপিণ্ড, বৃক্ক, ফুসফুসে গিয়ে জমা হতে থাকে।
এতে হৃদরোগ মায়োপ্যাথি ছাড়া আরও অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। তাই সাধারণ মানুষের কথা আর চটকদার হেলথ টিপসে বশীভূত হয়ে কিছুতেই ভিটামিন ডি-এর ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডিমের কুসুম ও প্রাণীর কলিজা বা যকৃত এবং মাংস দেহের ভিটামিন ডি বাড়াতে খুবই কার্যকর। এ ছাড়া সকাল সকাল গায়ে রোদ লাগালেও শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয় নিজে থেকেই।
[পুষ্টিবিজ্ঞানী]
মন্তব্য করুন