![চার্লি চ্যাপলিন [জন্ম :১৬ এপ্রিল ১৮৮৯; লন্ডন, ইংল্যান্ড-২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৭; সুইজারল্যাণ্ড]- ছবি : অনলাইন](https://samakal.com/uploads/2022/04/online/photos/Untitled-3-samakal-62642bff85409.gif)
চার্লি চ্যাপলিন [জন্ম :১৬ এপ্রিল ১৮৮৯; লন্ডন, ইংল্যান্ড-২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৭; সুইজারল্যাণ্ড]- ছবি : অনলাইন
চার্লি চ্যাপলিন। প্রখ্যাত অভিনেতা ও ফিল্মেকার। প্রাতঃস্মরণীয় এই কমেডিয়ানের সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক অংশ অনুবাদ করেছেন শাহনেওয়াজ টিটু
জীবন সত্যিই অনেক কঠিন। একেবারে ছোটবেলা থেকেই এই কঠিনের মুখোমুখি হয়েছিলাম আমি। মনে পড়ে, আমার বাবা চার্লস চ্যাপলিন সিনিয়র ছিলেন একজন বিচিত্রানুষ্ঠানের অভিনেতা। মদ পানের বদঅভ্যাস ছিল তার। আমার বয়স যখন তিন বছর, বাবা তখন আমাদের ছেড়ে চলে যান। আমাদের তিনজনের খরচ বহন করতে মা তখনও মঞ্চে গান গাওয়া অব্যাহত রেখেছিলেন।
গানের কণ্ঠ হারিয়ে চাকরি খোয়ালেন...
মঞ্চ-নাম লিলি হার্লি ধারণ করে মিউজিক হলে গান গাইতেন ও অভিনয় করতেন আমার মা হান্নাহ চ্যাপলিন। প্রতি রাতে নিজের সঙ্গে আমাদের দুই ভাইকেও মিউজিক হলে নিয়ে যেতেন। কেননা তখনও ডে-কেয়ার সিস্টেম চালু হয়নি। ১৯৮৪ সালের মাঝামাঝিতে, পারফর্ম করার সময় আচমকাই গানের কণ্ঠটি হারিয়ে ফেলেন মা। মুহূর্তেই রাগী দর্শকরা তার দিকে এটা-ওটা ছুড়তে শুরু করে দেয়। তখন আমার বয়স পাঁচ বছর। এ ঘটনায় এতটাই মুষড়ে পড়েছিলাম যে, আনমনেই দৌড়ে মঞ্চে উঠে পড়ি এবং মায়ের অসম্পন্ন গানটি গেয়ে দিই। দর্শকরা আমাকে পছন্দ করলেও, আমার মায়ের চাকরিটি চলে গেল।
যেভাবে নিজস্ব ক্লাউনিং টেকনিক আবিস্কার
আমার যখন ১৪ বছর বয়স, তখন শার্লক হোমস নাটকের একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাই। শোটি শেষ হতেই আমার ভাই সিডনি, যে কি-না তখন সস্তা দরের মিউজিক হলগুলোতে কমেডিয়ান হিসেবে কাজ করত, সে আমার সঙ্গে যোগ দেয়। 'রিপেয়ার্স' নামের একটি কমেডি শোতে জনৈক প্লামবারের সহকারীর চরিত্রে অভিনয় করি আমি। আর তা করতে গিয়ে মায়ের পুতুলনাচের অঙ্গভঙ্গিমা আর বাবার মদ্যপ অবস্থার আচার-আচরণকে মনে করে নিজস্ব একটা ক্লাউনিং টেকনিক আবিস্কার করি।
হারিয়ে যায় কণ্ঠস্বর
১৮ বছর বয়সে আমাকে ফ্রেড কার্নো ট্রুপের একটি কমেডির প্রধান চরিত্রটি করতে দেওয়া হয়। সেটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে, মঞ্চটি আচমকাই ভয়ংকরভাবে কেঁপে ওঠে। ঠিক আমার মায়ের মতোই, আমিও কণ্ঠস্বর হারিয়ে ফেলি। যেহেতু সব অভিনেতাকেই সব চরিত্রে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, ফলে সিডনি আমাকে পরামর্শ দিল পুতুলনাচের মাতালটির চরিত্রে অভিনয় করতে। আর 'অ্যা নাইট ইন অ্যান ইংলিশ মিউজিক হল'-এ আমার অভিনয় দর্শকরা মুহূর্তেই গ্রহণ করে নিল।
লস অ্যাঞ্জেলেসে যোগ
১৯১০ সালে আমরা জার্সি সিটি, ক্লিভল্যান্ড, সেন্ট লুইস, মিনেপোলিস, ক্যানসাস সিটি, বাট, বিলিংস ও ডেনভার- আমেরিকান জনবহুল এ অঞ্চলগুলো পারফর্ম করি। যুক্তরাষ্ট্রে আমার দ্বিতীয় ট্যুরটি হয়েছিল ১৯১২ সালে। মাতাল চরিত্রে আমার কমেডি অভিনয় দেখেছিলেন কিস্টোন স্টুডিওর প্রধান- ম্যাক সিনেট। তিনি আমাকে সপ্তাহে ১৫০ ডলার বেতনে চুক্তিবদ্ধ করলেন। তখনকার দিনে এটি বেশ বড় ধরনেরই বেতন ছিল। কার্নোর সঙ্গে ১৯১৩ সালে আমার চুক্তি শেষ হলে, ম্যাকের দলে, লস অ্যাঞ্জেলেসে যোগ দিলাম।
বড়ই বেখাপ্পা
১৯১৪ সালে আমার প্রথম শর্ট ফিল্ম 'কিড অটো রেস অ্যাট ভেনিস'-এ অভিনয়ের আগ মুহূর্তে আমার মনে হলো, পরনে ব্যাগি প্যান্ট, পায়ে বড় আকারের জুতা পরে, মাথায় একটা ডের্ভি হ্যাট আর হাতে একটা ছড়ি নিয়ে দাঁড়ালে মন্দ হয় না! ব্যাগি প্যান্ট, কোট-টাই, ছোট হ্যাট আর ইয়া বড় জুতা- একেকটা জিনিস একেকটার সঙ্গে বড়ই বেখাপ্পা! এভাবেই জন্ম আমার। আর আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘাত-প্রতিঘাতগুলোকেও স্যালুট জানাই। কেননা, এসব থেকেই জন্ম নিয়েছে 'লিটল ট্র্যাম্প'।
মন্তব্য করুন