উৎসব-আনন্দে মেতে ওঠার বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবারও আসছে ঈদ। বর্ণিল সাজে সেজে উঠবে চারপাশ, চলবে ঈদ রাঙিয়ে দেওয়ার নানা আয়োজন- প্রতিকূল এই সময়ের সঙ্গে লড়াই করে সবাই চাইছে, মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে; প্রিয়জনের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। করোনার প্রাদুর্ভাব কমায় বেড়েছে উৎসবের আমেজ। ঈদ দোরগোড়ায়- এই ভাবনায় আনন্দে দিশেহারা হয় মন। এই অনুভূতি কেবল নিজের নয়, সবার। সে দলে থাকেন তারকারাও। তাদের বাড়ি ফেরা, ঈদ উচ্ছ্বাস নিয়ে লিখেছেন এমদাদুল হক মিলটন

উৎসবের অপেক্ষায় হাজারো কাজের মাঝে আনন্দ বয়ে যায় ভুবনজুড়ে। ঈশান কোণে বাঁকা চাঁদ দেখে আনন্দে লাফিয়ে ওঠা দিনগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকে। নিজের কাছে ফিরে যাওয়া, আপনজনের মুখ দেখে সারাদিন আনন্দে কাটিয়ে দেওয়া- সবই আনন্দের। ঈদের চাঁদটা বেশি প্রিয় নন্দিত অভিনেত্রী অপি করিমের। চাঁদ দেখার ক'দিন আগে থেকেই শুরু হয় তার ঈদ প্রস্তুতি। নানা ব্যস্ততায় অবসর পান না এ তারকা। তারপরও কাজের ফাঁক গলে কিছু সময় মুঠোয় পুরে নেন। তার ভাষায়, 'ঈদ যখন আসি আসি করছে, তখন থেকেই তৈরি হতে থাকি। আপনজনের জন্য কিছু না কিছু উপহার কিনতেই হয়। শত ব্যস্ততার মাঝেও সে ভাবনায় ব্যাকুল থাকি।'

ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দ নিয়ে অপি আরও বলেন, 'ঈদের আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যায় যখন আমরা বাড়ি ফিরি। অধীর অপেক্ষায় বসে থাকা প্রিয়জনের মুখগুলো দেখি। আগে প্রতি বছরই যে কোনো একটি ঈদ কুমিল্লায় করতাম। সেখানে নানি বাড়ি। সব ভাইবোন আসায় মিলনমেলা হতো। পুরান ঢাকায় খালাতো, মামাতো ভাইবোন মিলে একটি ঈদ উদযাপন করতাম। আমাদের টার্গেট থাকত সবার সালামির টাকা জমিয়ে তিন দিনের দিন চায়নিজ খাব। তখন ঢাকা শহরে হাতেগোনা কয়েকটি চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ছিল। রিকশায় লাইন ধরে রেস্টুরেন্টে ঢুকতাম। ছোট ছিলাম বলে সালামি পেতাম দশ টাকা। টাকার অঙ্ক কম দেখে মনে হতো কবে বড় হবো। কোনদিন আমাকে ১০০ টাকা দেবে। এখন তো দেওয়ার কেউ নেই। কাউকে যে দেব তাদেরও খুঁজে পাই না। সবাই এখন বেশ ব্যস্ত। কেউ কেউ থাকেন দেশের বাইরে। ভাইবোনের হৃদ্যতা খুব মিস করি। তাইতো ছোটবেলার সুখস্মৃতি এখন দুঃখ দেয়। এ বছর ঈদ আমার জন্য একটু কষ্টের। কারণ, গত বছর বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। বাবার মুখের 'মারে ঈদ মোবারক'- এই ডাকটি আর শুনতে পাব না।
দুই বাংলার প্রিয়মুখ অভিনেত্রী জয়া আহসান। আজ ঢাকা, নয়তো কাল কলকাতা- এভাবেই কাটছে তার দিনকাল। যত ব্যস্ততাই থাকুক, বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন ছাড়া কিছু ভাবতে পারেন না জয়া। 'দেশের বাইরে আর কখনই ঈদ উদযাপন করব না'- ক'দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা আবারও সাফ জানিয়ে দেন তিনি। এর পেছনে রয়েছে জয়ার অশ্রুসিক্ত অভিজ্ঞতা। একবার কলকাতায় তার ঈদ কাটাতে হয়েছিল। ঈদের দিন তার মেনুতে ছিল মিষ্টি পোলাও, মাটন আর বাসি পরেজ। হয়তো মায়ের হাতের খাবারের কথা মনে পড়ছিল অভিনেত্রীর। সেদিন কাঁদতে হয়েছিল তাকে।

রোজার ঈদ মৌসুমীর কাছে বিশেষ উৎসব। ঢাকায় বসবাস করলেও শিকড়ের টানে মাঝে মাঝে নিজ এলাকা খুলনায়ও যান ঈদের আনন্দে শামিল হতে। তিনি বলেন, 'বাড়ি যাওয়ার পথে বাংলার রূপসৌন্দর্য উপভোগ করা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আলাদা। ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাওয়া সত্যিই আনন্দের। প্রিয়মুখগুলো এক পলক দেখার জন্য ঈদ ছাড়া আর বিশেষ কোনো দিন চোখে পড়ে না। প্রিয়জনদের সান্নিধ্য পেতে মানুষ কত ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরে! এত মায়া, মমতা আর স্নেহ ভালোবাসা প্রিয় মানুষ ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে আশা করা যায় না। ছোটবেলার ঈদ নিয়ে মৌসুমী আরও বলেন, 'স্কুল জীবনের ঈদে বেশি আনন্দ পেতাম। আব্বু ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যস্ত থাকায় কেনাকাটার সময় খুব একটা পেতেন না। তবুও অপেক্ষায় থাকতাম তিনি না কিনে দিলে আমাদের ভালো লাগত না। তবে আম্মুর পছন্দের কাপড়চোপড়ই বেশি পরা হতো। যখন একটু বড় হলাম, ঠিক তখনই ঈদ যেন কেমন হতে লাগল।'

তারকা অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি। বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। এখন নানা ব্যস্ততায় বাড়িতে যাওয়া না হলেও শৈশবের দিনগুলোতে সুযোগ হলেই ছুটে যেতেন চট্টগ্রামে। সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেন। ঈদ স্মৃতি নিয়ে পূর্ণিমা বলেন, 'ঈদের আনন্দ ছোটদের জন্যই। শৈশবের ঈদের স্মৃতি আমার চোখে সব সময় জ্বলজ্বল করে। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য ছাদে উঠে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকতাম। দেখা মিললেই মনে খুশির ফুল ফুটত। চাঁদরাতেই ডিজাইন করে মেহেদি দিতাম। যাতে বোন বা বান্ধবীরা দেখতে না পায় তাই নতুন জামাকাপড় লুকিয়ে রাখতাম। ঈদের দিন সকালে ওই জামা পরে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতাম। মধুর ছিল সেসব দিন।'

কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির নেত্রকোনার বাড়ি এখন বেশির ভাগ সময়ই ফাঁকা পড়ে থাকে। তার মা-বাবা যখন বেঁচে ছিলেন প্রতিবার সেখানে সবাই একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করতেন। পরিবারের সবাই অপেক্ষা করতেন। এখন সবকিছুতেই তার শূন্যতা। ন্যান্সি বলেন, 'রোদেলাকে সারাক্ষণ দেখেশুনে বেড়ে তুলেছেন যিনি, তিনি আমার মা। মা যখন বেঁচে ছিলেন ওকে নিয়ে ভাবতে হয়নি, ইচ্ছামতো নিজের কাজ করতে পেরেছি। ঈদে বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে মা-বাবার কাছে চলে যেতাম। ২০১২ সালে মাকে হারালাম। এর আট বছর পর বাবাও পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলেন। তারা যখন বেঁচে ছিলেন সবাই একসঙ্গে ঈদ করার মজাই ছিল অন্যরকম। তারা আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। শৈশব-কৈশোরের ঈদ খুব মিস করেন অভিনেত্রী তারিন জাহান। তিনি বলেন, 'ছোটবেলায় ঈদে অনেক আনন্দ করতাম। ঈদের সেলামি নিয়ে অনেক মজার ঘটনা আছে। সকালে উঠে তড়িঘড়ি করে নতুন পোশাক পরে রেডি হতাম। ওই সময়ের ঈদ ভোলার নয়। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কাটত মধুর সময়। এখন একটা পরিধির মধ্যে থেকে যতটা সম্ভব প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করি। আজ বাবা বেঁচে নেই। তাকে ছাড়াই ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে। এটা ভীষণ কষ্টের। আমার কাছে ঈদ মানে সবার আনন্দঘন মুহূর্ত।'