প্রকৃতিতে গ্রীষ্ফ্মকাল চলছে। দিনে ঠাঁ ঠাঁ রোদ আর রাতে মাঝে মাঝে বৃষ্টি। গ্রীষ্মের এমনই এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় কথা হয় এই সময়ের সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেত্রী শবনম বুবলীর সঙ্গে। কথার শুরুতেই নতুন এক ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার খবর দিয়ে শুরু করলেন 'বসগিরি'র এই চিত্রনায়িকা। জানালেন, 'প্রেমপুরাণ' নামের একটি ছবিতে অভিনয় শুরু করবেন। এতে তার নায়ক হিসেবে অভিনয় করবেন জিয়াউল রোশান।

ঢালিউডের নায়িকাদের মধ্যে এখন কেবল বুবলীর বেলাতেই নতুন ছবিতে কাজের জন্য যুক্ত হওয়ার খবর আসছে। সমালোচকদের মতেও ঢাকাই ছবির সব নায়িকার মধ্যে বুবলীর বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। প্রায় ছয় বছরের অভিনয়জীবনে বুবলীকে এখন সব মাধ্যমেই পাচ্ছেন দর্শকরা। বিশেষ করে এবারের ঈদুল ফিতরে কোথায় ছিলেন না বুবলী!

বড় পর্দা থেকে টেলিভিশন, অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম সবখানে তাকে পেয়েছে দর্শক। ঈদে বুবলী অভিনীত দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে দুই মাধ্যমে। টিভিতে সাত দিনব্যাপী ঈদ আয়োজনে দেশের সব চ্যানেলেই ছিল তাঁর অভিনীত সিনেমাগুলো। গেল ঈদে দেশের সর্বাধিক সিনেমা হলে মুক্তি পায় বুবলী অভিনীত 'বিদ্রোহী'। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত ওয়েব ফিল্ম '৭ নম্ব্বর ফ্লোর'। সিনেমা, টিভি এবং ওটিটি- সব মাধ্যমেই সরব উপস্থিতি। বিষয়টি কেমন লাগছে? তিন মাধ্যম থেকে দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন? এমন প্রশ্ন রাখতেই বুবলী এক কথায় জানালেন, দারুণ। একটু দম নিয়ে বুবলী বললেন, 'অভিনয় জীবনের শুরু থেকেই ঈদে আমার ছবি মুক্তি পায়।

টিভিতেও পুরোনো ছবিগুলো প্রচার হয়। প্রতিবারই বেশ ইতিবাচক সাড়া পাই। দর্শকদের কাছাকাছি থাকায় ঈদের আনন্দ আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। এবার ঈদে ওটিটিতেও এলাম। ঈদের ছুটিতে বাসায় বাসায় টেলিভিশনে আমার পাঁচটি সিনেমা প্রথমবারের মতো দেখার সুযোগ পেয়েছেন টিভির দর্শক। দেশ ও দেশের বাইরে অসংখ্য দর্শক ওটিটিতে আমার কাজ দেখেছেন। এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের।' তবে ওটিটিতে যাত্রা এবারই প্রথম নয় বুবলীর। এর আগে সিয়াম আহমেদের বিপরীতে চরকিতে মুক্তি পায় 'টান'। এই সিনেমার অবনী চরিত্র দিয়ে ভিন্ন ইমেজ তৈরি করেছেন বুবলী। গ্ল্যামারাস চরিত্রের বাইরে গিয়ে তাঁর অভিনীত এই সিনেমাটির কথা দর্শক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রবোদ্ধারাও বলেছেন। এই সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বুবলী বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি সিনেমায় লম্বা রেসের ঘোড়া হয়েই থাকতে চান। অনলাইনে একের পর এক কাজের মাধ্যমে ওটিটিতে মনোযোগী হচ্ছেন বুবলী। তাই তো তাঁর কাছে জানতে চাই, আগামীতে বুবলীকে কোথায় বেশি দেখা যাবে? তিনি বললেন, 'আমার অভিনয়জীবনের শুরু থেকেই আমি ভালো কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চেয়েছি। চেয়েছি আমার ভক্ত ও দর্শকদের ভালো ভালো কাজ উপহার দিতে। ফলে মাধ্যম আমার কাছে বিষয় না।'

বুবলীর এ কথায় বোঝা গেল সিনেমা হল, টিভি কিংবা ওটিটি তাঁর কাছে গুরুত্বের দিক দিয়ে সবই সমান। বেশি জোর দিতে চান কাজে। ভালো কাজে। যে কাজটি দর্শক দেখবেন, তাঁদের হৃদয়ে নাড়া দেবে, কাজ দেখে তৃপ্ত হবেন। ২০০৭ সালের 'বসগিরি' থেকে শুরু করে হালের 'বিদ্রোহী' পর্যন্ত বুবলীর প্রায় এক ডজন ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে বক্স অফিসে ছয়টি ছবিই সফল। অর্থাৎ বুবলীর ক্যারিয়ার গ্রাফ 'ফিফটি ফিফটি'র দোলাচলে। এখনও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পেলেও, বুবলীর অভিজ্ঞতার খাতা বলে, দারুণ সব গল্পের ছবিতে অভিনয় করেছেন। ঢালিউডের চলচ্চিত্র বিশ্নেষকদের মতে, একজন শিল্পীর যাত্রা ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়েই যাচাই করতে হয়। এই যাচাইয়ের মাধ্যমে উঠে আসে শিল্পীর কাজের মান। তাই বুবলী ঢালিউড বিশ্নেষকদের চোখে হলেন 'লম্বা রেসের ঘোড়া'!

'বসগিরি'র পর শাকিব-বুবলী একে একে কাজ করেন 'শুটার', 'রংবাজ', 'অহংকার', 'চিটাগাইঙ্গা পোলা নোয়াখাইল্যা মাইয়া', 'ক্যাপ্টেন খান', 'পাসওয়ার্ড', 'বীর' এবং সর্বশেষ 'বিদ্রোহী'। ফলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, শাকিব খান থেকে বেরিয়ে এলে বুবলীও হারিয়ে যাবেন। বেকার হয়ে পড়বেন। সমালোচকদের সে ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন বুবলী। শাকিবের সঙ্গে যেমন কাজ করছেন, তাঁকে ছাড়া অন্য নায়কদের সঙ্গে করছেন আরও বেশি ভালো ভালো কাজ। আগামীতে শাকিব খানের বাইরে অন্য নায়কের বিপরীতে 'ক্যাসিনো', 'কয়লা', 'তালাশ', 'রিভেঞ্জ', 'বিট্রে' ও 'মায়া :দ্য লাভ'-এর মতো সিনেমায় দেখা যাবে বুবলীকে। পাশাপাশি দেখা যাবে শাকিব খানের নায়িকা হিসেবেও। সব ঠিক থাকলে ঈদুল আজহায় মুক্তি পাবে বুবলী-শাকিবের 'লিডার, আমিই বাংলাদেশ'।