- ফিচার
- আম-কাঁঠালের সময়
আম-কাঁঠালের সময়

ধূলিধূসর, মেঘময়, রৌদ্রমাখা উত্তাপমুখর দিন। রসালো ফলের মৌতাতে উতলা প্রকৃতি। এ যেন তপ্ত দিনের মধুময় সময়। পথে-ঘাটে-হাটে বাজারে পাকা ফলের সমাহার। সুবাসিত আবেশ। মিষ্টি ফলের রসে টইটম্বুর চারিধার। গাছে গাছে এখন পুরুষ্টু কাঁঠালের বর্ণাঢ্য বিভা। গাঢ় সবুজ আমের শরীরে রঙিন ছোপ। পাকা আমের ঘ্রাণ। পেকে ওঠা লিচু গাছ ঘিরে দিনে পাখি আর রাতে বাদুড়ের কোলাহল। পাকা জামের মধুর রসে মুখ রঙিন করার স্বপ্নের দোলা।
জ্যৈষ্ঠের রৌদ্রস্নাত দুপুর। চারদিকে তাজা ফলের গন্ধ। গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা আম। ছোট-বড় কাঁঠালগুলো পুরো গাছের শরীর জড়িয়ে থরে থরে সেজে রয়েছে। নগরের দূষণমুক্ত বিশুদ্ধ বাতাসে ভাসছে রস টসটসে ফলের আদি ও অকৃত্রিম গন্ধ। শুধু কি আম-কাঁঠাল। জ্যৈষ্ঠ মাসে মেলে জাম, লিচু, আনারস, বেল, ডেউয়া লটকন, গোলাপজাম, বেতফল, গাব, জামরুল, কাঁচা তাল, জাম্বুরা, আতাফল, খেজুর, কাউফল, শরিফা, করমচা, ফুটি, কামরাঙা রকমারি ফল। মধুমাসে আম-কাঁঠালের পাশাপাশি রকমারি ফলের ম-ম সৌরভে যেন মাতোয়ারা চারপাশ।
এসব ফল খোলাবাজারে আসতে শুরু করেছে ক'দিন আগে থেকেই। বিশেষ করে আম পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। রস টসটস বর্ণিল রঙের ফলে ছেয়ে গেছে বাজারগুলো। গ্রামের হাটবাজারে এখন মিষ্টি ফলের সুবাস। দূর-দূরান্ত থেকে শহরেও আসতে শুরু করেছে নানা জাতের ফল। ফলের ম-ম ঘ্রাণে ভরে উঠেছে ফলের আড়তগুলো। কোথাও কোথাও মৌসুমি ফলের মেলা বসবে।
গ্রামের মতো শহরের অলিগলিতেও ফলের দোকানেও মধুমাসের আভাস।
এ মাসের প্রধান ফল আম নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, 'বন্ধু, আজো মনে পড়ে আম কুড়ানোর খেলা/ আম কুড়াইতে যাইতাম দু'জন নিশি ভোরের বেলা।'
করোনা মহামারির ভয়াল থাবায় দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। এ সময় বলা যায় আমাদের শিশু-কিশোররাও ছিল ঘরবন্দি। এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাব কমায় খুলে গেছে পাঠশালা। স্কুল পড়ূয়ারা পাবে কি গ্রীষ্ফ্মের ছুটি। 'আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা/ ফুল তুলিতে যাই/ফুলের মালা গলায় দিয়ে/মামার বাড়ি যাই/মামার বাড়ি ঝড়ের দিনে/আম কুড়াতে সুখ/পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ।' পল্লিকবি জসীম উদ্দীনের এই কালজয়ী হৃদয় হরণ করা পদ্যের সুরে কণ্ঠ মিলিয়ে তারা কি যেতে পারবে মামার বাড়ি?
গ্রামে এ সময় প্রায় দেখা মেলে আম খেতে খেতে শিশুদের খেলাধুলার দৃশ্য, পাকা কালোজাম খেয়ে কিশোর-কিশোরীদের জিহ্বা রঙিন করা সেই প্রতিযোগিতাও তো মধুমাসেরই প্রতিচ্ছবি। নাস্তা হিসেবে অনেকের আম কিংবা কাঁঠালের সঙ্গে মুড়ি হয়ে ওঠে প্রিয় খাবার। আর আম-দুধ তো কারও কারও সবচেয়ে প্রিয়। প্রিয়র তালিকায় শীর্ষে বলেই জাতীয় ফলের তকমা পেয়েছে রসালো ফল কাঁঠাল।
গ্রীষ্ফ্মের এই মধুমাস তো শুধু ফলের মাস নয়; যেন বাঙালির উৎসবের মাস। পথ-ঘাট, হাট-বাজার থেকে ঘরে ফল এলে সবার আনন্দ কেমন যেন বেড়ে যায়। ভিন্ন এক আমেজ তৈরি হয়। রসালো দারুণ স্বাদের সব ফল নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় স্থান করার পাশাপাশি আমাদের সম্পর্ক গভীর করে তোলে।
এ সময় কন্যার শ্বশুরবাড়িতে আম-কাঁঠালসহ রকমারি ফল নিয়ে হাজির হয় মেয়ের মা-বাবা কিংবা ভাই। শ্বশুরবাড়ি থেকেও মেয়ের বাবার বাড়িতে আসে ফলের ঝাঁকা। মধুমাস উপলক্ষে দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজনদের ঘটে মহামিলন। কোনো কোনো অঞ্চলে ফলের মৌসুমে মেয়েকে নাইওর আনার রেওয়াজ আছে। এ অঞ্চলের মানুষের সংসারে যতই থাক টানাপোড়েন, অর্থকষ্ট, আম-কাঁঠালের এ উৎসব উদযাপন করেন ঘটা করে। ফলের ঝুড়ি নিয়ে অফিসেও হাজির হন অনেকে। শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে এ সময় ফল হয়ে ওঠে অনন্য এক উপহার। এর সঙ্গে মিশে আছে অন্যরকম আবেগ, উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসা যা পারিবারিক বন্ধনকে নতুন রূপ দেয়। স্বভাবতই আম-কাঁঠালের এ সময় শুধু ফলের নয়. বাঙালির মিলনমেলারও।
সুহৃদ, ঢাকা
জ্যৈষ্ঠের রৌদ্রস্নাত দুপুর। চারদিকে তাজা ফলের গন্ধ। গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা আম। ছোট-বড় কাঁঠালগুলো পুরো গাছের শরীর জড়িয়ে থরে থরে সেজে রয়েছে। নগরের দূষণমুক্ত বিশুদ্ধ বাতাসে ভাসছে রস টসটসে ফলের আদি ও অকৃত্রিম গন্ধ। শুধু কি আম-কাঁঠাল। জ্যৈষ্ঠ মাসে মেলে জাম, লিচু, আনারস, বেল, ডেউয়া লটকন, গোলাপজাম, বেতফল, গাব, জামরুল, কাঁচা তাল, জাম্বুরা, আতাফল, খেজুর, কাউফল, শরিফা, করমচা, ফুটি, কামরাঙা রকমারি ফল। মধুমাসে আম-কাঁঠালের পাশাপাশি রকমারি ফলের ম-ম সৌরভে যেন মাতোয়ারা চারপাশ।
এসব ফল খোলাবাজারে আসতে শুরু করেছে ক'দিন আগে থেকেই। বিশেষ করে আম পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। রস টসটস বর্ণিল রঙের ফলে ছেয়ে গেছে বাজারগুলো। গ্রামের হাটবাজারে এখন মিষ্টি ফলের সুবাস। দূর-দূরান্ত থেকে শহরেও আসতে শুরু করেছে নানা জাতের ফল। ফলের ম-ম ঘ্রাণে ভরে উঠেছে ফলের আড়তগুলো। কোথাও কোথাও মৌসুমি ফলের মেলা বসবে।
গ্রামের মতো শহরের অলিগলিতেও ফলের দোকানেও মধুমাসের আভাস।
এ মাসের প্রধান ফল আম নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, 'বন্ধু, আজো মনে পড়ে আম কুড়ানোর খেলা/ আম কুড়াইতে যাইতাম দু'জন নিশি ভোরের বেলা।'
করোনা মহামারির ভয়াল থাবায় দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। এ সময় বলা যায় আমাদের শিশু-কিশোররাও ছিল ঘরবন্দি। এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাব কমায় খুলে গেছে পাঠশালা। স্কুল পড়ূয়ারা পাবে কি গ্রীষ্ফ্মের ছুটি। 'আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা/ ফুল তুলিতে যাই/ফুলের মালা গলায় দিয়ে/মামার বাড়ি যাই/মামার বাড়ি ঝড়ের দিনে/আম কুড়াতে সুখ/পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ।' পল্লিকবি জসীম উদ্দীনের এই কালজয়ী হৃদয় হরণ করা পদ্যের সুরে কণ্ঠ মিলিয়ে তারা কি যেতে পারবে মামার বাড়ি?
গ্রামে এ সময় প্রায় দেখা মেলে আম খেতে খেতে শিশুদের খেলাধুলার দৃশ্য, পাকা কালোজাম খেয়ে কিশোর-কিশোরীদের জিহ্বা রঙিন করা সেই প্রতিযোগিতাও তো মধুমাসেরই প্রতিচ্ছবি। নাস্তা হিসেবে অনেকের আম কিংবা কাঁঠালের সঙ্গে মুড়ি হয়ে ওঠে প্রিয় খাবার। আর আম-দুধ তো কারও কারও সবচেয়ে প্রিয়। প্রিয়র তালিকায় শীর্ষে বলেই জাতীয় ফলের তকমা পেয়েছে রসালো ফল কাঁঠাল।
গ্রীষ্ফ্মের এই মধুমাস তো শুধু ফলের মাস নয়; যেন বাঙালির উৎসবের মাস। পথ-ঘাট, হাট-বাজার থেকে ঘরে ফল এলে সবার আনন্দ কেমন যেন বেড়ে যায়। ভিন্ন এক আমেজ তৈরি হয়। রসালো দারুণ স্বাদের সব ফল নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় স্থান করার পাশাপাশি আমাদের সম্পর্ক গভীর করে তোলে।
এ সময় কন্যার শ্বশুরবাড়িতে আম-কাঁঠালসহ রকমারি ফল নিয়ে হাজির হয় মেয়ের মা-বাবা কিংবা ভাই। শ্বশুরবাড়ি থেকেও মেয়ের বাবার বাড়িতে আসে ফলের ঝাঁকা। মধুমাস উপলক্ষে দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজনদের ঘটে মহামিলন। কোনো কোনো অঞ্চলে ফলের মৌসুমে মেয়েকে নাইওর আনার রেওয়াজ আছে। এ অঞ্চলের মানুষের সংসারে যতই থাক টানাপোড়েন, অর্থকষ্ট, আম-কাঁঠালের এ উৎসব উদযাপন করেন ঘটা করে। ফলের ঝুড়ি নিয়ে অফিসেও হাজির হন অনেকে। শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে এ সময় ফল হয়ে ওঠে অনন্য এক উপহার। এর সঙ্গে মিশে আছে অন্যরকম আবেগ, উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসা যা পারিবারিক বন্ধনকে নতুন রূপ দেয়। স্বভাবতই আম-কাঁঠালের এ সময় শুধু ফলের নয়. বাঙালির মিলনমেলারও।
সুহৃদ, ঢাকা
মন্তব্য করুন