'আরে খান'- এই বলে টোস্ট বিস্কুটের প্লেটটা এগিয়ে দিলেন প্রতিবেশীর দিকে সুন্দর লোকটা। প্রতিবেশী কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল প্লেটে পড়ে থাকা টোস্টটার দিকে। প্রতিবেশী পেশায় ডাক্তার। ডাক্তার ভাবছে সুন্দর লোকটার কথা। ছোটখাটো একটা চাকরি করে সে, কিন্তু তার ব্যাংক ব্যালান্স ছোটখাটো নয়। বাড়ি আছে, বাড়ি ভাড়া আছে, ব্যবসা আছে, জমি আছে- আবাদ হয়। প্রচুর ঘুষ খায় লোকটা, আবার সুন্দর কথা বলে, নৈতিকথার কথা বলে। ডাক্তারের খুব বলতে ইচ্ছে করছে এই খসখসে টোস্ট খাব না। যাই হোক ডাক্তার টোস্টটা প্লেট থেকে পেটে চালান করে দিয়ে বলল, 'আচ্ছা আপনি যে ঘুষ খান খারাপ লাগে না?'
'কী বলেন আপনি, কখনও টাকার গন্ধ শুঁকেছেন?'
'না'।
'অবিশ্বাস্য গন্ধ! যে কোনো ভালো ব্র্যান্ডের পারফিউমকে হার মানাতে বাধ্য।'
তারা যখন কথা বলছে, একটা কেউটে সাপ তাদের পাশেই জঙ্গল থেকে সুন্দর লোকটাকে খেয়াল করে অদ্ভুতভাবে মাথা নাড়ছিল। ডাক্তার তখন বলে উঠল, 'এখন উঠি, পরে দেখা হবে।' এই বলে ডাক্তার উঠে চলে গেল। সুন্দর লোকটা কিছুক্ষণ আঙিনায় বসে থেকে উঠল। কেউটেটাও অন্যদিকে চলে গেল।
ডাক্তার ভাবতে লাগল কী অবলীলায় সে এই সুন্দর লোকটাকে এভাবে সব বলে বসল। আর তাদের সংলাপটাও কেমন যেন খাপছাড়া। হুট করে সে তার ঘুষ খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করে বসল। সংলাপটাও অপূর্ণ মনে হচ্ছে। এই সুন্দর লোকটার বাড়ি এখানেই। চাকরি সূত্রে ডাক্তারের সঙ্গে তার পরিচয়। প্রথম সাক্ষাতেই বিমোহিত হয়ে পড়েছিল এই সুন্দর লোকটার সঙ্গে কথা বলে। তার বড় গুণ শৈল্পিকভাবে মিথ্যা বলা। মিথ্যা দিয়ে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় ভালোই জানে লোকটা। কিন্তু ডাক্তার কৌতূহলী হয়ে পড়ে এ লোকটা সম্পর্কে। সখ্য তৈরি হয়। এখন তাদের ভেতর প্রায় নিবিড় সম্পর্ক। সুন্দর লোকটা রেডি হয়ে অফিসের পথ ধরে। তার পাশ দিয়ে জঙ্গল মতো রাস্তা ধরে কেউটেটাও তাকে অনুসরণ করতে থাকে। লোকটা অফিসে প্রবেশ করল। সবাই খুব খুশি হয়ে উঠল। সবাই তাকে খুব পছন্দ করে তার সত্য কথা বলার জন্য। আসলে অনেকেই সত্য আর শৈল্পিক মিথ্যার ভেতর পার্থক্য ধরতে পারে না। অনেকেই জানে না সে মাছ-ভাত ছাড়া ঘুষখোর। অফিস শেষে লোকটা বাড়ির পথ ধরে। আশ্চর্য! কেউটেটাও তাকে অনুসরণ করে।
সুন্দর লোকটা বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বাচ্চারা তাকে ঘিরে ধরে। তার বউও খুব খুশি হয়। বউ তাকে খুব ভালোবাসে। বউ জানে সে ঘুষ খায়। এ বিষয়ে তার অবশ্য নিজস্ব মতামত আছে। গভীর রাতে সুন্দর লোকটা যখন তার অসুন্দর বউয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, অন্ধকারে কেউটেটাও মাথা নাড়াচ্ছে। সুন্দর লোকটা প্রতিটি কাজেই দক্ষ। সকাল বেলায় লোকটা আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে দেবতার নামে দিন শুরু করে। আজ ছুটির দিন। বৈঠকখানায় সে আর ডাক্তার বসে আছে। আলোচনা হচ্ছে ধর্ম, দর্শন, নৈতিকতা এমনকি হাল আমলের ছেলেমেয়েরা কী করে তা নিয়ে! হঠাৎ করে সুন্দর লোকটা চিৎকার দিয়ে ওঠে।
'মরে গেলাম! সাপে কাটছে!'
ডাক্তার দেখে বিষাক্ত কেউটে সাপকে। জড়তা কাটিয়ে উঠে ডাক্তার যখন কিছু একটা করার জন্য উঠে দাঁড়াবে, তখন চোখ পড়ে লোকটার ওপর। অদ্ভুত! বিস্ময়ের পর বিস্ময়! লোকটা যেন স্থিতধী। কিচ্ছু হয়নি! ডাক্তারকে ইশারা করে বলেন, 'বসেন ডাক্তার।'
'বসব মানে? এই অবস্থায়? শিগগিরই আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।'
লোকটা স্মিত হেসে বলল, 'ডাক্তার দেখেন' তার দেখানো দিকে তাকিয়ে ডাক্তার হতবাক! কেউটেটা মরে পড়ে আছে।
'এটা কীভাবে সম্ভব? এই বিষাক্ত সাপ আপনার পায়ে কাটল অথচ আপনার কিছু হলো না। এই সাপটাই মরে গেল। অত্যন্ত বিষধর সাপ এটা।'
সুন্দর লোকটা হা হা করে হেসে উঠে বলল- ' তাহলে আমি কি বেশি বিষাক্ত?'
অবোধ শিশুর মতো সুন্দর লোকটার দিকে তাকিয়ে রইল ডাক্তার। 
সুহৃদ, নওগাঁ

বিষয় : গল্প

মন্তব্য করুন