চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় যোগাযোগ, ব্যবসা থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক জীবনের নানা কর্মকাণ্ড এখন প্রযুক্তিনির্ভর। আর প্রযুক্তির নির্ভরতায় প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে হাজার হাজার বাইট ডাটা। এসব ডাটার নিরাপদ সংরক্ষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্ব বিবেচনায় ডাটার নিরাপদ সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় প্রযুক্তি দুনিয়া এখন ক্লাউডমুখী। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার পাশাপাশি সাশ্রয়ী হওয়ায় ক্লাউড সেবায় দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হুয়াওয়ে। যাত্রা শুরুর চার বছরের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ ক্লাউড সেবাদাতা এখন হুয়াওয়ে। চীন, থাইল্যান্ড ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বাজারে যথাক্রমে দুই, তিন ও চার নম্বর অবস্থান অর্জন করে নিয়েছে হুয়াওয়ের এই সেবা। হুয়াওয়ে বাংলাদেশে ২৩ বছর ধরে কাজ করলেও তিন বছর হলো ক্লাউড সেবা নিয়ে এসেছে। এরই মধ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় ক্লাউড সেবায় পরিণত হয়েছে হুয়াওয়ে ক্লাউড।

ক্লাউড সেবায় যত সুবিধা
গার্মেন্ট ও ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিসহ দেশে বড় ডাটা সেন্টার মেইনটেইন করে এমন অন্তত ছয় হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের ডাটা ও সফটওয়্যার হোস্ট করার জন্য এক থেকে একাধিক ফিজিক্যাল সার্ভার ব্যবহার করে থাকে। তবে ফিজিক্যাল সার্ভারের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। হার্ডওয়্যার যন্ত্রপাতি সেটআপ, ব্যবস্থাপনাসহ নানা ঝক্কি রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতা এড়িয়ে ফিজিক্যাল সার্ভারের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্লাউড সেবা। এরই মধ্যে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের ডাটা ক্লাউডে হোস্ট করছে।

হুয়াওয়ে ক্লাউডের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি তার প্রয়োজনমতো ক্লাউডের সেবা কাস্টমাইজ করে নিতে পারে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কথা ধরলে বলা যায়, ই-কমার্স কোম্পানি কখনও কখনও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশেষ ছাড় কিংবা অফার দেয়। এ সময় সংশ্নিষ্ট ই-কমার্স পোর্টালে তুলনামূলক বেশি গ্রাহক ঢোকে। ফিজিক্যাল সার্ভারের পক্ষে বাড়তি গ্রাহকের চাপ সামলানো কঠিন। কিন্তু ক্লাউড সার্ভিস স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তি গ্রাহকের চাপ নিয়ে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহারকারীবান্ধব রাখবে। ফিজিক্যাল সার্ভারের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে ব্যবসার প্রবৃদ্ধিতে অর্ডার কিংবা গ্রাহক বাড়লে সক্ষমতা বাড়াতে নতুন সার্ভার কিনতে হয়, নতুন সার্ভার সেটআপের ঝামেলা নিতে হয়। কিন্তু ক্লাউডের ক্ষেত্রে এসবের ঝামেলা একেবারেই নেয়।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়ে এসে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগডাটা, মেশিন লার্নিং টার্মগুলো নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও ক্লাউড জনপ্রিয় হচ্ছে। ক্লাউডের সুবিধা হচ্ছে, তুলনামূলক অর্ধেক খরচেই সব ধরনের ডাটা অনায়াসে ক্লাউডে হোস্ট করা যায়। ক্লাউড সেবার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে ডাটা বিশ্নেষণ করে নানা প্রতিবেদন তৈরি করা যায়, যা ব্যবসার উন্নয়নে অপরিহার্য। ধরুন, কোনো একটি প্রতিষ্ঠানকে সাত দিনের মধ্যে বড় ধরনের ডেলিভারি দিতে হবে। এখন এ ধরনের ডেলিভারি নিশ্চিত করতে ওই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সক্ষমতা কেমন এবং এর সঙ্গে আরও কী ধরনের রিসোর্স যুক্ত করা লাগবে- ক্লাউডে তা বিশ্নেষণ করা যাবে।

কেন হুয়াওয়ে ক্লাউড
হুয়াওয়ে ক্লাউডে মিলছে ফিজিক্যাল সার্ভারের চেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে আরও বাড়তি সুবিধা। হুয়াওয়ের পাবলিক ক্লাউডে ২২০টিরও বেশি ফিচার রয়েছে। ক্লাউড সেবা দিতে হুয়াওয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২৭টি ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের গ্রাহকদের ডাটা লো লেটেন্সি সেবা দিতে হুয়াওয়ে সাধারণত সিঙ্গাপুরে হোস্ট করে থাকে। তবে গ্রাহক চাইলে চীনসহ আমেরিকা কিংবা ইউরোপীয় অঞ্চলে ডাটা সেন্টারে হোস্ট করতে পারে। দেশের ৫৫টির বেশি বড় ধরনের প্রতিষ্ঠান বর্তমানে হুয়াওয়ে ক্লাউড সেবা নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গার্মেন্ট, ম্যানুফ্যাকচারিং, ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ক্লাউড শুধু অবকাঠামো সেবা নয় (ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাজ সার্ভিস-আইএএস), এটি সফটওয়্যার সেবাও (সফটওয়্যার অ্যাজ সার্ভিস-স্যাস)। হুয়াওয়ে ক্লাউডের অ্যানালাইটিক সেবা সাবস্ট্ক্রিপশন-ভিত্তিক মাসিক চার্জের বিনিময়ে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। গ্রাহকের যে ধরনের অ্যানালাইটিক প্রয়োজন, শুধু সেগুলো সাবস্ট্ক্রিপশন নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে খরচও তুলনামূলক কম পড়ছে।

বিভিন্ন ক্লাউড সেবাদাতারা সাধারণত আইএএস, স্যাস ও প্ল্যাটফর্ম অ্যাজ এ সার্ভিস (প্যাস) সেবা দিয়ে থাকে। হুয়াওয়ে এ তিনটির সঙ্গে এভরিথিং অ্যাজ এ সার্ভিস (অ্যাস) যুক্ত করেছে। অ্যাস সেবার আওতায় হুয়াওয়ের রয়েছে সেন্টার ফর এক্সিলেন্স সার্ভিস। হুয়াওয়ের থেকে বাড়তি হিসেবে এক্সপার্টিস সেবা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুয়াওয়ে টেলিযোগাযোগে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি। চাইলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে থেকে কনসালট্যান্সি সেবাও নিতে পারে। কেউ চাইলে এক মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে হুয়াওয়ের পরীক্ষামূলক ক্লাউড সেবা ব্যবহার করতে পারেন। পরীক্ষামূলক পছন্দ হলে সেবাটি এরপর কিনে ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রাইভেট ক্লাউড
বিশেষ করে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনেক ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারা চাইলেই নিজেদের ডাটা বাইরে হোস্ট করতে পারবে না। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্যও রয়েছে হুয়াওয়ের বিশেষ সেবা। তাদের জন্য বিশেষায়িত ফিজিক্যাল সার্ভারে সব ধরনের ক্লাউড সেবা যুক্ত করে দেবে হুয়াওয়ে। কোনো প্রতিষ্ঠানের যত অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আছে, সব প্রতিষ্ঠানই প্রাইভেট ক্লাউডের মাধ্যমে ক্লাউডের সেবা পাবে। কেউ চাইলে ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও পাবলিক ক্লাউড সেবা নিতে পারবে। হুয়াওয়ের ফেসবুক পেজ কিংবা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে প্রাইভেট ক্লাউডের সেবা নিতে পারবেন। চাইলে কেউ কেউ নূ্যনতম এক টেরাবাইটও ক্লাউড সেবা নিতে পারেন। হুয়াওয়ের ক্লাউড বিভাগের কর্মকর্তা শাহজাহান আহমেদ সমকালকে বলেন, গ্রাহকদের দোরগোড়ায় গিয়ে আমরা সব ধরনের সেবা দিয়ে থাকি। হুয়াওয়ে ক্লাউডের প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য সার্বক্ষণিক সেবাদাতা রয়েছে, এ ছাড়া পার্টনার প্রতিষ্ঠান তো আছেই। আমাদের সঙ্গে যে কোনো সমস্যায় যে কোনো গ্রাহক যে কোনো সময় যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা তাৎক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করে থাকি। এ সুবিধা ক্লাউড সেবা দেয় এমন অন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিশ্চিত করা সত্যিই কঠিন।

হুয়াওয়ে ক্লাউডের গ্রাহক যারা
এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে হুয়াওয়ে ক্লাউড। রবি, ইফাদ অটোস লিমিটেড, রকমারি ডটকম, বিডিজবস ডটকম, আজকেরডিল ডটকম, সিম্ম্ফনি সফটটেক লিমিটেড, নিউজিল্যান্ড ডেইরি, ডেইলি স্টার, ডিবিসি নিউজ, একাত্তর টিভি, ডেলিভারি টাইগার, ইউনিটেক্স, পারফে, ফ্লোরা টেলিকম এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ক্লাউড সেবা গ্রহণ করছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় হুয়াওয়ে ক্লাউড সেবা প্রদান করে; যার মাধ্যমে দর্শনার্থী ও আগ্রহীরা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে গ্রন্থমেলা-সংক্রান্ত সব তথ্য ডিজিটালি জানতে পারেন।

স্থানীয় অনেক গ্রাহকের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও ডিজিটাল সলিউশন-সংক্রান্ত চাহিদা পূরণে হুয়াওয়ে ক্লাউড ব্যবহার করছে। বিসিসি ক্লাউড ৩০টির বেশি বিভাগ ও সংস্থা ৫০-এরও বেশি প্রকল্প পরিচালনা করছে। ন্যাশনাল ই-গভর্নমেন্ট ক্লাউড এবং এর সমন্বিত ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সহযোগে ন্যাশনাল ডিজিটাল ফাউন্ডেশন প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) হুয়াওয়ের ক্লাউড সেবা গ্রহণ করছে। বিসিসি ক্লাউডের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য সমন্বিত বাজেট ও অ্যাকাউন্ট সিস্টেম, ভ্যাকসিন সিস্টেম ও ই-গভর্নমেন্ট ইআরপি প্রকল্প সফলভাবে শেষ করেছে।

আসছে নতুন সেবা
ডিজিটালাইজেশনের গতির সঙ্গে নিজেদের তাল মেলাতে ও শিল্প খাতের সম্ভাবনাগুলো উন্মোচনে চলতি বছর হুয়াওয়ে ক্লাউড এ অঞ্চলে আরও নতুন ক্লাউড সলিউশন ও সেবা নিয়ে আসবে। এ সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অ্যাকসেলারেশন সার্ভিস (জিএ), রিয়েল টাইম অডিও ও ভিডিও সেবা (স্পার্কআরটিসি), সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রডাকশন লাইন (ডেভক্লাউড) ও ফাইন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটাবেজ গজডিবি (ওপেনগজের জন্য)।

যেভাবে পাওয়া যাবে হুয়াওয়ে ক্লাউড
বাংলাদেশে হুয়াওয়ে ক্লাউড সেবা সবার কাছে পৌঁছে দিতে বেশ কিছু পার্টনার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তার মধ্যে গোল্ডেন হারভেস্ট ও ওমেগা এক্সিম অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হুয়াওয়ে ক্লাউড সেবা পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও pacd.bangladesh@huawei.com ঠিকানায় যে কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ই-মেইল করে হুয়াওয়ে ক্লাউড সেবা ও তথ্য পাবেন।

বিষয় : হুয়াওয়ে ক্লাউড ক্লাউড সেবা

মন্তব্য করুন