- ফিচার
- পছন্দের পড়ার বিষয়
পছন্দের পড়ার বিষয়

যে বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ হচ্ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামানো জরুরি ছবি :সংগ্রহ
স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার স্বপ্টম্ন থাকে সব পড়ূয়ারই। বয়সটা কম আর ইচ্ছা অনেক। স্বপ্টম্নও আকাশ ছোঁয়ার। তবে এর মধ্যেও থাকে নানা সমস্যা। যেমন- কেউ পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না, তো কেউ নিজের ভালো লাগার বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। আবার কোথাও থাকে মা-বাবার স্বপ্টম্নভঙ্গের চাপ। তাই বলে কি থেমে যাবে স্বপ্টেম্নর উড়ান, মোটেই নয়। এখান থেকেই শুরুটা করতে হবে নতুন করে। আবার অনেকেই পেয়ে যাই পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ। তাহলে তো আর কথাই নেই।
পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে না পারার সমস্যাটা নতুন নয়। আবার ভালো লাগার বিষয় হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণাটাও ভয়াবহ। যে ছেলেটি সারাজীবন ডাক্তার অথবা প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্টেম্ন মশগুল, তাকে যদি সাধারণ কোনো কোর্সে ভর্তি হতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তার পড়াশোনার ইচ্ছাটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আসলে স্বপ্টেম্নর উড়ান থেকে এক ধাক্কায় বাস্তবের সম্মুখীন হতে হলে সমস্যাটা সন্তান এবং তার মা-বাবা দুই তরফেরই হয়। কিন্তু সমস্যাই শেষ কথা নয়; তা থেকে উত্তরণের পথ তো খুঁজতে হবে নিজেদেরই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সময় কোন বিষয়ে পড়ব- এ নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এই 'যুদ্ধের' অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অনেকের মধ্যেই জন্ম নেয় হতাশা। শিক্ষার্থীর পছন্দ আর অভিভাবকের পছন্দ প্রায়ই এক হয় না।
পছন্দের বিষয়ে সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রায়ই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে নিজেদের মেধার অপচয় করে। কিন্তু পছন্দের বিষয়ে পড়তে না পারাটাই কি জীবনের সমাপ্তি? মোটেই নয়; বরং একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে জীবনটাকে নতুন করে শুরু করা দরকার। পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে পারার সুযোগ না পেলে তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। এতে পড়তে না পারার যন্ত্রণা সামান্য হলেও কমবে; বরং যে বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ হচ্ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামানো জরুরি। ইন্টারনেটে সেই নতুন বিষয় নিয়ে ভালো করে খোঁজ করলে নানা সুযোগ সামনে আসবে। ফলে বিষয়টি সম্পর্কেও সম্যক ধারণা হবে। একই সঙ্গে তা নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ চোখের সামনে খুলে যাবে। এ ছাড়া স্নাতক স্তরে কোনো একটি বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ না পেলে পরেও যে সেটা নিয়ে চর্চা করা যাবে না, তা কিন্তু নয়। কলেজ-পরবর্তী পড়াশোনার জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, সেখানকার পড়াশোনার ধরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ধরা যাক, কোনো পড়ূয়া একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে অপছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পেল। এতে পড়াশোনার গুণেই সেই পড়ূয়ার অপছন্দের বিষয়টির ওপর ভালো লাগা তৈরি হতে পারে। আবার ঠিক উল্টো সমস্যাও হতে পারে। যেমন- অনেক পড়ূয়া পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পেল, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মনের মতো হলো না। সেটিও কিন্তু একটি বড় সমস্যা। আবার রেজাল্ট এবং ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়ার সমস্যাটা কিন্তু শুধু পড়ূয়াদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তা সমানভাবে চিন্তায় ফেলে মা-বাবাকেও। সন্তানের পড়াশোনা এবং তার ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্টেম্নর জাল বোনেন তাঁরাও। অর্থাৎ যে মা কিংবা বাবা নিজে ডাক্তার হতে পারেননি, তিনি অনেক সময়ই চান- তাঁর সন্তান ডাক্তার হয়ে দেখাক।
অথচ সেই সন্তান সাহিত্য অথবা বাণিজ্যের কোনো বিষয় নিয়ে পড়েও অনেক বেশি উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। সন্তানকে নিজের মতো এগিয়ে যেতে দিন। অর্থনীতি, ফিন্যান্স প্রভৃতি সব বিষয়ই একজন শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য সহায়ক হতে পারে। বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সন্তানের অপছন্দটা মা-বাবারও খেয়াল রাখা জরুরি। প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয় এবং তার সুযোগ নিয়ে ইন্টারনেটে চর্চা করুন। খবর নিন। এতে ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনার জায়গাও তৈরি হয়। সন্তান কোন ক্যারিয়ার বেছে নেবে, সেটা পুরোপুরি তার ওপর ছেড়ে না দিয়ে খোলাখুলি একসঙ্গে বসে আলোচনা করা যেতে পারে। কোনো পছন্দের বিষয় নিয়ে সে যদি পড়তে না পারে, তখন তাকে বোঝান এবং নতুন বিষয় নিয়ে পড়ার আইডিয়া দিন।
এতে সন্তানও কিন্তু ক্যারিয়ারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনার ভাবনা-চিন্তার ওপর নির্ভর করবে। সন্তানের মনোবল বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা থাকবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিষয় নির্ধারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের নিরন্তর ধেয়ে চলার ধারায় এ মূল্যের উত্থান ও পতন হয়ে থাকে। একসময় যে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে, সময়ের ব্যবধানে যুগের চাহিদায় সেটিই হয়তো বা নেমে যায় পছন্দ তালিকার একেবারে নিচে। বর্তমান সময়ে কোন বিষয়ের চাহিদা কেমন, ভালো চাকরি ও দেশসেবার বিস্তৃতি কত দূর, ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে ইত্যাদি বিষয়ে মোটামুটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন