- ফিচার
- নার্সারি গ্রাম গদাইপুর
নার্সারি গ্রাম গদাইপুর

গদাইপুর গ্রামের একটি নার্সারি- সমকাল
অপরূপ সবুজ, বাহারি রঙের ফুল। মন ভালো করে দেওয়া দৃশ্য। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই অসংখ্য ফলদ ও বনজ চারা। প্রধান সড়কের দুই পাশে যতদূর চোখ যায় সবুজের সমারোহ। বাদ নেই আঙিনা এমনকি আবাদি জমি। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর নতুন নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছেন সবুজ উদ্যোগে। এরই মধ্যে গদাইপুর নার্সারি গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামটি খুলনার পাইকগাছা উপজেলায়।
সরেজমিন শনিবার গ্রামের নার্সারিগুলোতে নারী-পুরুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে দেখা যায়। তাদের কেউ চারা তুলছেন, কেউ কলম তৈরিতে ব্যস্ত। কারও ব্যস্ততা চারা পরিচর্যায়, কেউ ক্রেতার পণ্য তুলে দিচ্ছেন ভ্যানে। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে ফুল, ফল ও বনজ চারা নিতে গ্রামে ভিড় করছেন লোকজন।
স্থানীয়রা জানান, ২০০২ সালে গদাইপুর গ্রামে স্বল্প পরিসরে নার্সারি শুরু হয়। ২০১০ সালে বাণিজ্যিকভাবে গ্রামজুড়ে চারা উৎপাদন হয়। নার্সারি ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় পাইকগাছা উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামে এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখনও সবচেয়ে বেশি নার্সারি গদাইপুর গ্রামেই। এসব নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির আম, কুল, সফেদা, আমড়া, শরিফা, লিচু, মাল্টা, কতবেল, আঙুর, আপেল, ড্রাগন, চুইঝাল, মেহগনি, শিরিষ, চাম্বল, রোড শিরিষ, গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, কাঠগোলাপ, মল্লিকার চারা উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে উন্নত জাতের কুল, নারিকেল, সফেদা, আমড়া, লিচু ও পেয়ারার চারা ভারতেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
নার্সারি মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা জানান, ১০ বছরের ব্যবধানে পাইকগাছায় নার্সারি দ্বিগুণ হয়েছে। ধান, পাটসহ নানা ফসলের জমিতেও নার্সারি করছেন স্থানীয়রা। অনেকে লিজ নিয়ে গড়ে তুলছেন নার্সারি।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলার প্রায় ৪৫ হেক্টর জমিতে নার্সারি রয়েছে। তালিকাভুক্ত নার্সারি ২৮৯টি। এর বাইরেও অনেক নার্সারি আছে। সবচেয়ে বেশি নার্সারি গদাইপুর ইউনিয়নে। এসব নার্সারিতে বছরে ৩০-৩৫ লাখ চারা উৎপাদন হয়। ৫ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চারার দাম। বছরে ১৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চারা উৎপাদন ও বিক্রি হয়। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ-পরামর্শের পাশাপাশি জৈর সারসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করে থাকি।
নার্সারি মালিক হাবিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান গাজী বলেন, কলম ছাড়াও বীজ থেকে উৎপাদিত দেশি-বিদেশি প্রায় ২০০ ধরনের ফুল-ফলের চারা পাওয়া যায়। কলমের চারার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। মে থেকে জুলাই পর্যন্ত কলমের উপযুক্ত সময়। নার্সারি থেকে খুচরা-পাইকারির পাশাপাশি অনলাইনেও চারা বিক্রি করেন। সব খরচ বাদে বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকা লাভ থাকে।
পাইকগাছা উপজেলা নার্সারি মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ জিয়াউর রহমান বলেন, উপজেলায় ছোটবড় পাঁচ শতাধিক নার্সারি রয়েছে। সমিতির সদস্য ৪৩৯ নার্সারি মালিক। একেকটি নার্সারি ৫ কাঠা থেকে শুরু করে ২০-৩০ বিঘা জমিতেও রয়েছে। প্রথমে গদাইপুরে ব্যাপকভাবে নার্সারি শুরু হয়। এখন পুরো উপজেলাতে ছড়িয়ে পড়েছে।
নার্সারি মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল সরদার বলেন, নার্সারির মাধ্যমে পাইকগাছায় মালিক, কৃষি শ্রমিক, ভ্যানচালকসহ ১৫-২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে এখন মালিকরা পুঁজি সংকটে ঠিকমতো চারা উৎপাদন করতে পারছেন না। সরকারি অনুদান কিংবা বিনা সুদে ঋণ পেলে সবুজ এই উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত হতো।
মন্তব্য করুন