যুক্তরাষ্ট্রের মার্স সোসাইটি আয়োজিত মঙ্গল গ্রহের মিশনভিত্তিক 'ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২২' শীর্ষক আন্তর্জাতিক রোবটিক প্রতিযোগিতায় এশিয়ায় সেরা হয়েছে বাংলাদেশের ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির 'ইউআইইউ মার্স রোভার।' মঙ্গল গ্রহ অভিযানে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী রোবটিক প্রকল্প নিয়ে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে মার্স সোসাইটি। গত ১ থেকে ৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ উটাহের মার্স ডেজার্ট রিসার্চ স্টেশনে চারটি ধাপে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয় অংশগ্রহণকারী দলগুলো। চার ধাপে প্রতিযোগিতা শেষে এশিয়ায় শীর্ষস্থান অর্জন করে ৯ সদস্যের ইউআইইউ মার্স রোভার।

ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২২
গত এপ্রিলে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতার প্রাথমিক রাউন্ডে বিশ্বের ১৫টি দেশের ৯৯টি দল অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়। এরপর বাছাই প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত রাউন্ডে ১০টি দেশের ৩৬টি দল অংশ নেয়। চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেওয়া দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, কলম্বিয়া, মিসর, মেক্সিকো ও তুরস্ক। এসব প্রতিযোগী অনস্পট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ইউনিভার্সিটি, দ্বিতীয় সেরা অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটি এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি এস অ্যান্ড টির দল। বাংলাদেশ এশিয়ার শীর্ষ হলেও ৩৬টি দলের মধ্যে ইউআইইউ মার্স রোভারের অবস্থান ১৩তম। বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিক রাউন্ডে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশসহ চারটি দল অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল। তবে চূড়ান্ত রাউন্ডে একমাত্র দল হিসেবে অংশ নেয় ইউআইইউ মার্স রোভার।

টিম ইউআইইউ মার্স রোভার
ইউআইইউ দলের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক আকিব জামান। প্রকল্প উপদেষ্টা অধ্যাপক হাসান সরওয়ার। বিজয়ী দলের দলনেতা ইউআইইউর সিএসই বিভাগের রকিব হাসান, যান্ত্রিক কৌশলে আবিদ হোসেন, তড়িৎ কৌশলে আহম্মেদ জুনায়েদ তানিম, সফটওয়্যারে আবদুল্লাহ আল-মাসুদ, যোগাযোগে টিএম আল-আনাম এবং বিজ্ঞান বিভাগ ও জীবন অনুসন্ধানী দলনেতা জিদান তালুকদার, সঙ্গে ছিলেন আফসানা আইরিন। ইউআইইউ মার্স রোভার সম্পর্কে দলের সমন্বয়ক আকিব জামান বলেন, 'সবার আগে ধন্যবাদ দিতে চাই ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোফিজুর রহমানকে। তাঁর জন্যই আমরা কাজটি করতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন তিনি। আসলে এই কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। আমি ৫০ জন নিয়ে দল গঠন করি। তারপর আস্তে আস্তে কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৪ জনে এসে ঠেকেছে। তবু আমরা কঠোর পরিশ্রম করে কাজ করেছি এবং সফলতাও পেয়েছি। তবে আগামীতে আরও ভালো করার প্রত্যাশা আমাদের।'

যে কাজ করবে রোভার
ইউআইইউ মার্স রোভার মঙ্গল গ্রহের জন্য বানানো হলেও পৃথিবীর কাজে ব্যবহার করা যাবে। যেমন মানুষ যেখানে পৌঁছাতে পারে না, সেখানে এই রোভার পাঠানো সম্ভব। হাসপাতালে রোগীর কাছে সময়মতো ওষুধ পাঠানো বা কোনো যন্ত্র মেরামতেও রোভারকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া রোভারের কিছু কাজ নিয়ন্ত্রিত, আবার কিছু কাজ রোভার নিজের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের মাধ্যমে সমাধান করতে পারে। যেমন- মাটি পরীক্ষা করে জীবনের অস্তিত্ব খোঁজা, বিভিন্ন সুইচ অন-অফ করা, স্টূ্ক্র টাইট দেওয়া, ড্রয়ার খোলা ও বন্ধ করা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয় চলাচল ইত্যাদি।

আগামীর স্বপ্ন
ইউআইইউ মার্স রোভার আগামীতে কেবল এশিয়ার প্রথম নয়, বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তবে এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে চান সদস্যরা। ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছেন তাঁরা। প্রভাষক আকিব জামান বলেন, 'আমরা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যেসব পরামর্শ পেয়েছি এবং যেসব জায়গায় আরও কাজ করা দরকার সেসব বিষয়ে গবেষণা শুরু করেছি। এই গবেষণা থেকে যে ফলাফল পাবো তার ওপর ভিত্তি করে আমরা রোভারকে আরও উন্নত করব। তারপর আন্তর্জাতিক অন্যান্য রোবটিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করব। আসলে এটি অনেক বড় একটি প্রক্রিয়া। এখানে চাইলেই হুট করে সফল হওয়া যায় না। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এগোতে হয়। আমাদের যাত্রা তো মাত্র শুরু। এবার ১৩তম হয়েছি, সামনে হয়তো আরও ভালো করব। তবে আমাদের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় বা মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের দলগুলোর মতো স্বীকৃত দলকে হারিয়ে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের নামকে সেরার তালিকায় নিয়ে আসা। এর জন্য আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।'

বিষয় : ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ মার্স রোভার

মন্তব্য করুন