আবদুল লতিফ খসরু। বয়স যাই হোক মনেপ্রাণে একেবারে টগবগে তরুণ। তাঁর কাজকর্মও বড্ড সাহসী। সমাজে আলো ছড়ানো লতিফ খসরু পাশে দাঁড়ান অসহায় মানুষের। আবদুল লতিফ খসরু পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে আমড়াজুড়ি চরে গড়ে তুলেছেন এক রূপকথার জগৎ। তাঁর হাত ধরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে আমড়াজুড়ি চরের অতি দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী সন্তানরা। এই বাক-প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আবদুল লতিফ খসরু গড়ে তুলেছেন স্কুল। এসব শিশুর বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ, জামা-কাপড়ের পাশাপাশি খাবার সরবরাহও করছেন। আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের দিচ্ছেন প্রাথমিক পাঠ। শুধু লেখাপড়া নয়, পাশাপাশি চলে সাংস্কৃতিক চর্চাও। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের প্রথাগত পদ্ধতি জানা না থাকলেও তাদের প্রতি ভালোবাসা আর সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে আবদুল লতিফ খসরু চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর এই পাঠশালা। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ জন বাক-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে তাঁর স্কুলে। এই স্কুল সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুল লতিফ খসরু বলেন, 'আমি তাদের নিজের সন্তানের মতোই মনে করি। তাদের ঘিরেই আমার যত স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি, আমার এই উদ্যোগ অন্যদেরও উৎসাহিত করবে। তারাও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কাজ করবে।'

কেবল স্কুলই নয়; কেউ টাকার অভাবে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছেন না, তার কাঁধে ভরসার হাত রাখেন লতিফ খসরু। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে ওষুধপথ্য কেনায়ও সহযোগিতা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল কিংবা ঢাকায়ও নিয়ে যান অভিভাবকহীন অসহায় রোগীদের। এ ছাড়া তাঁর দুর্বলতা বইয়ে। বই সংগ্রহ করে সে বই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বাসা-বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে দিয়ে আসেন। তবে বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি সবসময় মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ ও নৈতিকতা বিষয়ক গল্প-উপন্যাসকে প্রাধান্য দেন। মাঝে মধ্যে ফেরিওয়ালা সেজে নদী পাড়ের অসহায় শিশুদের জন্য ঝুড়িতে করে নিয়ে যান চুলের ফিতা, ক্লিপ, লিপস্টিক, চুড়ি, কাজলসহ কত কী। তাঁর কাছ থেকে কখনও নামমাত্র মূল্যে, আবার কখনও ফ্রিতে নিজেদের পছন্দমতো সাজগোজের এসব জিনিস নিয়ে যায় ছোটরা। এ ছাড়াও ছোটদের জন্য থাকে তাঁর নানা আয়োজন। কখনও পিঠা-পুলি, কখনও আবার মৌসুমি ফল নিয়ে তুলে দেন শিশুদের মুখে। মনের আনন্দে খেলেন ছোটদের সঙ্গে। তাঁর পাখিপ্রেমও স্থানীয়দের অবাক করে। পাখি সংরক্ষণের জন্য নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। গাছে গাছে বেঁধেছেন হাঁড়ি।