ব্রণজনিত সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের সাধারণ একটি প্রশ্ন- ব্রণ কেন হয়? নিয়মিত ত্বকের যত্ন না নিলে পড়তে হবে ব্রণ, কালো দাগসহ নানা বিড়ম্বনায়। তাই চলুন, জেনে নেওয়া যাক ব্রণ কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়।  লিখেছেন আসমাউল হুসনা

ব্রণ প্রায় প্রত্যেকের কাছেই সুপরিচিত একটি সমস্যা। ছেলে-মেয়ে উভয়ের ত্বকে দেখা যায় ছোট ছোট ফুসকুড়ি, যা ফুলে বড় হয়ে রূপ নেয় ব্রণের। একটা সময় ব্রণ চলে গেলেও থেকে যায় কালো দাগ ও ওপেন পোরাস।
ধরুন, আপনি কোনো অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হচ্ছেন। খুব সুন্দর পোশাকে সাজিয়েছেন নিজেকে; কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়াতেই চোখ পড়ল গালে ও কপালে ওঠা ব্রণে। এত সুন্দর করে নেওয়া প্রস্তুতি মলিন হয়ে যাওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। ব্রণজনিত সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের সাধারণ একটি প্রশ্ন- ব্রণ কেন হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে শোভন মেকওভারের রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ শোভন বলেন, 'ব্রণ হওয়ার একাধিক কারণ থাকলেও হরমোনাল সমস্যা, বয়ঃসন্ধিকাল, তৈলাক্ত ত্বক, অ্যালার্জিজনিত ও ধুলাবালির সমস্যাগুলোই মুখ্য। ব্রণ হওয়ার কারণ ও ত্বকের ধরন বিবেচনায় এর যত্ন ও প্রতিকার ব্যবস্থাও ভিন্ন। আমাদের মধ্যে অনেকেই ত্বকের ধরন না বুঝেই নানা রকম কসমেটিক পণ্য ব্যবহার করেন, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। ত্বক ভালো রাখতে সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও ঘরোয়া কিছু যত্ন খুবই উপকারী। এ ছাড়া ত্বকে কোনো রকম ইনফেকশন দেখা দিলে এক্সপার্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।'
নিয়মিত ত্বকের যত্ন না নিলে পড়তে হবে ব্রণ, কালো দাগসহ নানা বিড়ম্বনায়। তাই চলুন, জেনে নেওয়া যাক ব্রণ কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়-
নিমপাতা :নিমের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। রূপচর্চায়ও এর জুড়ি মেলা ভার। নিমপাতা ও তুলসী পাতার সঙ্গে ১ চা চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন পেস্ট। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর স্ট্ক্রাব করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ব্রণ ও দাগ কমাতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া ২ চা চামচ নিমপাতার সঙ্গে ২ চা চামচ পাকা পেঁপে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিস্তেজ ত্বককে সতেজ করে তুলবে।
ঘৃতকুমারী/অ্যালোভেরা : অ্যালোভেরায় রয়েছে ভিটামিন 'সি', 'ই' এবং 'এ', যা ত্বক উজ্জ্বল করে। অ্যালোভেরা পাতা থেকে খুব সহজেই জেল সংগ্রহ করা যায়। ব্রণ দূর করতে অ্যালোভেরা জেলের সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে ব্রণে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ১/৪ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ব্রণের জায়গায় লাগান। ৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। তবে অ্যালোভেরা জেল সংগ্রহের আগে অবশ্যই অ্যালোভেরা থেকে হলুদ রস বের করে নেবেন, নয়তো অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেবুর রস :লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'সি' ও সাইট্রিক অ্যাসিড, যা ব্রণ শুকাতে ও দাগ কমাতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে ২টি পাতি লেবুর রসের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে তুলার সাহায্যে ব্রণের ওপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণ শুকিয়ে যাবে। আবার লেবুর রসের সঙ্গে সমপরিমাণ দুধ মিশিয়ে লাগিয়ে নিতে পারেন ত্বকে। ১৫ মিনিট পর নরমাল পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি যেমন ব্রণ দূর করতে সাহায্য করবে, তেমনটি মুখের কালচে দাগ দূর করবে।
হলুদ :হলুদে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে। ১ টেবিল চামচ হলুদের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ বেসন ও গোলাপজল মিশিয়ে তৈরি করে নিন ফেসপ্যাক। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু'দিন প্যাকটি ব্যবহার করুন, এতে ধীরে ধীরে ব্রণ কমে যাবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ার সঙ্গে ২ টেবিল চামচ চালের আটা ও ৩ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
শসা :ত্বকের যত্নে শসার রস অত্যন্ত কার্যকর। শসাতে রয়েছে ভিটামিন 'এ', 'ডি' এবং 'ই'। শসার সঙ্গে টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিলে এটি টোনারের মতো কাজ করবে। ত্বক সতেজ রাখতে শসা থেঁতো করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে শসা টুকরো করে কেটে ব্রণের স্থানে ঘষে নিন।

ছবি ::শোভন মেকওভার

টিপস
আমাদের মধ্যে অনেকে ত্বকের ধরন না বুঝেই নানা রকম কসমেটিক পণ্য ব্যবহার করেন, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। ত্বক ভালো রাখতে সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও ঘরোয়া কিছু যত্ন খুবই উপকারী। এ ছাড়া ত্বকে কোনো রকম ইনফেকশন দেখা দিলে এক্সপার্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বের হওয়ার সময় সানস্ট্ক্রিম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন