ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে অনলাইনে কোরবানির পশুর কেনাবেচা। ঘরে বসে পশুর ছবি ও ভিডিও দেখে দরদাম করে কেনা যাচ্ছে কোরবানির পশু। সরকারি উদ্যোগে গত কয়েক বছরের মতো এবারও দেশজুড়ে কোরবানির পশু কেনাবেচার সুযোগ দিতে চালু হয়েছে ডিজিটাল হাট। পাশাপাশি দেশের শীর্ষ কয়েকটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মেও মিলছে কোরবানির গরু-ছাগল।

ডিজিটাল হাট
এক ক্লিকে হাট থেকে হাতে স্লোগানে তৃতীয়বারের মতো পশু কেনাবেচায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে গতকাল উদ্বোধন হয়েছে অনলাইনে পশু কেনাবেচায় ডিজিটাল হাট। তবে এবার বদলে গেছে অনলাইন ঠিকানা। ডট নেট থেকে ডট গভে ডিজিটাল হাট নামে স্থায়ী ঠিকানা পেল কোরবানির পশু কেনাবেচার এ সরকারি আয়োজন। এবার এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে কোরবানির ৯ শতাধিক আঞ্চলিক হাট। ঢাকা পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও যশোরে মিলবে স্লটারিং সেবা। এসক্রো সেবায় থাকছে নিরাপদে কেনাকাটার সুযোগও। আর সব সেবাই ওয়েবের পাশাপাশি মিলবে অ্যাপেও। এ হাট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যৌথভাবে পালন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন এটুআই, একশপ ও ই-ক্যাব।

ডিজিটাল হাট সম্পর্কে ই-ক্যাব সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন শোভন বলেন, এবার দেশজুড়ে প্রায় দুই হাজার অফলাইন হাট ডিজিটাল হাটের সঙ্গে যুক্ত হবে। ডিজিটাল হাটে কয়েক লাখ পশু বিক্রির জন্য প্রদর্শিত হবে। হাটের নিরাপত্তা সম্পর্কে ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ডিজিটাল হাট থেকে পশু কিনে ক্রেতাদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। ডিজিটাল হাটে যেসব খামারি কিংবা ব্যবসায়ী বিক্রির জন্য পশুর বিজ্ঞাপন দেবেন তাঁদের আগে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ব্যবসায়িক তথ্য ও ফোন নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক। জেলা ও উপজেলার বিক্রেতারা প্ল্যাটফর্মটিতে আসছেন স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে। আর অন্যান্য খামারিসহ ব্যবসায়ীদের কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করা হচ্ছে। ফলে এখানে চাইলেও কেউ প্রতারণা করতে পারবে না। আর এ কারণেই ডিজিটাল হাট ক্রেতাদের আস্থায় পরিণত হচ্ছে। আর কেনাবেচায় কোনো রকম ঝামেলা হলে সেটির সমাধানে কাজ করছে ই-ক্যাবসহ আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

প্ল্যাটফর্মটিতে জেলা ও বিভাগভিত্তিক পশু কেনার জন্য রয়েছে আলাদা অপশন। নতুন পশুর আপডেট জানতে রয়েছে লাইভ হাট অপশন। এ ছাড়া কলসেন্টার, লাইভ চ্যাট সুবিধা। পশু কেনাবেচায় এখানে কোনো হাসিল দিতে হবে না। প্ল্যাটফর্মটি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্যই একেবারে ফ্রি। কেউ যদি চামড়া দান করতে চান, তাও করা যাবে এখানে। এ ছাড়া কসাইয়ের জন্য আপনি বুকিং দিয়ে রাখতে পারবেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানে ক্রেতাদের মাংস পৌঁছে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। ডিজিটাল হাটের ঠিকানা :https://digitalhaat.gov.bd


ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে
দেশের শীর্ষ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ, বিক্রয় ডটকম, প্রিয়শপ বিক্রি করছে কোরবানির পশু। ই-কমার্স সংশ্নিষ্টরা বলছেন, মূলত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে মাসখানেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে কোরবানির পশু কেনাবেচা। এরই মধ্যে এসব প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত অনেক পশুই বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রয় ডটকমের প্রধান নির্বাহী ঈশিতা শারমিন সমকালকে বলেন, আগে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে পশুর ওজন, ডেলিভারি নিয়ে গ্রাহক এক ধরনের দ্বিধায় থাকত। তবে এখন সেটা নেই বললেই চলে। বিক্রয় ডটকমে কোরবানি উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজার পশুর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, যার বড় একটি অংশ ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। প্রিয়শপের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খান বলেন, কোরবানি উপলক্ষে তারাও বিশেষ ক্যাম্পেইন চালু করেছেন।

ষষ্ঠবারের মতো আয়োজিত এ ক্যাম্পেইনে গরু, খাসি, ভেড়া মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার পশু তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত হয়েছে। বেচাবিক্রি সন্তোষজনক জানিয়ে তিনি বললেন, আগামী কয়েক দিনে পশু কেনাবেচা কয়েকগুণ বাড়বে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজেও মিলছে কোরবানির পশু। দারাজ প্ল্যাটফর্মটিতে দেড় হাজারেরও বেশি পশু রয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে দারাজেরও রয়েছে ক্যাম্পেইন। এ ক্যাম্পেইন থেকে পশু কিনলে পাওয়া যাচ্ছে ছাড়। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষাকৃত কম দামের গরু ও খাসির চাহিদাই বেশি। ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা দামের অধিকাংশ গরুও বিজ্ঞাপনে এখন সোল্ড আউট (বিক্রি হয়ে গেছে) দেখাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও কোরবানির পশু বিক্রিতে দারুণ সাড়া ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউব। ফেসবুকে পেজ খুলে খামারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পশু বিক্রি করছেন। দেশজুড়ে বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় পশুর অনেক খামার। যাঁরা বছরের এই সময়ে ভালো দামে পশু বিক্রি করার অপেক্ষায় থাকেন, তাঁরা নিজেরাই পেজ খুলে পশু বিক্রি করছেন।

সামারাই ক্যাটল, সাদেক অ্যাগ্রো, মেঘডুবি অ্যাগ্রো ও শতাধিক প্রতিষ্ঠানসহ ফেসবুক থেকেও কেনা যাবে কোরবানির পশু। অনলাইনে মূলত জীবন্ত অবস্থায় ওজনের (লাইভ ওয়েট) ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে ফেসবুক থেকে পশু কেনাবেচায় সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা ফেসবুকে অনেক সময় ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা উভয় পক্ষ থেকেই প্রতারণার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যেহেতু ফেসবুকভিত্তিক বিক্রেতাদের নির্ভরযোগ্যতা সহজে যাচাই করা যায় না এজন্য প্রতারণা থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন ই-কমার্স সংশ্নিষ্টরা। সতর্কতার অংশ হিসেবে ক্রেতাদের পশু বুঝে না পেয়ে অগ্রিম অর্থ পরিশোধ না করা ভালো। বিক্রেতাদেরও জেনেবুঝে পশু ডেলিভারি দিতে হবে যেন প্রতারিত হতে না হয়।