সমকাল :চামড়া খাতের কমপ্লায়েন্স কতদূর?
শাহীন আহমেদ :সাভারের চামড়া শিল্পনগরী এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। এই শিল্পনগরীতে যে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) আছে, সেটাকে রেকটিফাই করতে হবে। এই নগরীতেও সিইটিপিতে এখনও অনেক কম্পোনেন্ট যুক্ত করতে হবে। কমপ্লায়েন্সের জন্য এই কাজটি দ্রুত করা দরকার। পাশাপাশি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ দরকার। কারখানাগুলোকেও কমপ্লায়েন্সের বিষয়ে জোর দিতে হবে। কমপ্লায়েন্সের সামাজিক যেসব অংশ আছে, সেগুলো ঠিকভাবে করতে হবে।

সমকাল :কমপ্লায়েন্সের সামাজিক অংশ বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের করণীয় কী?
শাহীন আহমেদ :সামাজিক অংশ হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। কাজের পরিবেশ নিরাপদ করা। পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে না তা নিশ্চিত করা। এজন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে হবে।

সমকাল :এলডব্লিউজি সনদ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের এখন করণীয় কী?
শাহীন আহমেদ :চামড়া খাতের মাধ্যমে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে না, তা নিশ্চিত করতে হবে। ট্যানারি বা কারখানাগুলো পরিবেশসম্মত উপায়ে পরিচালিত করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

সমকাল :পরিবেশ অধিদপ্তর কীভাবে এগিয়ে আসতে পারে?
শাহীন আহমেদ :পরিবেশ অধিদপ্তর এখন যেসব মানদণ্ড বিবেচনা করে একটি প্রতিষ্ঠানকে মানসম্মত বা পরিবেশসম্মত বলে সেখানে পরিবর্তন দরকার। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ধরনের মান বিবেচনা করা হয়, বাংলাদেশকেও তা করতে হবে। যেমন, টিডিএসের বেলায় বাংলাদেশ ২১০০ পয়েন্ট বিবেচনায় নেয়। অন্যান্য দেশে এই মান ৬০০০ পর্যন্ত আছে।

সমকাল :কমপ্লায়েন্সের প্রধান বাধা কী?
শাহীন আহমেদ :কমপ্লায়েন্সের প্রধান বাধা সাভারের চামড়া শিল্পনগরী সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়া। পাশাপাশি ট্যানারি মালিকদের বিনিয়োগ সক্ষমতার অভাবও রয়েছে। ট্যানারি মালিকরা জমি বুঝে পাচ্ছেন না। ফলে ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না। এতে কারখানার উন্নয়নসহ অন্যান্য কাজ সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সমকাল :সরকার কীভাবে এগিয়ে আসতে পারে?
শাহীন আহমেদ : চামড়া শিল্পনগরীকে পুরোপুরি প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেবে। আর ট্যানারি মালিকরা যাতে সহজে ঋণ পান, সে ব্যবস্থা করবে।

সমকাল :কমপ্লায়েন্স হলে বাংলাদেশের চামড়া কি আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিতে পারবে?
শাহীন আহমেদ :অবশ্যই পারবে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার বড় বড় ব্র্যান্ড চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য নিয়েছে। তার পরে এলডব্লিউজির কারণে এসব ক্রেতা পণ্য নিচ্ছে না। এখন এলডব্লিউজি সনদ পেলে আবারও ওই সব ক্রেতাকে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি নতুন ক্রেতারাও আসবেন। বাংলাদেশের সামনে চামড়া খাতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দেশে এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে। কারণ, প্রতি বছর চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ চামড়া খাতের কাঁচামাল ও জনবলে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফলে সম্ভাবনাও বেশি।

সমকাল :নতুন কোন কোন দেশে সম্ভাবনা আছে?
শাহীন আহমেদ :চামড়া খাতে কমপ্লায়েন্স হলে বিশ্বব্যাপীই বাজার তৈরি হবে। ইউরোপ ও আমেরিকার পাশাপাশি এশিয়ার অনেক দেশেই বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ভারত, জাপান ও চীনের মতো দেশগুলোতে সম্ভাবনা বেশি।

সমকাল :কমপ্লায়েন্স না থাকায় এখন কী ধরনের সমস্যায় পড়ছেন আপনারা?
শাহীন আহমেদ :প্রথমত আমরা চামড়ার দাম পাচ্ছি না। আর বাজারও ছোট। সব দেশ আমাদের পণ্য নিচ্ছে না। এমনকি দেশের অনেক কোম্পানি আমাদের চামড়া নিচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা ওয়েটব্লু চামড়া পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে আসছে ফিনিশড লেদার হিসেবে। দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে আমাদের। এটা হচ্ছে শুধু কমপ্লায়েন্সের অভাবে। আমরা কমপ্লায়েন্স হলে এমন হতো না।

সমকাল:কমপ্লায়েন্সের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হলে কত দিনের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব?
শাহীন আহমেদ :খুব বেশি সময়ের কাজ না। কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত জরুরি। আগে চামড়া শিল্পনগরীকে প্রস্তুত করতে হবে। এসব কাজের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর সময় লাগতে পারে। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের আগেই এসব করে ফেলতে হবে। নতুবা শত সম্ভাবনা থাকলেও চামড়া খাত মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ, তখন কমপ্লায়েন্স ছাড়া কোনোভাবেই প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে টিকে থাকা যাবে না।

সমকাল :এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে চামড়া খাতের চ্যালেঞ্জ কী?
শাহীন আহমেদ :ঘুরেফিরে এক কথাই বারবার চলে আসবে। সেটা হচ্ছে, কমপ্লায়েন্স। তবে এর বাইরে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, নতুন ধরনের প্রযুক্তি ও ডিজাইনে যাওয়া। সেজন্য প্রস্তুতি দরকার। দরকার দক্ষ জনবলও। এজন্য এ খাতে সরকারি উদ্যোগ দরকার।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ আবদুল্লাহ