সমকাল :পরিবেশসম্মত চামড়া শিল্পনগরী গড়ার উদ্যোগ ২০০৩ সালের। ২০১৭ সালে যখন হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তর করা হয়, তখনও চামড়া শিল্পনগরী প্রস্তুত ছিল না। এরপর পাঁচ বছর পার হয়েছে। এখন কি শিল্প পরিবেশসম্মত হয়েছে?
মোস্তাক আহমেদ :পুরোপুরি হয়েছে বলব না। তবে অনেক কাজ হয়েছে। পরিবেশগত ইস্যুর কথা বললে বলব হাজারীবাগের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায়। সেখানে কোনো ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টই ছিল না। সরাসরি ক্রোমিয়ামযুক্ত পানি ও কঠিন বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলা হতো, পরিবেশ-প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হতো। সাভারে তা হচ্ছে না।

সমকাল :কিন্তু অভিযোগ আছে, সিইটিপি পুরোপুরি কাজ করছে না, বুড়িগঙ্গার পর ধলেশ্বরীও দূষিত হচ্ছে ...
মোস্তাক আহমেদ :কথাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। পরিবেশসম্মতভাবে চামড়া শিল্পনগরী প্রস্তুত ও দেখভালের দায়িত্ব ছিল চীনা কোম্পানি জিয়াংসু লিংঝি এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন লিমিটেডের ওপর। তারা দৈনিক ২৫ হাজার ঘনমিটার ক্ষমতার কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধানাগার (সিইটিপি) করেছে। তবে ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট এবং সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি আছে। এ কারণে চীনা কোম্পানিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যর্থতার জন্য এরই মধ্যে ৩০ কোটি টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। আরও ৩০ কোটি টাকা জামানত রয়েছে। ওই টাকাও তাদের ফেরত দেব না। চীনা কোম্পানিকে সরিয়ে পরিবেশসম্মত শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য পূরণে সরকার ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানি লিমিটেড নামে কোম্পানি গঠন করেছে। এক বছর হলো- এ কোম্পানি চামড়া শিল্পনগরীর দায়িত্ব নিয়েছে।

সমকাল :এ কোম্পানি কী করছে?
মোস্তাক আহমেদ :সিইটিপিসহ সার্বিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগুলো দেখার দায়িত্ব এ কোম্পানির। আমরা দেখছি, যে সিইটিপিই এখন আছে, তা স্বাভাবিক সময়ের জন্য ক্রোমিয়ামসহ অন্যান্য কেমিক্যাল পরিশোধনের জন্য যথেষ্ট। সমস্যা হয় কোরবানির ঈদের পর। এ সময় একসঙ্গে অনেক বেশি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়ে ট্যানারিগুলো প্রায় ৩০-৪০ হাজার ঘনমিটার কেমিক্যালযুক্ত পানি ছাড়ছে। আবার কেমিক্যালবিহীন পানিও একই লাইনে দিয়ে দিচ্ছে। এতে সিইটিপির ওপর চাপ বাড়ছে। এ সমস্যা সমাধানে আপাতত ট্যানারিগুলোতে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছি। যেহেতু লবণ দেওয়া চামড়া তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়, তাই একবারে সব চামড়া প্রক্রিয়াজাত না করে ট্যানারিগুলো পর্যায়ক্রমে প্রক্রিয়াজাত করার অনুরোধ করছি। স্থায়ী সমাধানের জন্য আরও একটি সিইটিপি স্থাপনের সমীক্ষা চলছে। আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া যাবে। এ সমস্যা সমাধানে বড় ট্যানারিগুলো যাতে নিজস্ব সিইটিপি করে, সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।

সমকাল :সিইটিপি করেই কি সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে?
মোস্তাক আহমেদ :না, এর বাইরে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করারও বিষয় আছে। শিগগিরই একটা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করতে যাচ্ছি, যার ফলে বর্জ্য পানি পরিশোধন করে তা ফের ব্যবহার করা যায়। এখন সিইটিপি থেকে পানি পরিশোধন করে ধলেশ্বরীতে ফেলা হচ্ছে, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হলে কোনো পানি নদীতে ফেলা হবে না। তাছাড়া কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকেও নজর দিয়েছি। এখন কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সে অর্থে হচ্ছে না। শুধু ডাম্পিং ইয়ার্ডে ফেলা হচ্ছে। এটা সমাধান নয়। বাংলাদেশেই কিছু কোম্পানি আছে, যারা ক্রোমিয়ামযুক্ত এবং ক্রোমিয়ামবিহীন উভয় প্রকার সলিড ওয়েস্ট প্রক্রিয়াজাত করে 'বাই প্রডাক্ট' তৈরি করতে পারে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এজন্য টেন্ডার করা হবে। এটা করা গেলে সলিড ওয়েস্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে, কোনো সলিড ওয়েস্টই এখানে থাকবে না।

সমকাল : ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, শিল্পনগরীতে সিইটিপি ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক না হওয়ায় তাঁদের এলডব্লিউজির সনদ পেতে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার কী মত?
মোস্তাক আহমেদ :কিছু সমস্যা তো আছে, যা আগেই বলেছি। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, এলডব্লিউজির সনদ পেতে যে ১ হাজার ৭১০ পয়েন্ট রয়েছে, তার ১ হাজার ৫১০ পয়েন্টই ট্যানারিগুলোকে অর্জন করতে হয়। সাভার চামড়া শিল্পনগরীর ব্যবস্থাপনায় থাকা কোম্পানির দায় বাকি ২০০ পয়েন্টের। আমাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। এখন ট্যানারিগুলো তাদের শ্রমিক ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাত প্রক্রিয়া, অভ্যন্তরীণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ উন্নত করে প্রয়োজনীয় পয়েন্ট তাদেরই অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার বা এ শিল্পনগরী ব্যবস্থাপনার জন্য গড়া কোম্পানির কিছু করার নেই।

সমকাল :আগামী এক বছরের মধ্যে শিল্পনগরী পুরোপুরি পরিবেশসম্মত হবে বলে কি আশা করা যায়?
মোস্তাক আহমেদ :অসম্ভব কিছু নয়। মাত্র সাত মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। এখানে যত নন-কমপ্লায়েন্স ইস্যু দেখেছি, এর একটিও সমাধান করা যাবে না- এমনটি নয়। কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে হাইকোর্টের নির্দেশনাও আছে। নির্দেশনাগুলো যাতে ট্যানারিগুলো পুরোপুরি মেনে চলে, তার জন্য যতটা কঠোর হওয়া দরকার, ততটাই কঠোর হবো।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহীম