
বর্ষার সঙ্গে কদমের সম্পর্ক নিবিড়। বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কদম। এই ফুল যেন বর্ষার দূত। বর্ষার বাতাসে ভেসে আসা কদমের গন্ধ মনকে আকুল করে তোলে। বর্ণে, গন্ধে এ গাছটি বাঙালির খুব প্রিয়। কদমের অন্যান্য নাম- নীপ, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবলণ্ডভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, ললনাপ্রিয়, সুরভি, সিন্ধুপুষ্প ইত্যাদি। আমাদের ঐতিহ্য ও সাহিত্যে কদম গাছ ও ফুল ২ হাজার বছরের পুরোনো।
কদম সমান্তরাল শাখাযুক্ত বড় আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Neolamarckia cadamba, , এটি Rubiaceae পরিবারের সদস্য। কাণ্ড সোজা, শাখা-প্রশাখা ছড়ানো। গাছ ১৮ মিটার উঁচু হয়। নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম ছায়াঘন। শীতে কদমের পাতা ঝরে এবং বসন্তে কচি পাতা গজায়। সাধারণত পরিণত পাতার চেয়ে কচি পাতা অনেকটা বড়। কদমের কচি পাতার রং হালকা সবুজ। বাকল ধূসর। পাতা সরল, হূৎপিণ্ড আকৃতির, লম্বাটে, বড় আকারের, ডিম্বাকার, চকচকে এবং উজ্জ্বল সবুজ। পাতা ১৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। জুন থেকে আগস্ট মাসে ফুল ফোটে। ফুল ক্ষুদ্রাকার, সবুজাভ হলুদ, সুগন্ধি।
কদম ফুল বলতে যাকে বুঝি, সেটি আসলে অনেক ফুলের মঞ্জরি। বলের মতো গোল, মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু ফুল থাকে। এ ধরনের পুষ্পমঞ্জরির নাম হেড। প্রতিটি ফুল খুবই ছোট, বৃতি সাদা, দল হলুদ, পরাগচক্র সাদা এবং বহির্মুখীন, গর্ভদণ্ড দীর্ঘ।
এ গাছের আদি নিবাস বাংলাদেশ, ভারত ও চীন। কদম হলুদ, সোনালি বা লাল রংয়ের হয়। লাল কদম দুর্লভ।
কদমের পাতা ও ছাল ব্যথানাশক। কদমের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবেও উপকারী।
কদম পাতার রস কৃমি দূর করে, তবে বেশি খেলে বমি হতে পারে। মুখের ঘায়ে কদমের পাতার রস উপকারী। ফল মাংসল, টক। এ ফল কাঠবিড়ালী ও বাদুড়ের প্রিয় খাদ্য। এদের মাধ্যমে বীজ ছড়ায়। কদম ফুল সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে কুলি করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
ছবি :লেখক
বিষয় : কদম ফুল বর্ষার দূত
মন্তব্য করুন