
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর ) সম্প্রতি তার ওয়েবসাইটে ২০২২-২৩ করবর্ষের ওপর আয়কর নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার আয়কর রিটার্ন পূরণ এবং কর পরিপালনের জন্য অর্থবছরের শুরুর দিকে এনবিআর এ নির্দেশিকা প্রকাশ করে। এতে ২০২১-২২ আয় বছরের ওপর একজন করদাতা কীভাবে রিটার্ন দেবেন, তার ওপর আরোপযোগ্য কর কীভাবে নির্ধারণ করবেন, কোন ক্ষেত্রে কর রেয়াত আছে- ইত্যাদি বিষয়ে উদাহরণসহ বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশিকা অনুসরণ করলে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে যে কোনো বিষয়ের সমাধান পাওয়া যাবে। আয়কর রিটার্ন কারা দেবেন, না দিলে কী হয়, কোথায় দিতে হয়, রিটার্ন ফরম কীভাবে পূরণ করতে হয়, বিভিন্ন পেশায় আয় নিরূপণ কীভাবে করতে হয়, সম্পদ, দায় ও ব্যয়ের তথ্য দিতে হয় এ রকম প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
পুরুষ করদাতা : একজন পুরুষ করদাতার গত বছরে মোট আয় যদি ৫০ লাখ টাকা হয় তাহলে তাঁকে রেয়াত ছাড়া তাঁর করদায় কত হবে তার তথ্য রয়েছে এ নির্দেশিকায়। অন্য অঙ্কের আয়ের করদাতা এ থেকে তাঁর ওপর আরোপযোগ্য করের পরিমাণ বের করতে পারবেন। উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তির সব আয়ের ওপর কর দিতে হয় না। আয়ের কোন কোন খাত করযোগ্য তা নির্দেশিকায় রয়েছে। এখন দেখা যাক, ৫০ লাখ টাকা আয়ের ওপর স্বাভাবিকভাবে করের অঙ্ক কত দাঁড়ায়। একজন পুরুষ করদাতার প্রথম ৩ লাখ টাকা আয় করমুক্ত। পরবর্তী ১ লাখ টাকা আয়ের ওপর করহার ৫ শতাংশ হারে করের পরিমাণ ৫ হাজার টাকা। এর পরবর্তী ৩ লাখ টাকা আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলে পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকা। পরবর্তী ৪ লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করের পরিমাণ ৬০ হাজার টাকা। পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ হারে করের পরিমাণ ১ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৩৪ লাখ টাকার ওপর ২৫ শতাংশ হারে করের পরিমাণ ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফলে ৫০ লাখ টাকা আয়ের ওপর মোট করের পরিমাণ ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
অন্যান্য করদাতা :করদাতা নারী হলে প্রথম সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর কর হার শূন্য। এর ওপর আয় থাকলে পুরুষ করদাতার মতো একই হারে কর আরোপযোগ্য হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা। প্রতিবন্ধী সন্তান ও পোষ্য রয়েছে এমন পিতামাতা ও আইনানুগ অভিভাবকের ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়ই করদাতা হলে যে কোনো একজন এ সুবিধা পাবেন।
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত :নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে, চাঁদা দিলে এবং দান করলে করদাতা কর রেয়াত পাবেন। এমন ক্ষেত্রে মোট আয়ের ওপর আরোপযোগ্য আয়করের অঙ্ক থেকে রেয়াতের অঙ্ক বাদ দিয়ে মোট আয়করের অঙ্ক নির্ধারিত হবে। জীবন বীমার প্রিমিয়াম, সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ড ফান্ডে চাঁদা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, জাতির পিতার স্মৃতি রক্ষায় নিয়োজিত জাতীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান, জাকাত তহবিলে অনুদানসহ মোট ২২টি ক্ষেত্রে কর রেয়াত সুবিধা রয়েছে। অনুমোদনযোগ্য অঙ্কের ১৫ শতাংশ হারে আয়কর রেয়াত পাবেন করদাতারা। কোনো ক্ষেত্রে অনুমোদনযোগ্য অঙ্ক কত তার বিস্তারিত বর্ণনা আয়কর নির্দেশিকায় রয়েছে।
নূন্যতম কর :রেয়াত পাওয়ার পর দেখা যায়, কোনো কোনো করদাতার করের পরিমাণ খুবই কম হয়। এ কারণে নূ্যনতম করের বিধান রয়েছে। মোট আরোপযোগ্য পরিমাণ যত কমই হোক, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কোনো করদাতাকে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। অন্যান্য সিটি করপোরেশনের করদাতাদের ক্ষেত্রে নূ্যনতম করের পরিমাণ ৪ হাজার টাকা। সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্যান্য এলাকায় নূ্যনতম করের পরিমাণ ৩ হাজার টাকা।
মন্তব্য করুন