সমকাল :ওয়ালটন কবে থেকে বাণিজ্যিকভাবে বৈদ্যুতিক পাখা উৎপাদন শুরু করে? শুরুর দিকে বিনিয়োগের পরিমাণ কেমন ছিল?
সোহেল রানা :আমরা বৈদ্যুতিক পাখা বা ফ্যান উৎপাদন শুরু করি ২০১৫ সালে। শুরুতে আমাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬০ কোটি টাকা। কোটি কোটি মানুষের চাহিদা অনুভব করা থেকেই ওয়ালটন ফ্যানের যাত্রা শুরু। সিলিং ফ্যান দিয়ে উৎপাদন শুরু হলেও বর্তমানে টেবিল ফ্যান, চার্জার ফ্যান ইত্যাদি উৎপাদন হচ্ছে। শুরুর পথচলাটা মসৃণ না হলেও ফ্যানের জগতে ওয়ালটন শক্ত অবস্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এ খাতে।

সমকাল :দেশে কতটি কোম্পানি বৈদ্যুতিক পাখা উৎপাদন করছে?
সোহেল রানা :বর্তমানে শীর্ষ পর্যায়ে পাঁচ থেকে ছয়টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ওয়ালটন, বিআরবি, যমুনা, সুপারস্টার অন্যতম। নন-ব্র্যান্ডের ফ্যানের প্রায় ৩০টি মতো কোম্পানি রয়েছে।

সমকাল :দেশে উৎপাদন বাড়াতে সরকার থেকে কী ধরনের সহায়তা দরকার?
সোহেল রানা :সরকারের পরিপূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতাই পারে এই খাতের দেশীয় উৎপাদন বাড়তে। এ জন্য কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক্ক মওকুফ করতে হবে। এ ছাড়া দেশে নামে-বেনামে অনেক ভুঁইফোঁড় কোম্পানি রয়েছে, যারা অনুমোদন ও লাইসেন্সবিহীন এবং কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়াই মানহীন ফ্যান উৎপাদন করছে। তাদের সঠিক নিয়ম মেনে পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

সমকাল :সিলিং ফ্যানের বেশিরভাগ দেশে উৎপাদন হলেও বিদেশ থেকে টেবিল ফ্যান আমদানি করা হয়। এর কারণ কী?
সোহেল রানা : টেবিল ফ্যানের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। পরে সেগুলো দেশে সংযোজন করা হয়। এসব কাঁচামালের শুল্ক্ক মওকুফ করে উৎপাদন খাতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) সুবিধা দিলে এই খাত আরও এগিয়ে যাবে। দেশে টেবিল ফ্যান উৎপাদন বাড়ানোও সম্ভব হবে।

সমকাল : ক্রেতাদের জন্য আপনারা আর কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?
সোহেল রানা : প্রতি বছরেই ফ্যানের চাহিদা বাড়ছে। এর মধ্যে সিলিং এবং রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা বেশ ভালো। এসব ফ্যানের বাজারে ওয়ালটন, বিআরবি এবং আরএফএল শীর্ষে অবস্থান করছে। ওয়ালটনের উন্নতমানের ফ্যান ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে আমাদের বাজারজাতকরণ ও আর্থিক বিভাগ গবেষণা করছে। দেশের সামগ্রিক কথা বিবেচনায় রেখে ইতোমধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টিম বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী বিএলডিসি সিলিং ফ্যান নিয়ে এসেছে। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় প্রায় ৬৫ শতাংশ।

সমকাল : বর্তমানে ওয়ালটনের কত ধরনের ফ্যান রয়েছে? সেগুলোর দাম কেমন?
সোহেল রানা :বর্তমানে ওয়ালটনের প্রায় ১০ ধরনের ফ্যান রয়েছে। যেমন- সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, চার্জার ফ্যান, টর্নেডো ফ্যান, নেট ফ্যান, বিএলডিসি সিলিং ফ্যান, এগজস্ট ফ্যান, ওয়াল ফ্যান, স্ট্যান্ড ফ্যান, সোলার ফ্যান অন্যতম। ওয়ালটন পণ্যের দাম ক্রেতার ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। মান ও আকারভেদে বিভিন্ন দামের ফ্যান রয়েছে ওয়ালটনের।

সমকাল : রপ্তানিতে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সোহেল রানা :বর্তমানে বিশ্বের ৯টি দেশে ফ্যান রপ্তানি করছে ওয়ালটন। স্থানীয় বাজারে শক্ত অবস্থা নিশ্চিত করার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা নেপাল, ভুটান, ভারত, উগান্ডা, পূর্ব তিমুর, মালি, ইয়েমেন, শ্রীলঙ্কায় ফ্যান রপ্তানি করছি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার পিস ফ্যান রপ্তানি হয়েছে। ভবিষ্যতে এর পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছি। সর্বাধুনিক আরঅ্যান্ডডি, টেস্টিং ফ্যাসিলিটি, অভিজ্ঞ কিউসি এবং প্রোডাকশন টিমের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক মানের ফ্যান উৎপাদন করছি। ওয়ালটন আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের তালিকায় থাকার লক্ষ্যে কাজ করছে। ওয়ালটনের টিমে দেশসেরা প্রকৌশলী ও উদ্যমী কর্মী রয়েছেন। বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন এবং ডকুমেন্টেশনের প্রায় শেষ ধাপে রয়েছি আমরা। এর মাধ্যমে ফ্যান রপ্তানিতে ইউরোপ, ওশেনিয়া, আমেরিকা এবং আফ্রিকাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি সাউথ-ইস্ট এশিয়াতেও আমাদের পণ্য রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, এসব অঞ্চলে ওয়ালটনের ফ্যান রপ্তানি হবে।

সমকাল : রপ্তানি বাড়াতে সরকারের কোন সহযোগিতা দরকার?
সোহেল রানা :প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য রপ্তানি করতে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। তাই রপ্তানিতে প্রণোদনাসহ সরকারের সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন।

সমকাল :সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়ালটনের ফ্যান কেমন বিক্রি হয়েছে?
সোহেল রানা :ওয়ালটন সর্বশেষ তিন বছরে সিলিং, টেবিল, এগজস্টসহ প্রায় ৫০ লাখ পিস ফ্যান বিক্রি করেছে। প্রতি বছর ৩০ শতাংশ হারে ওয়ালটনের ফ্যানের বিক্রি বাড়ছে। এ বছর সিলিং, টেবিল, চার্জার ফ্যান বিক্রিতে ওয়ালটন শীর্ষে অবস্থান করছে। বাজারের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ করছি আমরা। আগামী অর্থবছরে বিক্রির প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করছি।