সমকাল :বিআরবি কেবল কবে থেকে বাণিজ্যিকভাবে বৈদ্যুতিক পাখা উৎপাদন শুরু করে?
পারভেজ রহমান :বিআরবি একটি আন্তর্জাতিক মানের বৈদ্যুতিক ফ্যান বা পাখা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ২০০৫ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বৈদ্যুতিক পাখা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করি আমরা। চাহিদার ভিত্তিতে আমাদের উৎপাদনের ব্যাপকতা দিন দিন বাড়ছে।

সমকাল :এ খাতে আপনাদের বিনিয়োগের পরিমাণ কেমন?
পারভেজ রহমান :শুরুর দিকে বিনিয়োগ কম ছিল। গত কয়েক দশকে দেশে ফ্যানের চাহিদা অনেক বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে এ খাতে আমাদের বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়েছে। বর্তমানে এ খাতে বিআরবির বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে এর পরিমাণ হয়তো আরও বাড়বে।

সমকাল :দেশে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন বাড়িঘর। সেসঙ্গে বিদ্যুতের আওতায় এসেছে বেশিরভাগ মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে বছরে কী হারে বাড়ছে বৈদ্যুতিক ফ্যানের চাহিদা? বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে শীর্ষে অবস্থান করছে কারা?
পারভেজ রহমান :দেশে প্রতি বছর ফ্যানের চাহিদা বাড়ছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে। চাহিদা বাড়ার কারণ- নতুন নতুন উঁচু ভবন, বাড়িঘর, কলকারখানা নির্মাণ, জনসংখ্যা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দীর্ঘদিন ব্যবহূত পুরোনো ফ্যান নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো- বিদ্যুতের প্রসার বাড়ছে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ফ্যানের ব্যবহার বাড়ছে। দেশে ফ্যান উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে বর্তমানে প্রতিযোগিতার বাজারে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বিআরবি।

সমকাল :দেশে তো অনেক ফ্যান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে বিআরবির অবস্থান কেমন?
পারভেজ রহমান :দেশে আনুমানিক ৮০ থেকে ১০০টি কোম্পানি বৈদ্যুতিক পাখা উৎপাদন করে। দেশের বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন (ব্র্যান্ডেড) বৈদ্যুতিক পাখা আনুমানিক ৬০ লাখ পিস, যার মধ্যে বড় অংশই রয়েছে বিআরবির দখলে। এর পরিমাণ হবে প্রায় ৩০ শতাংশ।

সমকাল :আমদানি কমিয়ে দেশে উৎপাদন আরও বাড়াতে ও ক্রেতাদের জন্য তা সহজলভ্য করতে সরকারের পক্ষ থেকে কী সহায়তা প্রয়োজন?
পারভেজ রহমান :আমদানি কমিয়ে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি নজর দিতে হবে। ক্রেতাদের জন্য ফ্যান আরও সহজলভ্য করতে কাঁচামালের আমদানি শুল্ক্ক কমানো জরুরি। পাশাপাশি আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য বিদেশি প্রস্তুত ফ্যানের ওপর শুল্ক্ককর বাড়াতে হবে।

সমকাল :কোন ধরনের ফ্যান বেশি উৎপাদন হয় দেশে? টেবিল ফ্যান উৎপাদন কম কেন?
পারভেজ রহমান :বর্তমানে বিদেশ থেকে নিম্নমানের প্রচুর পরিমাণে কম দামি ফ্যান আমদানি হয়, যা বাজারে ফ্যানের গুণগত মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। দেশীয় বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে গুণগত মানের ফ্যান উৎপাদন অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। দেশে উৎপাদিত ফ্যানের জন্য আমদানি করা কাঁচামালের ওপর যে অতিরিক্ত পরিমাণে শুল্ক্ক রয়েছে তা কমাতে হবে এবং সেই সঙ্গে আমদানি করা নিম্নমানের ফ্যানের ওপর শুল্ক্ক বাড়াতে হবে। কারণ বিভিন্ন কোম্পানি বিদেশ থেকে নিম্নমানের কম দামি টেবিল ফ্যান আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে আমদানি করে থাকে। যেগুলোর গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি কিছুই নেই। এতে দেশীয় স্বনামধন্য উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য গুণগত মানে অনেক ভালো হলেও বেশি শুল্ক্ক-কর দিয়ে ওইসব বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

সমকাল :উৎপাদন ও বাজার নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?
পারভেজ রহমান :চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিআরবি উৎপাদন বাড়াচ্ছে। ফ্যানের বাজার নিয়ে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। কাঁচামাল আমদানিতে সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা দিলে উৎপাদন ব্যয় কমবে। দেশে ফ্যানের মূল্য গ্রাহকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। কম দামে মানসম্মত ফ্যান কিনতে পারবেন ক্রেতারা।

সমকাল :ফ্যান উৎপাদনে কী কী কাঁচামাল আমদানি হয়?
পারভেজ রহমান :ফ্যান উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা হয় সিলিকন সিট, এডিসি টুয়েলভ, বেয়ারিং, ক্যাপাসিটর, রাউন্ড স্টিল বার, পটেনসমিটার, কপার, ভার্নিশ, অ্যালুমিনিয়াম ইনগড। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করা হয়।

সমকাল :বিআরবির কী ধরনের ফ্যান উৎপাদন করে? সেগুলোর দাম কেমন?
পারভেজ রহমান :বর্তমানে এক ধরনের সিলিং ফ্যান উৎপাদন হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে প্যাডেস্টাল ও এগজস্ট ফ্যান উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। বাজারে ৪৮ ইঞ্চি বিআরবি ফ্যান দুই হাজার ৮৩৫ এবং ৫৬ ইঞ্চির ফ্যান দুই হাজার ৯৯৫ টাকায় পাওয়া যায়।

সমকাল :ফ্যান রপ্তানি নিয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?
পারভেজ রহমান :বাংলাদেশ থেকে কোনো দেশে ফ্যান রপ্তানি হয় কিনা জানি না। তবে বিআরবি করেনি এখনও। যেহেতু ফ্যান উৎপাদনের কাঁচামাল এ দেশে পাওয়া যায় না, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে উৎপাদিত ফ্যান রপ্তানি করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। সে কারণে সরকার যদি ফ্যান রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদান করে তাহলে বিআরবি কেবলের বিপুল পরিমাণে ফ্যান রপ্তানি করার সুযোগ আছে। রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।