- ফিচার
- দেশব্যাপী ফলদ বৃক্ষরোপণ
দেশব্যাপী ফলদ বৃক্ষরোপণ

হবিগঞ্জের পইল গ্রামে ফল গাছ রোপণ করছেন ফলদ বাংলাদেশের কর্মীরা
'ফলদ বাংলাদেশ' সারাদেশে ৫ কোটি ফল গাছ রোপণ করতে চায়। কারণ, বাংলার নিসর্গ আজ মেহগনি, ইউক্যালিপ্টাস, একাশিয়ার দখলে। দেশের সড়ক-মহাসড়ক, গ্রাম-গঞ্জ, লোকালয়-বনাঞ্চল যেখানেই চোখ রাখুন, অধিকাংশই এখন এই বিদেশি গাছ। আরও আছে রেইনট্রি ও শিশু গাছ; তবে মেহগনি, একাশিয়া, ইউক্যালিপ্টাসের তুলনায় সেগুলোর সংখ্যা অল্প।
'গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান'- বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত এই স্লোগানটি যে একদিন বেহাত হয়ে যেতে পারে কিংবা অপাত্রে প্রয়োগে পরিবেশেরই ক্ষতির কারণ হতে পারে, তা হয়তো আমরা কেউ ভাবিনি। কারণ স্লোগানে গাছ লাগানোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কী গাছ লাগাবেন তা বলা হয়নি। উপরন্তু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে বছরের পর বছর যেসব গাছ সরবরাহ করা হয়েছে তার বেশিরভাগই এই বিদেশি প্রজাতির কাঠসর্বস্ব আগ্রাসী বৃক্ষ। তাতে ফল হয়েছে শিব গড়তে বাঁদর গড়ার মতো। পরিবেশ বাঁচাতে বৃক্ষরোপণ আর সামাজিক বনায়ন স্থানীয় পরিবেশেরই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দরিদ্র, অতিরিক্ত জনসংখ্যাবহুল দেশে যেখানে কম জমিতে প্রয়োজন অধিক ফলন, সেখানে ফলহীন বৃক্ষে ভরে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চল। তার ওপর বহিরাগত আগ্রাসী প্রজাতির গাছের কারণে নীরবে ধ্বংস হয়ে যায় অনেক স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদ। এসব গাছে নেই মানুষ ও স্থানীয় পশুপাখি-পতঙ্গের খাদ্য-আশ্রয়। আমাদের পশুরা এসব গাছের পাতাও খায় না, নেই পাখিদের সুবিধাজনক আশ্রয়। অথচ ১০ বা ২০ বছর পর কেটে টাকা পাওয়া যাবে- শুধু এই বিবেচনায় দেশের মানুষ, পশুপাখি ও জীববৈচিত্র্যকে বঞ্চিত করে, এসব গাছে ছেয়ে ফেলা হয়েছে সারাদেশ। যে কোনো বাড়িতে এখন যত ফল গাছ দেখা যায়, এসব বিদেশি গাছ দেখা যায় তার চেয়ে পাঁচ বা দশ গুণ বেশি। সামাজিক বনায়নের সূত্র ধরে বৃক্ষরোপণই এখন পরিণত হয়েছে সামাজিক ব্যাধিতে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় 'ফলদ বাংলাদেশ' সংগঠনটি; যা এখন রূপান্তরিত হয়েছে ফলদ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। এটি একটি ফলের গাছ রোপণ এবং বৃক্ষ ও বাস্তুসংস্থান বিষয়ক সংবেদনশীল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বাংলাদেশের পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের জন্য ক্ষতিকর আগ্রাসী ও কাঠনির্ভর প্রজাতির বৃক্ষের বদলে পুষ্টি-অর্থ-পরিবেশ-সৌহার্দ্য ও স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতির পক্ষে উপযোগী ফলের গাছ রোপণ এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির কাজে নিবেদিত এ সংগঠনের সেচ্ছাসেবীরা। এ পর্যন্ত দেশের মোট ৫৬টি জেলায় বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেছে ফলদ বাংলাদেশ। শিগগিরই সংগঠনটি পৌঁছে যাবে ৬৪ জেলায়।
এবারের বর্ষায় ফলদ বাংলাদেশ নতুন ৯টি জেলায় পদার্পণ করার মাধ্যমে সেখানকার এক বা একাধিক গ্রামে বাড়ি বাড়ি ফলের চারা নিয়ে হাজির হয়েছিল। বাড়িগুলোতে আম, জাম, লিচু, বেল, জলপাই, আমলকী, নারিকেল ইত্যাদি ফলের চারা রোপণের মাধ্যমে মানুষের কাছে একাশিয়া, ইউক্যালিপ্টাস, মেহগনির ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরছেন সংগঠনটির সদস্যরা। তারা বলছেন, 'গাছ কেবল টাকা বা অক্সিজেনই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের পারস্পরিক সৌহার্দ্যও। আর যে কোনো ফল গাছ যে কোনো বিচারে মেহগনি, একাশিয়া, ইউক্যালিপ্টাসের চেয়ে দশ বা বিশ গুণ অধিক লাভ দিতে সক্ষম। ফলদ বৃক্ষের মাধ্যমেই কেবল একই গাছে পুষ্টি, অর্থ ও জীববৈচিত্র্যের সমন্বিত উন্নয়ন সম্ভব; যা বৃহত্তর হিসেবে জাতীয় স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য অধিক লাভজনক। তাই অনেক হয়েছে বিদেশি আগ্রাসী বৃক্ষরোপণ, এবার ফল গাছ লাগান।' া
মন্তব্য করুন