- ফিচার
- আমাদের পৃথিবী
আমাদের পৃথিবী

বিশ্বব্যাপী এখন যে তাপদাহ-দাবানল দেখা যাচ্ছে, এর মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। প্রতি বছরই আমরা জলবায়ু পরিবর্তনে সমাধানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের একত্র করি। গত বছরই একত্র করেছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তন হলে যা এখন হচ্ছে, এর ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন যদি আমাদের রোধ করতে হয়, তাহলে উন্নত বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে। আমরা অনেক চেষ্টা করে উন্নত বিশ্বকে আংশিক রাজি করাতে পেরেছি; কিন্তু পুরোপুরি কার্বন নিঃসরণ বন্ধে তারা এখনও রাজি নয়। এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
উন্নত বিশ্ব ভেবেছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলো শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই পড়বে। উন্নত বিশ্বে এর তেমন প্রভাব আসবে না। কিন্তু আজ আমরা দেখছি ইউরোপ তাপদাহ ও দাবানলে পুড়ছে। হাজার হাজার একর বনভূমি, চাষের জমি, ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। আপনি যত ধনী ব্যক্তিই হোন না কেন, জলবায়ু পরিবর্তন হলে এর প্রভাব থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। কারণ, একটাই পৃথিবী। একটাই এর প্রতিবেশ ব্যবস্থা। এটা ভেঙে পড়লে এর ফল সবাইকেই ভোগ করতে হবে। এটাকে বাঁচাতে হলে উন্নত বিশ্বকে ভোগবাদী জীবনে রাশ টানতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে। তাহলে তারা বাঁচবে, আমরাও বাঁচব।
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিতদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের অবারিত সম্পদ নেই, সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অল্প সম্পদের মধ্যেই আমাদের বুঝেশুনে সব কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। তাই আমাদের উন্নয়নের যে ধারা আছে, সেটিকে পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে এটা প্রকৃতিবান্ধব, পরিবেশবান্ধব হয়। পরিবেশ না বাঁচলে মানুষও বাঁচবে না। আমাদের প্রকৃতির প্রতি উদাসীন থাকা যাবে না। প্রকৃতির জন্য যা ক্ষতিকর সামগ্রী অবশ্যই তা বয়কট করতে হবে। পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। অবশ্যই এ খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। উন্নয়ন আর পরিবেশ পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়; বরং সহযোগিতাপূর্ণ। তাই জলবায়ু বিধ্বংসী, প্রাণ-প্রকৃতি বিধ্বংসী উন্নয়ন করা যাবে না।
উন্নয়নের জন্য উন্নত বিশ্ব এর আগে যেসব ভুল রাস্তায় গেছে, সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আমাদের ওপর একটার পর একটা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অথচ এ নিয়ে আমাদের কিছুই জানানো হচ্ছে না। আমরা কোনো মতামত দিলে সেটিকে উন্নয়নবিরোধী বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের নিরাপদ বিকল্পের দিকে যেতে হবে। একটা সময়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই ছিল সমাধান। এখন তো সৌরবিদ্যুৎ চলে এসেছে। কাজেই আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেই যেতে হবে।
লেখক :নির্বাহী প্রধান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)
মন্তব্য করুন