- ফিচার
- শিশুর ডিভাইস ব্যবহারে সচেতনতা
শিশুর ডিভাইস ব্যবহারে সচেতনতা

আজকাল শিশুদের মধ্যে দুরন্তপনা, ছোটাছুটি দেখা যায় না। এর অন্যতম কারণ অধিক মাত্রায় প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তি এক অনন্য আশীর্বাদ হলেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। দিনের দীর্ঘ সময় মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার ইত্যাদি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ঘটছে নানা রকম বিপত্তি।
শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নাঈমা ইসলাম অন্তরা বলেন, 'বাচ্চাদের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার মারাত্মক ক্ষতিকর। বাচ্চারা দীর্ঘ সময় মোবাইল বা ট্যাব স্ট্ক্রিনে চোখ রাখলে হতে পারে মাথাব্যথা, চোখে কম দেখাসহ নানা রকম শারীরিক সমস্যা। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চারা আক্রান্ত হয় এডিএইচডির (হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার) মতো ব্যাধিতে। এডিএইচডি মূলত একটি মানসিক ব্যাধি। এই রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চাদের মনোযোগ নষ্ট হয়, বাচ্চারা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, যে কোনো বিষয় দ্রুতই ভুলে যায়। এ ছাড়া মেজাজ খিটখিটে, জেদ, অনিদ্রা, খাবারের প্রতি অনীহার মতো নানা রকম অসুবিধা দেখা দেয়।'
প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রভাব যখন বাচ্চাদের জন্য এতটাই ক্ষতিকর, তখন সহজ একটি প্রশ্ন- কেন এবং কীভাবে ঝুঁকছে তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে? আমাদের আশপাশে একটু লক্ষ্য করলেই পাওয়া যায় এই প্রশ্নের উত্তর।
১০ বছর বয়সী আয়রা এখন প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার মা-বাবা উভয়ই চাকরিজীবী। স্কুলের সময় বাদে প্রায় সারাদিনই তাকে ফ্ল্যাটে একা থাকতে হয়। তার সঙ্গে একজন গৃহপরিচারিকা থাকলেও সে বাসার অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই তো ছোট্ট আয়রার সারাদিন কাটে মোবাইলে কার্টুন বা ভিডিও দেখে, গেমস খেলে। আয়রার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আয়রাকে ছোটবেলা থেকেই কার্টুন দেখতে অভ্যস্ত করা হয়;কার্টুন দেখেই খাওয়া হতো। যার ফলাফল আয়রার সমবয়সী বাচ্চারা যথাসময়ে কথা বলা শিখলেও সে পাঁচ বছর বয়সে এসেও তার সব চাহিদা বোঝাত ইশারায়। যদিও বা দু-একটি কথা বলত, তাও কারও বোধগম্য ছিল না। শুধু তাই নয়, বাসায় মেহমান এলেও কারও সঙ্গে মিশত না। কেউ ডাকলেও সাড়া দিত না। সারাদিনই ডুবে থাকত মোবাইল ফোনে, যার কারণে তাকে দেরিতে স্কুলে ভর্তি করাতে হয়।
একটি বাচ্চার সুষ্ঠু বিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে মা-বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের। তবে বর্তমান সময়ে কর্মতাগিদে বড় বড় পরিবার ভেঙে গঠিত হচ্ছে ছোট ছোট পরিবার। বেশিরভাগ পরিবার মা-বাবা ও একটি বা দুটি সন্তান নিয়ে গঠিত হচ্ছে এবং অনেক সময়ই দেখা যায়, একটি পরিবারের মা-বাবা দু'জনই চাকরিজীবী। সে পরিবারগুলোতে সন্তানকে মা-বাবার পক্ষে যথেষ্ট সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে একাকিত্ব কাটাতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নানা রকম প্রযুক্তি।
বাচ্চারা সহজে খেতে চাইবে না- এটাই স্বাভাবিক। তাই বাচ্চাদের খাওয়াতে তাদের মগ্ন রাখা হয় মোবাইল গেম বা ভিডিওতে। এ ছাড়া করোনার সময়ে স্থবির দেশকে সচল রাখতে অনলাইন পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। পড়াশোনা, মোবাইল গেম, ভিডিও এসবের জন্য একটি বাচ্চা দিনের বেশিরভাগ সময়ই প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে ধীরে ধীরে এটি অভ্যাস ও পরবর্তী সময়ে এটি আসক্তিতে রূপ নেয়।
বাচ্চাদের প্রযুক্তি আসক্তি থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নাঈমা ইসলাম অন্তরা কিছু পরামর্শ দেন। পরামর্শগুলো হলো-
- অনেক সময়ই দেখা যায়, বাচ্চাদের নির্বিঘ্নে খাবার খাওয়াতে তাদের মগ্ন রাখা হয় মোবাইল বা ট্যাবে। সবার প্রথমে এটি পরিবর্তন করতে হবে। বাচ্চাদের গল্প বলে বলে খাওয়ানো অথবা খেলতে খেলতে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।
- প্রযুক্তিতে আসক্ত বাচ্চাগুলোকে প্রথমেই প্রযুক্তি ব্যবহারে সরাসরি 'না' না বলে ব্যবহারের সময় বেঁধে দিন এবং ধীরে ধীরে তা কমিয়ে ফেলুন।
- মোবাইল গেম বা ভিডিও গেমে অভ্যাস না করে তাদের অন্যান্য খেলা, যেমন- গাড়ি, দৌড়, ক্যারম, দাবা ইত্যাদি খেলার প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে।
- বাসার আশপাশে সমবয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ করে দিতে হবে।
- বাচ্চাদের সময় কাটাতে বাসায় রাখা যেতে পারে বিড়াল, পাখি, খরগোশের মতো পোষ্য প্রাণী।
- সময় করে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে আসা যেতে পারে যে কোনো দর্শনীয় ও বিনোদনমূলক স্থান থেকে।
- ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের গল্প শোনার অভ্যাস করাতে হবে। পড়তে শিখলে গল্পের বই পড়ার অভ্যাস করানো উচিত।
মন্তব্য করুন