-samakal-63047a76cf9fb.png)
প্রবহমান জীবন শত বাধা পেরিয়ে ছুটে চলে গন্তব্যে। রেখে যায় স্মৃতি, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা। সুহৃদদের লেখা অনুগল্প নিয়ে আয়োজন...
'তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।' রোজ এই বাক্যটি নিয়ে অফিসে যেতে হয়। তবে আজ আর অফিসের কাজে মন নেই। কাজের চাপ কম থাকায় হয়তো সামান্তার কথাটি আমাকে নাড়িয়ে তুলেছে। দক্ষিণের বারান্দায় চারটা ফুলগাছ। তবে ইচ্ছা সত্ত্বেও পাখি কিনে খাঁচায় বন্দি করা হয়নি কখনও। দিনের ঘরের কাজ শেষে সামান্তার ভিডিও কল রিসিভ করতে হয়। একপ্রকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কলে এক পলক দেখে নেয়- দুপুরে ঠিকমতো পুরোটা খাবার খেয়েছি কিনা।
বারান্দায় বাতাস এলে চেয়ার নিয়ে বসতে তার ভালোই লাগে। গ্রিলে পা বাঁধিয়ে বাতাসে গুনগুন করে গান গেয়ে সে আকাশ দেখে। দমকা হওয়া যখন ফুলগাছের পাতাগুলো দোল দিয়ে যায়, তখন তার শৈশবের কথাই বেশি মনে পড়ে। সারাদিনের পড়াশোনা শেষে বিকেলটাই তখন বেশি আনন্দ দিত। খেলার সঙ্গী প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা, উঠানে দৌড়ঝাঁপ, গাছের আড়ালে লুকোচুরি খেলা, হাটবারের বাজার নিয়ে ফিরে আসা বাবার ব্যাগ টেনে নিয়ে খাবার বের করা- এসবই তার ভালো লাগার স্মৃতিময় অধ্যায়। নতুন অধ্যায়ের জীবন শুরু হয় বিয়ের পর।
রাজধানীর বড় করপোরেট অফিসে চাকরিটা বেশ চালিয়ে নিচ্ছি। খাটনি থাকলেও বিনিময়টা জুটে যাচ্ছে সন্তুষ্টির কোটায়। মাত্র দু'জনের ছোট্ট সংসার। ঘরের কাজ অল্পতেই সেরে নিতে পারে সে। কিন্তু ওর কষ্টটা শুরু হয় তার পর থেকে। সব কাজ ফুরিয়ে গেলে আমার জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না ওর। ছুটির দিনগুলো যখন দু'জনে গল্প জমাই, তখন সামান্তা তার শৈশবের স্মৃতিগুলো আমার সামনে হাজির করে। তার ভালো লাগা আর ফেলে আসা বিকেলের গল্প শোনায়। সামান্তার চেহারাও তখন সেই শৈশবসুলভ হয়ে ফুটে ওঠে। আমি বুঝতে পারি, বারান্দার অস্তমিত বিকেল তাকে কষ্ট দেয়। সে কষ্ট অপেক্ষার, নিঃসঙ্গতার।
না। আমি তো এভাবে থাকতে চাইনি কখনও। সামান্তার জন্য আমাকেও ভাবতে হবে। তাড়াতাড়ি ফিরে এসো- কথাটি আজকেও সে বলেছিল আমাকে। তাই অফিসের সব কাজ সেরে ঠিক ৫টায় বের হলাম বাসায় যাওয়া উদ্দেশে। দেড় ঘণ্টার জ্যাম পেরিয়ে তবেই ফিরতে হবে ঘরে। আজ যেভাবেই হোক, সূর্যাস্তের আগে সামান্তার অস্তমিত বিকেলে নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হবো। চমকে দেব ওকে। ঘড়িতে সময় পেরোল এক ঘণ্টা। সন্ধ্যা নামতে আরও এক ঘণ্টা বাকি। ঘড়ি বলছে, এখনও সময় আছে। এমন সময় মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। বড় ভাইয়ের ফোন। জানাল, হাসপাতালে ভর্তি তার মেয়ে সুমাইয়ার জন্য জরুরি রক্ত প্রয়োজন। সুমাইয়া ও আমার রক্তের গ্রুপ একই।
যুগ্ম আহ্বায়ক সুহৃদ সমাবেশ, ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটি
বিষয় : জীবনের গল্প
মন্তব্য করুন