সমকাল: দেশে দিন দিন প্যাকেটজাত আটা-ময়দার চাহিদা বাড়ছে। এর কারণ কী?

মোফাচ্ছেল হক: বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন সাড়ে ১৬ কোটির বেশি। আমাদের দেশের জনসংখ্যা দিন দিন যেমন বাড়ছে, তেমনি নিত্যপণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের চাহিদাও বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে গমের চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টনে। পাশাপাশি মানুষের খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়েছে। দেশের মোট চাহিদার ৮৫ শতাংশের বেশি আমদানি করা হয়। এ গম আমদানি করা হয় রাশিয়া, ইউক্রেন, কানাডা, উত্তর আমেরিকা, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। চাহিদা বাড়ার প্রধান কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। কিন্তু আমাদের অন্য কারণও আছে- খাদ্যাভ্যাস দিন দিন বদলে যাচ্ছে, খাদ্যে বৈচিত্র্যও আসছে। ২০১৮ সালে দেশে গমের চাহিদা ছিল ৭১ লাখ ৭৫ হাজার। চার বছর পর ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ লাখ টনে। চলতি বছর চাহিদা বেড়ে হতে পারে ৮৭ লাখ টন।

সমকাল: বাজারে আপনাদের অবস্থান কেমন?

মোফাচ্ছেল হক: বাজারে অন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমাদের তুলনা করছি না। তবে আটার বাজারে আমাদের সুখ্যাতি রয়েছে। আটা-ময়দার পাশাপাশি আমরা সুজিও প্যাকেটজাত করে বিপণন করে থাকি। প্রতি বছরই বাজারে আমাদের আধিপত্য বাড়ছে। মানসম্মত পণ্য সরবরাহের কারণে পুষ্টি ব্র্যান্ডের পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের আস্থা বাড়ছে। আমাদের মাসে আড়াই হাজার টন আটা-ময়দা উৎপাদন হচ্ছে। আটা-ময়দার পাশাপাশি আমাদের সুজির চাহিদাও বাড়ছে।

সমকাল: দেশে প্যাকেটজাত ময়দার বাজার নিয়ে কিছু বলুন।

মোফাচ্ছেল হক: প্যাকেটজাত আটার মতো প্যাকেটজাত ময়দার বাজারও দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো গুণগত মান।

সমকাল: বিশ্ববাজারে এখন গমের দাম কেমন?

মোফাচ্ছেল হক: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হওয়ার পর ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। যদিও ইউরোপীয় বাজারে এখন প্রতি টন গমের দাম ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৩২৫ দশমিক ৭৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমানো জরুরি। দেশে উৎপাদন না বাড়ালে এ নির্ভরতা দিন দিন বাড়তে থাকবে।

সমকাল: আমদানি নির্ভরতা কমাতে আপনার পরামর্শ কী?

মোফাচ্ছেল হক: উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদনও বাড়ার কথা। কিন্তু উৎপাদন তো বাড়ছে না; বরং প্রতি বছর কমছে। ২০২১ সালে আমাদের দেশে গম উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টন। চাহিদার বাকি অংশই আমদানি করতে হয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে খুব সহজেই বলতে পারি, আমাদের চাহিদার আনুমানিক ১৫ শতাংশ নিজেরা উৎপাদন করি। বাকি ৮৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। কাজেই উৎপাদন বাড়াতে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

সমকাল: বাজারে মোট প্যাকেটজাত আটার মধ্যে ব্রাউন আটার অংশ কতটুকু?

মোফাচ্ছেল হক: ব্রাউন আটার চাহিদা অবশ্যই আগের চেয়ে বেড়েছে। আটা-ময়দার চাহিদা যেমন দিন দিন বেড়ে চলেছে, তেমনি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষজন তাদের খাদ্যাভ্যাসে আনছে পরিবর্তন। তাদের এই সচেতনতা থেকে বেড়ে চলেছে ব্রাউন আটার চাহিদাও। এ আটার পুষ্টিগুণ সাধারণ আটার চেয়ে অনেক বেশি। তাই ভোক্তারা যেমন ব্রাউন আটা কিনছে, তেমনি বড় কোম্পানিগুলোও দেশের বাজারে এ মানের আটার সরবরাহ বাড়াচ্ছে। দেশের মোট প্যাকেটজাত আটার মধ্যে ব্রাউন আটার অংশ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হতে পারে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এ হার আরও বাড়বে।

সমকাল: আটা-ময়দার উৎপাদন ও বিপণনে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত হওয়ার কারণে পণ্যের মানে কোনো পরিবর্তন কি হয়েছে?

মোফাচ্ছেল হক: করপোরেট প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ার কারণে পণ্যের মান অবশ্যই বাড়ছে। আগে খোলা আটা-ময়দা পাওয়া যেত এবং সেগুলোর গুণগত মান সব সময় ওঠানামা করত। কিন্তু এখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত হওয়ার কারণে তারা প্রতিযোগিতার বাজারে যেমন পণ্যের গুণগত মান সব সময় ধরে রাখছে, তেমনি ক্রমান্বয়ে মান আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

সমকাল: খোলা ও প্যাকেটজাত আটা-ময়দার মধ্যে গুণগত কোনো পার্থক্য আছে কি?

মোফাচ্ছেল হক: খোলা পণ্যের সঙ্গে প্যাকেটজাত আটা-ময়দার দামে যেমন পার্থক্য, তেমনি গুণেও পার্থক্য রয়েছে। পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখার জন্য আমরা বাছাই করা উৎস থেকেই কাঁচামাল সংগ্রহ করি। প্রত্যেকটি ব্যাচের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ করে তা উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। পাশাপাশি উৎপাদনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।