
মো. রেদোয়ানুর রহমান, হেড অব সেলস, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ
সমকাল: বর্তমানে দেশে প্যাকেটজাত আটার চাহিদা কেমন?
রেদোয়ানুর রহমান: দেশে প্রতিনিয়ত প্যাকেটজাত আটার চাহিদা বাড়ছে। দেশে মোট উৎপাদিত আটা-ময়দার ১০ থেকে ১২ শতাংশ প্যাকেটজাত করে বিক্রি হয়। প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে এর চাহিদা। স্বাস্থ্য সচেতনতা ও খাদ্যপণ্যে রুচিশীলতা এর বড় কারণ। বাজারে বিক্রির দিক থেকে এখন আমরাই শীর্ষে রয়েছি।
সমকাল: প্যাকেটজাত ময়দার বাজারও কি বেড়েছে?
রেদোয়ানুর রহমান: সাম্প্রতিক সময়ে আটার মতো প্যাকেটজাত ময়দার বাজারও বেড়েছে। ভালো মানের গম থেকে ময়দা তৈরি হয়। আর এই ভালো মানের গম মূলত কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়। এর প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর।
সমকাল: বিশ্ববাজারে গমের দাম কেমন? দেশে এর উৎপাদন কতটুকু হচ্ছে?
রেদোয়ানুর রহমান: গত কয়েক বছরে দেশে গমের আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আমরা নিজেদের মিলিং সক্ষমতা অনেকাংশে বাড়িয়েছি, যা এখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ। করোনা অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার অনেকটাই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে, যা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ২০১৮ সালে প্রতি টন আটা তৈরির গমের দাম ছিল গড়ে ২৩৫ মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ২৫০ ডলার। এরপর ২০২১ সালে ৩৫০ ডলার এবং ২০২২ সালে তা ৩৭৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে ময়দা তৈরির গমের দামও বেড়েছে। ২০১৮ সালে প্রতি টন ছিল গড়ে ৩০০ ডলার। এর দাম ২০২০ সালে খানিকটা কমে ২৯০ ডলার হয়। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ৩৪৫ ডলার। চলতি বছর তা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ ডলার। দেশে গম উৎপাদন হয় চাহিদার মাত্র ১১ থেকে ১২ শতাংশ, যা থেকে মূলত আটা উৎপাদিত হয়। বাকি গম আমদানি করতে হয়। কিন্তু আটা-ময়দার বাজার বৃদ্ধির ফলে দেশীয় গমের জোগানের অনুপাত প্রতি বছরই কমছে। অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটাতে দেশে গমের উৎপাদন বাড়ানো দরকার।
সমকাল: ব্রাউন আটার চাহিদা কি আগের চেয়ে বেড়েছে? মোট প্যাকেটজাত আটার মধ্যে এর অংশ কতটুকু?
রেদোয়ানুর রহমান: মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্রাউন আটা জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। বর্তমানে মোট প্যাকেটজাত আটার ৪ থেকে ৫ শতাংশ ব্রাউন আটা।
সমকাল: আটা-ময়দার উৎপাদন ও বিপণনে এখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আসছে। এর কারণ কী বলে মনে করেন?
রেদোয়ানুর রহমান: মূলত গুণগত মানের জন্যই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষ আস্থা রাখে। বাজারের ব্যাপ্তি ও আটা-ময়দা ব্যবহার হয়- এমন খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়া, বেকারি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মূলত এ খাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আসছে। কারণ তাদের মাধ্যমে গুণগত পণ্য সরবরাহের অনেক সুযোগ আছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাজারের পরিধি আরও বাড়বে আগামী দিনগুলোতে।
সমকাল: খোলা পণ্যের সঙ্গে প্যাকেটজাত আটা-ময়দার গুণগত মানের পার্থক্য কতটুকু?
রেদোয়ানুর রহমান: গুণগত মানের জন্যই প্যাকেটজাত আটা-ময়দার চাহিদা বেড়েছে। যেমন- আমাদের ফ্যাক্টরিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে গম থেকে আটা-ময়দা তৈরি হয় কোনো হাতের স্পর্শ ছাড়া। এ ছাড়া এতে ক্ষতিকারক কোনো উপাদান নেই। এগুলো খোলা আটায় নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
সমকাল: আটা-ময়দার বাজারে কোন কোন কোম্পানি সবচেয়ে এগিয়ে আছে?
রেদোয়ানুর রহমান: মূলত আটা-ময়দার বাজারে ছয়টি শিল্পগোষ্ঠী যথা- বসুন্ধরা, সিটি, মেঘনা, টিকে, আকিজ এবং এসিআইর বিক্রির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। প্যাকেট আটার বিক্রির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান শীর্ষে।
মন্তব্য করুন