- ফিচার
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে

'ক্যান্সার' শব্দটি শুনলে যে কেউ ভীত হবেন। অনেকের ধারণা, একবার ক্যান্সার হওয়া মানেই ফলাফল নিশ্চিত মৃত্যু; কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন আর ক্যান্সার মানেই অবধারিত মৃত্যু নয়। শুরুতেই শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভও সম্ভব। এ জন্য যেতে হয় এক জটিল চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে। প্রতিকার থেকে প্রতিরোধই শ্রেয়। একটু সচেতন হলেই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা বা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য দরকার যথাযথ শিক্ষা ও সচেতনতা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্যান্সারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কারণ জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত।
আমরা যে খাবারগুলো খাই সেগুলো বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকিসহ আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিককে ভয়াবহভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সারের বিকাশে খাদ্যের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অনেক খাবারেই উপকারী উপাদান আছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। 'ক্যান্সার ফাইটিং ফুড' বলতে এমন খাবারকে বোঝায়, যেগুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে আসে। এর মধ্যে রয়েছে- আপেল, জাম, ত্রুসিফেরা জাতীয় সবজি, গাঁজর, চেরি, তিসি, রসুন, টক ফল, ডাল, শাক জাতীয়, স্ট্রবেরি, চা, টমেটো, দানাশস্য ইত্যাদি।
কিছু সতর্কতা
* অ্যালকোহল, নরম পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
* প্রচণ্ড উত্তাপে দীর্ঘসময় ভাজা খাবার, ট্র্যান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। * বিভিন্ন কারণে মানুষ কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করে কিন্তু এগুলো যে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় সে বিষয়ে অনেকেই জানেন না। খাবারে কৃত্রিম চিনি ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
* ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করুন। মনে রাখতে হবে ধূমপানে বিষপান। যে কোনো তামাক জাতীয় দ্রব্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
* কসমেটিকস ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও সাবধানতা জরুরি। ভেজাল ও নিম্নমানের কসমেটিকস পরিহার করুন।
* আমরা অনেকেই জানি না, সূর্যের আলো শরীরে ভিটামিন-ডির সঞ্চার হয় ও মেলানিনের সৃষ্টি হয়, যা আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। তবে সূর্যের তাপ নির্গত অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের স্বাস্থ্য ও ত্বকের ওপর ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা থেকে হয় স্কিন ক্যান্সার। তাই অতিরিক্ত সূর্যের তাপ থেকে শরীরকে বাঁচিয়ে চলুন।
* রক্তদান বা গ্রহণ অথবা যে কোনো ইঞ্জেকশন গ্রহণের সময় এবং এন্ডোস্কপি, কলোনোস্কপি ইত্যাদি পরীক্ষার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি।
* কর্মক্ষেত্রে ক্যান্সার তৈরিকারী রেডিয়েশন বা কেমিক্যালের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
* শরীরের কোথাও চাকা বা গোটা, ক্ষত, তিলের রং পরিবর্তন, দীর্ঘদিনের জ্বর, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, খাদ্যে অরুচি, পায়খানার কোনো পরিবর্তন (যেমন পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, হঠাৎ পাতলা পায়খানা), প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা দিনের বেশিরভাগ সময় বসে কাটায় তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বেশি। তাই একটানা বসে না থেকে এক ঘণ্টা অন্তত কয়েক মিনিটের জন্য হলেও চারপাশে পায়চারি করুন।
* প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তিরই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত, যাতে শরীরে ক্যান্সার বা যে কোনো রোগ দানা বাঁধতে শুরু করলে তা প্রাথমিক অবস্থায়ই দমন করা সম্ভব হয়।
* স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে হবে। নিয়মিত সব খাদ্যগুণের উপাদানসংবলিত খাবার তালিকা মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম, নিয়মিত ঘুমের ব্যাপারেও নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে।
লেখক :পুষ্টিবিদ, গুলশান ডায়াবেটিক কেয়ার
মন্তব্য করুন