- ফিচার
- স্মৃতি হাতড়ে ফেরা
স্মৃতি হাতড়ে ফেরা

এক সময়ে এটিই ছিল সোনারগাঁয়ে ঈশা খাঁর বাড়ি
আমরা যে এলাকায় বসবাস করছি, তা পনেরো শতকের প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁ। বলাবাহুল্য, দেশ বা বিদেশেও সোনারগাঁয়ের সরদারবাড়ি ও পানাম নগরের নাম সুপরিচিত। সেই সরদারবাড়ির সামনে-পেছনে প্রকাণ্ড ৩টি দিঘি ও প্রাসাদটি মনোরম- চোখ ধাঁধানো অপরূপ এ প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন। প্রাসাদের পশ্চিম দিকে ওপরে রয়েছে রাজমুকুটের চিহ্ন। প্রতি তলায় সাতটি করে তোরণ, কার্নিশেও লতাপাতার কারুকাজ। উত্তরে ও পশ্চিম পাশের পুকুরে আছে শান বাঁধানো ঘাট। এটি শানশওকতের কথাই যেন মনে করিয়ে দেয়! সেই ঘাটে কেউ কেউ পা ভিজিয়েও বসে।
অতীতের কথা ভাবলে সত্যিই রোমাঞ্চকর মনে হয়। বারো ভূঁইয়া, মোগল আমল ও ব্রিটিশ শাসন আমল ধরে বড় সরদারবাড়ির বয়স ৬০০ বছর। বাংলার স্থাপত্যশৈলীর প্রায় সব নিদর্শন যেন একসঙ্গে গাঁথা এই বাড়িটিতে, যার পরিচিতি বাংলার প্রতাপশালী শাসক ঈশা খাঁর বাড়ি হিসেবে। কোরীয় কোম্পানি ইয়াংওয়ান করপোরেশনের অর্থায়নে ২০ লাখ ডলার ব্যয়ে সংস্কার করার ফলে এটি আদি রূপে ফিরেছে।
দিন গিয়ে যখন রাত আসে তখন পুকুরের দিকে তাকালে লক্ষ তারার হাট বলে মনে হয়। বাড়িটি এখন বাংলাদেশ লোকশিল্প জাদুঘর; যা সিরামিকের চোখ ধাঁধানো কারুকাজ নিয়ে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। কী অপরূপ, উদ্যানের মুখে প্রহরীদের কুঠুরি পার হয়ে প্রকাণ্ড জলসা ঘর, ৩০ ফুট উচ্চতা ও খাঁড়া ছাদ ২৩টি। সিঁড়ি ৬টি, জলসা ঘর পেরিয়ে চারদিকে নিচতলায় ও দ্বিতল বারান্দায় পাঁচ ফুট পরপর সুনিপুণ কারুকার্য এবং খিলানের ওপর লতানো কারুকাজ। পুরো ভবনটির আয়তন ২৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট। নিচতলায় কক্ষ রয়েছে ৪৭টি। দ্বিতীয় তলায় কক্ষ সংখ্যা ৩৮টি। প্রায় ৬০০ বছরের পুরোনো প্রাচীন ইমারতের রূপ ছিল ঝলমল ও আকর্ষণীয়। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনটি ১৭০ বিঘা জায়গা নিয়ে অবস্থিত। এই প্রাচীরঘেরা সুনিপুণ ছায়া নিবিড় ফাউন্ডেশনের গাছে গাছে পাখির কলরবে এক অনন্য পরিবেশ পাওয়া যায়।
এই ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় গেট থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে আরেকটি নিদর্শন পানাম নগর। বিভিন্ন দর্শনীয় নিদর্শনগুলোর ইতিহাস কারও না কারও জানা থাকলেও আনাচে-কানাচে থাকা বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে; যা অনেকেরই অজানা। তেমনি স্মৃতি-বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া নগরটির নাম পানাম নগর। কালো পাথরের টেরাকোটা ধূসর স্মৃতি বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পানাম নগরীর সৌন্দর্যের চিহ্ন মাত্র। রাজসভায় এখন আর সওদাগর ও পর্যটকদের ব্যবসার নিমিত্তে নোঙরের হাট বসে না এখানে-সেখানে। নেই কেনাবেচার বর্ণিল উৎসবের আয়োজন। ধন-দৌলতে ভরে না আর খাজাঞ্চিখানাও।
পানাম নগরের নান্দনিক এই সুলতানি আমলের হিন্দু সমাজপতি ও জমিদাররা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি করেছেন। বছরের পর বছর অনাদর আর অবহেলা গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ। পানামে ছিল অসংখ্য প্রাচীন ইমারত, অট্টালিকা, মসজিদ, মন্দির, উঠান, মঠ, ঠাকুরঘর, গোসলখানা, সরাইখানা, খাজাঞ্চিখানা, কূপ, নাচঘর, ক্রোড়িবাড়ি টাঁকশাল, দরবার কক্ষ, বিচারালয়, প্রমোদালয়, ঈশাখাঁপুত্র মুসা খাঁর প্রমোদ বাগানবাড়ি বাগে মুসা, গুপ্তপথ, বিস্মৃত প্রাচীরঘেরা দেয়াল ইত্যাদি। এ ছাড়াও দাঁড়িয়ে আছে ৪০০ বছরের পুরোনো মঠবাড়ি। এর পশ্চিমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীলকুঠি ভবন, পোদ্দারবাড়ি, কাশিনাথের বাড়িসহ বহু প্রাচীন ভবন দেখলে গা ছমছম করে ওঠে। া
মন্তব্য করুন