সিস্ট হলো এক ধরনের ক্যাভিটি, যার মধ্যে থাকে তরল পদার্থ, যা একটি শক্ত বা নরম ব্যাগের মতো হয়। মুখের সিস্ট মুখের যে কোনো জায়গায় হতে পারে। ঠোঁট, জিহ্বা, জিহ্বার নিচে, মুখের তালু, মাড়ি, লালাগ্রন্থি সব জায়গায়। প্রথমে ছোট থাকে। এক সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট হয়। সংক্রমিত হলে বড় হতে থাকে, লাল রং ধারণ করে এবং প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। অনেক সময় সিস্টের ভেতর থাকা পুঁজ বের হতে থাকে। চোয়ালের ভেতরে সিস্ট হলে চোয়ালের হাড় ক্ষয় হয়ে যায়। যদি সঠিক সময়ে এটা ধরা না পড়ে, তবে হতে পারে তীব্র যন্ত্রণা বা ব্যথা কিংবা এর থেকেও জটিল কিছু। মুখের ডেন্টাল সিস্ট বিভিন্ন ধরনের দেখা দেয়।

পেরিএপিক্যাল সিস্ট

এটাকে আমরা রেডিকুলার সিস্টও বলি। এই সিস্টটি মূলত হয় দাঁতের রুটে বা শিকড়ের নিচের অংশে। যদি আপনার কোনো দাঁত অনেক দিন ধরে কেরিয়াস থাকে, যার পাল্প বা মজ্জা মরে যায়। একসময় এই ডেড পাল্পগুলো ইনফেকশন তৈরি করে; যা ইনফ্লামেশনের মাধ্যমে পেরিএপিক্যাল সিস্ট করে।

ডেন্টিজেরাস সিস্ট

ডেন্টিজেরাস সিস্টটি একটি ডেন্টাল সিস্ট, যা পুরো ক্রাউন পোরশনটি ঘিরে হয়। এটা সবসময় হয় আক্কেল দাঁতে, যা মাড়ির ভেতরেই থাকে, মুখে ওঠে না। তুলনামূলক বড় সিস্টগুলো পাশের দাঁতের যে অ্যালাইনমেন্ট থাকে, সেটা ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই সিস্টটিকে খুব কম সময়ই ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে দেখা যায়।

ওডোন্টোজেনিক সিস্ট

অনেক ধরনের সিস্ট আছে যেগুলো চোয়ালের ভেতর হয়। ওডোন্টোজেনিক সিস্টও সে রকম চোয়ালের হাড়ের মধ্যে হয় এবং এটি আকৃতিতে একটু বড় হয়। একটা সময় এটা দেখতে খুব ফোলা দেখা যায়। যদি এর কোনো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং পাশের দাঁতকে নষ্ট করে দেয়। ফলাফল যা হয় তা হলো, ইনফেকশনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, সঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। একসময় এই ইনফেকশন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে।

মিউকোসিল বা মিউকাস সিস্ট

এই সিস্টটি আসলে মুখের নরম অংশগুলোতে যেমন ঠোঁট, জিহ্বা, গালের ভেতরে দেখা যায়। এটি মুখে জ্বালাপোড়া করে, দেখতে ক্ষতের মতো। সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ইপুলিস যেটা গালের ভেতরে এবং রেনুলা যেটা জিহ্বার নিচে হয়, সেগুলোকে সার্জারি করতে হয়।

লক্ষণ

অনেক কারণেই সিস্ট হয়। যেমন অনেক সময় মুখে যদি আঘাত লাগে, আপনি বুঝবেন না কী হয়েছে। এটা হয় মূলত সামনের ওপরের ও নিচের দাঁতে। অনেক দিন পর ওই দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হয়ে সিস্ট তৈরি হয় এবং এটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। ডেন্টাল সিস্ট যখন হয়, তখন আপনি ব্যথা অনুভব করবেন, স্থানটি লাল এবং ফোলা হতে পারে। তবে যেসব সিস্ট সংক্রমিত হয় না, এদের অনেক সময় কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। যদি না দেখা যায় বা আপনি বুঝতে না পারেন তবে এগুলো সাধারণত এক্স-রে বা অন্যান্য ডায়াগনস্টিক স্ক্যানে ধরা পড়ে। মুখের মিউকোসাল আস্তরণের সিস্টটি ফোসকা বা ক্ষত হিসেবে দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা
ডেন্টাল সিস্ট চিকিৎসা করার সময় অনেকগুলো দিক খেয়াল রাখতে হয়। সিস্টের আশপাশে কোনো দাঁত বা নার্ভ ইনভিজিলেশন আছে কিনা? অনেক সময় সিটি স্ক্যান করার প্রয়োজন হয়। কতটুকু পরিমাণে, চোয়ালের কতটুকু স্থানজুড়ে রয়েছে সেটা দেখতে হয়। আবার সিস্টের ধরন দেখে অনেক সময় বোঝা যায় এটা কী ধরনের সিস্ট। আবার বায়োপসি করার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হয় এটা সিস্ট না টিউমার। যদি অনেক বড় অংশজুড়ে হয়, তবে অবশ্যই সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করে ট্রিটমেন্ট পল্গ্যান করতে হয়।

ছোট সিস্ট হলে ট্রিটমেন্ট করাটা খুব জরুরি নয়। কিন্তু যত দ্রুত করা যায়, তত ভালো। অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক নিলেই সিস্টের বৃদ্ধি কমে যায়। সবচেয়ে কার্যকরী হলো, সার্জিক্যাল রিমুভেবল। সিস্টের শুধু তরল অংশটি বের করে দিলে দেখা যায় কিছুদিন পর আবার সিস্টটি রিকারেন্ট হয়। এ ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল রিমুভেবল করা সবচেয়ে কার্যকর।

[বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক]

বিষয় : ডেন্টিজেরাস সিস্ট পেরিএপিক্যাল সিস্ট ওডোন্টোজেনিক সিস্ট

মন্তব্য করুন