আগেকার দিনে ভারী ও জরোয়া গহনার চল থাকলেও, এখন ট্রেন্ডে আছে হালকা ওজনের গহনা। বলতে দ্বিধা নেই তরুণী থেকে শুরু করে মধ্যবয়স্করাও বেছে নিচ্ছেন কাঠের গহনা। বিভিন্ন কারুকাজ করা এসব গহনা কম দামে পাওয়া যায় বলে এর ব্যবহার বেড়েছে। 

রাজরানীর গলায় থাকা গজমতির হারের কথা বলছি না। বলছি না জরোয়া দুল, কাঁকন ও সীতাহারের কথা। আজ বলছি হাতে তৈরি কাঠের গহনার কথা। কাঠ দিয়ে কী তৈরি হয় না! দুল, মালা, আংটি, চুড়ি সবই হয়। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপসের সঙ্গে পরা যায় এসব গহনা। এতে বাড়ে নারীর সৌন্দর্য।

উপকরণ :কাঠের গহনায় হ্যান্ডপেইন্ট থাকে বেশি। হ্যান্ডপেইন্ট ছাড়াও গহনায় বসানো হয় বিডস, কড়ি, পুঁতি ও রঙিন সুতার তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। এসবের সংমিশ্রণে গহনার চেহারাটাই বদলে যায়।

মোটিফ :কাঠের গহনায় প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। ফুল, পাখি, লতাপাতা সবই যেন উপজীব্য হয়ে উঠছে। শিউলি, সূর্যমুখীসহ প্রিয় যে কোনো ফুল ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে এসব গহনায়। দুল, আংটিতে একই রঙের ফুলের ডিজাইন করা হচ্ছে। শিউলি, কাঠগোলাপ, আঙুর পাতা ইত্যাদি ঘিরেই গহনার অবয়ব থাকে। উদ্যোক্তারা নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে রং করে থাকেন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ গহনা তৈরির পাশাপাশি অনলাইন পেজের উদ্যোক্তারা ছোট পরিসরে এ গহনা তৈরি করছেন- এমনই একজন উদ্যোক্তা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসমিয়া আক্তার তামান্না। তিনি জানান, হ্যান্ডপেইন্টের প্রতি দুর্বলতা থেকে কাঠের গহনায় রং করার কাজটি শুরু করেন।শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী নারীরা এসব গহনা ব্যবহার করেন। কারণ এগুলো খুবই আরামদায়ক। সিনথেটিক বা অন্য গহনার মতো এগুলো ভারী নয়। এগুলো খুব সহজে বহন করা যায়। হালকার মধ্যে নিজেকে পরিপাটি ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে কাঠের মালা, আংটি কিংবা ছোট্ট দুল ব্যবহার করেন সবাই।

গহনার বিশেষত্ব : দোকান থেকে গহনা কেনার ক্ষেত্রে নিজেদের পোশাকের রং অনুযায়ী কেনা অনেকের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হালকা কিংবা গাঢ় সব রকম রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কাস্টমাইজ করে এ গহনা তৈরি করা যায়। যেমন পোশাক যদি হয় গাঢ় রঙের, সেই রঙের কাঠের গহনা পাবেন অনায়াসে। পোশাক যদি হয় হালকা রঙিন, সে ক্ষেত্রে পোশাকের রঙের আধিক্যের সঙ্গে মিলিয়ে সেই রঙের কাঠের গহনায় ফুটে উঠবে নারীর সাজ।

কোন পোশাকের সঙ্গে কেমন গহনা : শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, টপ সবকিছুর সঙ্গে কাঠের গহনা মানায়। কোনো দাওয়াতে শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে মানিয়ে কাঠের লম্বা মালা, কানের দুল, হাতের চুড়ি, আংটিতে নারীর সাজ পূর্ণতা পাবে। হালকা ও ছোট্ট গলার মালা, কানের দুলে বেশ স্মার্ট লাগবে যে কাউকেই। এ ছাড়াও দেশীয় সুতি, জামদানি, হাফ সিল্ক্ক শাড়িতে এ ধরনের গহনা বিশেষ মাত্রা যোগ করে।
প্রাপ্তিস্থান :ঢাকার নিউমার্কেট, গাউসিয়া মার্কেটসহ বিভাগীয় শহরের মার্কেটগুলোয় এসব গহনার উপকরণ পাওয়া যায়। পাওয়া যায় রংহীন গহনার অবয়ব দেওয়া গহনাও। উদ্যোক্তারা সরাসরি মার্কেট থেকে উপকরণগুলো সংগ্রহ করে নিজেরাই ঘরে বসে কাঠের গহনা তৈরি করেন এবং সেগুলো অনলাইন, অফলাইনে বিক্রি করেন। বিভিন্ন অনলাইন পেজ থেকেও কেনা যাবে কারুকাজ করা গহনা।

দরদাম :কাঠের গহনা বেশ সুলভ মূল্যের। এক সেট গহনা মোটামুটি ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আলাদাভাবে গলার মালা ১০০ ও কানের দুল ৮০ টাকায় কেনা যায়। হাতের আংটি ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও মোটা চুড়ি সেট ২০০-২৫০ টাকা এবং চিকন চুড়ি সেট ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

সংরক্ষণের নিয়ম :বাইরে থেকে এসে গহনা ৩০ মিনিট বাতাসে রাখুন অথবা অল্প সময় হালকা রোদে রাখুন। তারপর নরম কাপড় দিয়ে গহনাগুলো মুড়ে একটি প্লাস্টিকের বাক্সে রাখলে গহনা অনেকটা নিরাপদে থাকে। এসব গহনা টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়ে রাখবেন না এবং কোনো ধরনের স্প্রে করবেন না। এতে গহনার রং উঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। 


বিষয় : কাঠের গহনা

মন্তব্য করুন