- ফিচার
- গহিন গন্তব্যে
গহিন গন্তব্যে

খাগড়াছড়ির পরতে পরতে প্রকৃতি যেন তার অপরূপ সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছে। তুয়ারী মারাইংয়ে রোমাঞ্চকর ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের স্বাদ মিলবে
গন্তব্য তুয়ারী মারাইং। সঙ্গী অদম্য দামালের দল 'দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ'। খাগড়াছড়িগামী রাতের গাড়িতে চড়ে ভোরেই পৌঁছলাম। হেটেলে উঠে ফ্রেশ হতে হতেই দীঘিনালা পথের বাহন মাহেন্দ্র প্রস্তুত। গাইড মিল্টন ত্রিপুরার নির্দেশনামতে ছুটলাম। পথে ব্রেক দিয়ে পেটে কিছু দানাপানি ঢুকিয়ে নিই। সারাদিন কী পাব আর কী খাব তা তো বলা যায় না। তাই গরম গরম ভাত, ডিম, ভর্তা, ডাল দিয়েই সকালের নাশতা সেরে নিলাম। এরপর ছুটলাম পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে। যেতে যেতে নয়মাইল এলাকা ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে মাহেন্দ্র ঢুকে যায় ইট-সুরকির পথ মাইতুই পাড়ার দিকে। মনের ভেতর বেশ ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। চারপাশ সুনসান নীরবতা ভর করা অরণ্যঘেরা সরু পথ। আলহাজ মোস্তফা হাকিম বিদ্যা নিকেতন ছাড়িয়ে সীমানাপাড়ায় পৌঁছে গাড়ি ব্রেক। এবার শুরু ঢেউ খেলানো পাহাড়ি ট্র্যাকিং। মাথার ওপর নীল আসমানজুড়ে শরৎকালের শুভ্রতায় ছুটে চলেছি। সঙ্গে জুমের ফসলের মন উদাস করা ঘ্রাণ। চলার পথে ছোট্ট একটি জুমঘরে খানিকটা সময় জিরিয়ে নেওয়া। মাঝেমধ্যে দূর থেকে দৈত্যাকার গাছের ঘন অরণ্য দেখতে দেখতে অদ্ভুত অনুভূতি দোল দেয় মনে। এরকমভাবে ঘণ্টাখানেক হাইকিং-ট্র্যাক করার পর এক বিশাল খাদের কিনারে গিয়ে থামতে হয়। এবার চিকন চিকন বাঁশের ফাঁক গলে নামতে হবে।
দেখতে এসেছি, দেখতেই হবে। তাই লতাগুল্মের সাহায্যে নেমে যাই। নামলাম তো ঠিকই। কিন্তু এর পরের দৃশ্য আরও ভয়ংকর। অনবরত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় দেড়শ ফুট ওপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি- পাথর আর পাথর। ঝুম বর্ষায় এটাও হয়তো একটা ঝরনার রূপ ধারণ করে। ঠিক ওই জায়গাটা দিয়েই ১০-১২ ফুট নিচে নামতে হবে। একটু এদিক-সেদিক হলেই সাইজ। কী আর করা। দুর্বার দে-ছুট বলে কথা। সঙ্গীদের সাহায্যে রশি বেয়ে নেমে পড়ি। সেইরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। লিখে বোঝানো মুশকিল। বুঝতে হলে যেতে হবে মায়াবী প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘেরা তুয়ারী মারাইং। প্রকৃতি যেমনি মায়াবী, ঠিক তেমনি আবার ভয়ানক প্রতিশোধপরায়ণ। যাক সেসব গুরুগম্ভীর কথা। বরং বাকি অংশের ট্রেইল নিয়ে গল্প করি। তুয়ারী মারাইং ঝরনার দেখা পেতে আর খুব বেশি পথ বাকি ছিল না। যতটুকুই ছিল, শুধু পাথর আর পাথর। দু'পাশে খাড়া উঁচু পাহাড়। এর মাঝ দিয়ে চলছিল আমাদের হাইকিং। প্রাচীন গাছগুলোর ডালপালা এমনভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়েছিল, যে কেউ প্রথম দেখায় ভূতুড়ে বাড়ির প্রান্তর মনে করে থাকবে। ভ্রমণের আনন্দ ঠিক এই জায়গাটাতেই। যেতে যেতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঝরনার দেখা মেলে। তুয়ারী মারাইং ঝরনার রূপ দেখব নাকি এর পরিবেশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখব! কোনটা রেখে কোনটায় দৃষ্টি আটকাব। প্রায় শত ফুট উচ্চতা থেকে ঝরনার পানির ধারা পতনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। মনমাতানো অনবরত ছন্দতোলা রিমঝিম শব্দ। পানি পড়তে পড়তে ঝরনার সামনে খুব সুন্দর ক্যাসকেড তৈরি হয়েছে। যেখানে অবলীলায় সাঁতার কাটা যায়। ঝরনার ডান পাশের পাহাড়ের পাদদেশটা চমৎকার আকৃতির। যেন বিশাল একটি থালা। সম্ভবত এ কারণেই ঝরনার নামটা তুয়ারী মারাইং। তুয়ারী অর্থ কুয়া বা কূপ; মারাইং অর্থ থালা বা বাসন। অর্থাৎ কুয়ার থালা। এটি ত্রিপুরা ভাষার শব্দ। সব মিলিয়ে তুয়ারী মারাইং ঝরনা, পাহাড়ের পাদদেশের ভৌগোলিক আকৃতিসহ এর ট্রেইলটা অসাধারণ সৌন্দর্য বহন করে আছে। যে কোনো ভ্রমণপিপাসু তুয়ারী মারাইং দেখতে গিয়ে আমৃত্যু সুন্দর স্মৃতির ঝুলি নিয়ে ফিরতে পারবে।
কীভাবে যাবেন :ঢাকা-খাগড়াছড়ি রুটে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস চলাচল করে। খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়ি, মাহেন্দ্র বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দীঘিনালা নয়মাইল এলাকার সীমানাপাড়া। মাইতুই বা সীমানাপাড়া থেকে স্থানীয় গাইড পাওয়া যায়।
যেখানে থাকবেন ও খাবেন :খাগড়াছড়ি শহরে মানভেদে বিভিন্ন আবাসিক ও খাবার হোটেল আছে। চাইলে তুয়ারী মারাইং দিনে দিনে দেখে রাতের গাড়িতে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারবেন। া
ছবি :দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
গন্তব্য তুয়ারী মারাইং। সঙ্গী অদম্য দামালের দল 'দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ'। খাগড়াছড়িগামী রাতের গাড়িতে চড়ে ভোরেই পৌঁছলাম। হেটেলে উঠে ফ্রেশ হতে হতেই দীঘিনালা পথের বাহন মাহেন্দ্র প্রস্তুত। গাইড মিল্টন ত্রিপুরার নির্দেশনামতে ছুটলাম। পথে ব্রেক দিয়ে পেটে কিছু দানাপানি ঢুকিয়ে নিই। সারাদিন কী পাব আর কী খাব তা তো বলা যায় না। তাই গরম গরম ভাত, ডিম, ভর্তা, ডাল দিয়েই সকালের নাশতা সেরে নিলাম। এরপর ছুটলাম পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে। যেতে যেতে নয়মাইল এলাকা ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে মাহেন্দ্র ঢুকে যায় ইট-সুরকির পথ মাইতুই পাড়ার দিকে। মনের ভেতর বেশ ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। চারপাশ সুনসান নীরবতা ভর করা অরণ্যঘেরা সরু পথ। আলহাজ মোস্তফা হাকিম বিদ্যা নিকেতন ছাড়িয়ে সীমানাপাড়ায় পৌঁছে গাড়ি ব্রেক। এবার শুরু ঢেউ খেলানো পাহাড়ি ট্র্যাকিং। মাথার ওপর নীল আসমানজুড়ে শরৎকালের শুভ্রতায় ছুটে চলেছি। সঙ্গে জুমের ফসলের মন উদাস করা ঘ্রাণ। চলার পথে ছোট্ট একটি জুমঘরে খানিকটা সময় জিরিয়ে নেওয়া। মাঝেমধ্যে দূর থেকে দৈত্যাকার গাছের ঘন অরণ্য দেখতে দেখতে অদ্ভুত অনুভূতি দোল দেয় মনে। এরকমভাবে ঘণ্টাখানেক হাইকিং-ট্র্যাক করার পর এক বিশাল খাদের কিনারে গিয়ে থামতে হয়। এবার চিকন চিকন বাঁশের ফাঁক গলে নামতে হবে।
দেখতে এসেছি, দেখতেই হবে। তাই লতাগুল্মের সাহায্যে নেমে যাই। নামলাম তো ঠিকই। কিন্তু এর পরের দৃশ্য আরও ভয়ংকর। অনবরত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় দেড়শ ফুট ওপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি- পাথর আর পাথর। ঝুম বর্ষায় এটাও হয়তো একটা ঝরনার রূপ ধারণ করে। ঠিক ওই জায়গাটা দিয়েই ১০-১২ ফুট নিচে নামতে হবে। একটু এদিক-সেদিক হলেই সাইজ। কী আর করা। দুর্বার দে-ছুট বলে কথা। সঙ্গীদের সাহায্যে রশি বেয়ে নেমে পড়ি। সেইরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। লিখে বোঝানো মুশকিল। বুঝতে হলে যেতে হবে মায়াবী প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘেরা তুয়ারী মারাইং। প্রকৃতি যেমনি মায়াবী, ঠিক তেমনি আবার ভয়ানক প্রতিশোধপরায়ণ। যাক সেসব গুরুগম্ভীর কথা। বরং বাকি অংশের ট্রেইল নিয়ে গল্প করি। তুয়ারী মারাইং ঝরনার দেখা পেতে আর খুব বেশি পথ বাকি ছিল না। যতটুকুই ছিল, শুধু পাথর আর পাথর। দু'পাশে খাড়া উঁচু পাহাড়। এর মাঝ দিয়ে চলছিল আমাদের হাইকিং। প্রাচীন গাছগুলোর ডালপালা এমনভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়েছিল, যে কেউ প্রথম দেখায় ভূতুড়ে বাড়ির প্রান্তর মনে করে থাকবে। ভ্রমণের আনন্দ ঠিক এই জায়গাটাতেই। যেতে যেতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঝরনার দেখা মেলে। তুয়ারী মারাইং ঝরনার রূপ দেখব নাকি এর পরিবেশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখব! কোনটা রেখে কোনটায় দৃষ্টি আটকাব। প্রায় শত ফুট উচ্চতা থেকে ঝরনার পানির ধারা পতনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। মনমাতানো অনবরত ছন্দতোলা রিমঝিম শব্দ। পানি পড়তে পড়তে ঝরনার সামনে খুব সুন্দর ক্যাসকেড তৈরি হয়েছে। যেখানে অবলীলায় সাঁতার কাটা যায়। ঝরনার ডান পাশের পাহাড়ের পাদদেশটা চমৎকার আকৃতির। যেন বিশাল একটি থালা। সম্ভবত এ কারণেই ঝরনার নামটা তুয়ারী মারাইং। তুয়ারী অর্থ কুয়া বা কূপ; মারাইং অর্থ থালা বা বাসন। অর্থাৎ কুয়ার থালা। এটি ত্রিপুরা ভাষার শব্দ। সব মিলিয়ে তুয়ারী মারাইং ঝরনা, পাহাড়ের পাদদেশের ভৌগোলিক আকৃতিসহ এর ট্রেইলটা অসাধারণ সৌন্দর্য বহন করে আছে। যে কোনো ভ্রমণপিপাসু তুয়ারী মারাইং দেখতে গিয়ে আমৃত্যু সুন্দর স্মৃতির ঝুলি নিয়ে ফিরতে পারবে।
কীভাবে যাবেন :ঢাকা-খাগড়াছড়ি রুটে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস চলাচল করে। খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়ি, মাহেন্দ্র বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দীঘিনালা নয়মাইল এলাকার সীমানাপাড়া। মাইতুই বা সীমানাপাড়া থেকে স্থানীয় গাইড পাওয়া যায়।
যেখানে থাকবেন ও খাবেন :খাগড়াছড়ি শহরে মানভেদে বিভিন্ন আবাসিক ও খাবার হোটেল আছে। চাইলে তুয়ারী মারাইং দিনে দিনে দেখে রাতের গাড়িতে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারবেন। া
ছবি :দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
মন্তব্য করুন