ফিলিস্তিনি বাবা আর সিরীয় মায়ের ছেলে গায়াথ আলমাধুন জন্মেছেন ১৯৭৯ সালে, সিরিয়ার দামেস্ক নগরে। আরবি সাহিত্য পড়েছেনে দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে, কবিতা লেখেন আরবিতে; প্রকাশিত কবিতার বই চারটি। তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, সুইডিশ, জার্মান, স্প্যানিশসহ এক ডজনের বেশি ভাষায়। ২০০৮ সাল থেকে সুইডেনে অভিবাসী; এখন বাস করেন জার্মানির বার্লিনে। গায়াথ আলমাধুন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামের অন্যতম অংশগ্রহণকারী হিসেবে এই মুহূর্তে অবস্থান করছেন আইওয়া সিটিতে। একই প্রোগ্রামে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছেন কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম; তিনি কালের খেয়ার পাঠকদের জন্য গায়াথ আলমাধুনের 'দামাস্কাস ওয়াজ মুভিং অ্যাওয়ে' শিরোনামের এই কবিতাটি অনুবাদ করেছেন ইংরেজি থেকে। অনুবাদের সময় কবি'র সহযোগিতা নিয়েছেন।  

দামেস্ক সরে যাচ্ছিল
গায়াথ আলমাধুন

এই কবিতা লিখেছিলাম সেই মেয়েটির জন্য, যাকে আমি ভালোবাসতাম। তারপর আমরা দু'জন দু'দিকে। এখন তার অন্য পুরুষ আছে, আর আমার আছে এই কবিতা।
যখন দামেস্ক ছেড়ে চলে আসি, তখন আমি ছিলাম স্থির আর দামেস্ক সরে যাচ্ছিল। এটা এমন এক ব্যাপার, যা আইনস্টাইন বোঝার চেষ্টা করেছিলেন তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্বে, হুইটম্যান লিভস অব গ্রাসে, আর আমি ফিসফিস করে বলতে চেয়েছিলাম তোমার কানে কানে, যখন তুমি আমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করছিলে।
দামেস্ক সরে যাচ্ছিল আর আমার হৃদয় সযত্নে মুড়িয়ে রাখা হচ্ছিল সুটকেসে; আমার হৃদয়, যা তোমার খুব চেনা, চিৎকার করছিল জর্ডান মরুভূমির নেকড়ের মতো, আর আমি ছুটছিলাম এক পুরোনো ক্ষুধার পিছে, কারণ দামেস্ক আমাকে ফেলে যাওয়ার পর থেকে আর ভালোবাসা জোটেনি আমার; ধৈর্য তো একটা সদ্‌গুণ আর সহায় হতে পারে একমাত্র আল্লাহই।
আমার হৃদয় তোমার খুব চেনা; আমি তাকে শান্ত করতে খেতে দিয়েছিলাম তোমার খসখসে কণ্ঠস্বর, গাজার মেঘ ভরে দিয়েছিলাম তার ভেতরে, আর আমার ত্বক গায়ে দিয়ে বেদুইনটা ঘুরে বেড়াচ্ছিল মরুভূমি জুড়ে উত্তরের আরবদের সঙ্গে। যখন আল্লাহই বলে দিয়েছেন আমি 'ঘুরে বেড়াব প্রতিটা উপত্যকায়', তখন কী করে থিতু হতে পারি বলো? কী করে বাস করতে পারি তোমার বাড়িতে? কী করে থিতু হব আমি যখন 'মাওয়াল' কবিতা চুরি করে নিয়ে যায় আমাকে আমার মায়ের কোল থেকে আর মরণের মতো স্বচ্ছ তোমার কটিদেশ বন্দি করে আমাকে, হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যায় বন্ধুদের মাঝ থেকে, আমি চলি তোমার পিছু পিছু; যেমন করে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে চলে ইমরুল কায়েসের বন্ধুরা, এক দেশ থেকে অন্য দেশে, এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে, পালাই তোমার কাছ থেকে, যেমন করে কেউ পালায় তার ভাইদের কাছ থেকে, মা ও বাবার কাছ থেকে, প্রেমিকা ও ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে?
দামেস্ক সরে যাচ্ছিল, আর আমি ছিলাম স্থির; আমার সুটকেস পালাচ্ছিল আমার আগে, আর আরব বাগ্মিতায় ভরা হৃদয় আমার ছুটছিল ব্যতিব্যস্ত হয়ে, যে হৃদয় তোমার খুব চেনা। রাতে আমি তাকে চাঁদ দেখাব বলে যখনই গুহা থেকে বের করে আনি, সে চিৎকার করে ডাকে তোমার নাম ধরে; কিন্তু শিলার চেয়েও শক্ত আমি, আর আমার হৃদয়, যা তোমার খুব চেনা, কোনো অনুতাপ নেই তার।

বিষয় : অনুবাদ কবিতা গায়াথ আলমাধুন

মন্তব্য করুন