সমকাল: লজিস্টিকস খাতে কী কী প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয় ব্যবসায়ীদের?

কবির আহমেদ: আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পরিধি বাড়লেও সে তুলনায় দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক অবকাঠামো অনেক দুর্বল। লজিস্টিকস খাতের কার্যক্রম সম্পাদনে দক্ষ জনবল নেই। পণ্য জাহাজীকরণে সময় অনেক ব্যয় হয়। এতে রপ্তানিকারকদের খরচ বাড়ে। পরিবহনেও সমস্যা আছে। লজিস্টিকস খাতের কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় অনেক সংস্থা যুক্ত। নীতিগত কিছু সমস্যা রয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের হয়রানি বাড়ায়। বন্ডেড ওয়্যারহাউসের স্বল্পতা রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘ যানজটে লজিস্টিকস ও ফ্রেইট খাতের ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়ে।

সমকাল: লজিস্টিকস খাতের দুর্বলতায় কোন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়?

কবির আহমেদ: রপ্তানিমুখী সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎপাদন থেকে শুরু করে পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত পুরো সরবরাহ চেইনে লজিস্টিকস সহায়তা লাগে। একইভাবে আমদানি করা পণ্য খালাস থেকে শুরু করে কারখানা পর্যন্ত লজিস্টিকস খাত যুক্ত। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। এ খাতের রপ্তানিতে বন্দরে লজিস্টিকস সহায়তা বেশি প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানির কনটেইনারের জন্য ১১ দিন এবং রপ্তানির কনটেইনারের জন্য চার দিন অপেক্ষা করতে হয় ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে বিমানবন্দরেও আমদানি করা পণ্য নিয়ে কাস্টমসে নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। মোট কথা, লজিস্টিকস খাতের দুর্বলতায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সমকাল: লজিস্টিকস খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে?

কবির আহমেদ: এ খাতের উন্নয়নে কোনো জাতীয় নীতিমালা নেই। সরকারি ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ খাতে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও ২০টিরও বেশি সরকারি সংস্থা আলাদাভাবে নীতি ও প্রবিধান নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, পরিকাঠামো পরিচালনা এবং সেবা দিচ্ছে। সব কাজ এক সংস্থার অধীনে রাখা দরকার। বন্দরে রপ্তানির মতো আমদানি পণ্য ডেলিভারির ব্যবস্থা বাইরে করা দরকার। বর্তমানে ৩৮ ধরনের পণ্য শুধু বন্দরের বাইরে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে খালাস করা বাধ্যতামূলক। এটা পুরোপুরি বাইরে সরিয়ে নেওয়া দরকার। এ জন্য বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। এই খাতেও নীতি-সহায়তা দেওয়া দরকার।

সমকাল: এ খাতে সরকারের কী ধরনের সহায়তা দরকার?

কবির আহমেদ: সড়ক ও রেলপথে ব্যাপক উন্নয়ন দরকার। সবচেয়ে বেশি দরকার বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি। বড় জাহাজ পরিচালনার জন্য সক্ষমতা ও দক্ষ জনবল দরকার। সংযোগ সড়ক বাড়াতে হবে শিল্প-কারখানা এলাকাগুলোতে। প্রযুক্তিগত সেবা বাড়ানোর প্রতি জোর দিতে হবে। টেকসই এবং সাশ্রয়ী সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পাদনে খরচ, সময় ও জটিলতা কমাতে হবে। বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে আগামী দুই দশকে রপ্তানির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে।

সমকাল: আইসিডি ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ড খাতে কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে?

কবির আহমেদ: আইসিডি খাতকে অনেক সংস্থার দ্বারস্থ হতে হয়। এলোমেলো এ খাতটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা দরকার। ফ্রেইট ফরওয়ার্ড খাতে লাইসেন্স পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শিপিং লাইনে জটিলতা রয়েছে। নেই কোনো বন্ডেড ওয়্যারহাউস। ফ্রেইট ফরওয়াডর্কে অত্যাবশ্যকীয় শিল্প খাত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।

সমকাল: বিমানবন্দরে কী সমস্যা রয়েছে?

কবির আহমেদ: বিমানবন্দরে কোনো পেশাদার স্ক্যানার নেই। স্ক্যানাররা দুই মাস পরপর কাজ বন্ধ করে দেয়। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে সমস্যা আছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান চলাচল, কাস্টমস ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় করা দরকার।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসিম উদ্দিন বাদল