পান গাছের পাতাকে পান বলা হলেও মূলত পানের সঙ্গে সুপারি, চুন ও নানা রকমের জর্দা (তামাক জাতীয় দ্রব্য), খয়ের ইত্যাদি একসঙ্গে খাওয়াকে বোঝায় পান খাওয়া। অনেকে নেশার মতো পান খান। পানের সঙ্গে আর যেসব মিশিয়ে খাওয়া হয়- যেমন বিভিন্ন ধরনের জর্দা ও চুনে ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে।

টারফেনলস নামক উপাদানের উপস্থিতির কারণে পান খাওয়ার কারণে ঠোঁট ও জিহ্বায় লাল দাগ পড়ে। পানের সঙ্গে যে চুন খাওয়া হয়, সেটি হলো ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড। এই চুন দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। চুনে রয়েছে প্যারা-অ্যালোন-ফেনল, যা মুখে আলসার বা ঘা সৃষ্টি করার মাধ্যমে জিহ্বার স্বাদ নষ্ট করে দিতে পারে। এ আলসার ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। জর্দা হলো তামাক জাতীয় এক ধরনের নেশাজাত দ্রব্য, এই অখাদ্য বস্তুটি সমাজের অনেক মানুষই পানের সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। অনেকেই আবার এক বিচিত্র পদ্ধতিতে পান সেবন করে থাকেন।

পান খাওয়ার এক পর্যায়ে চূর্ণবিচূর্ণ পানের কিছু অংশ গালের এক পাশে রেখে আবার কিছুক্ষণ পর খেতে দেখা যায় অনেকটা জাবরকাটার মতো। বয়স্ক মহিলাদের কেউ কেউ এভাবে পান গালের এক পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। এদের ক্ষেত্রে মুখের ভেতরে গালের এক পাশে আলসারসহ ক্যান্সার পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের আইএআরসির গবেষকদের মতে, যাঁরা তামাকজাতীয় দ্রব্যাদি জর্দা, চুন, কাঁচা সুপারি, খয়ের দিয়ে পান খান, তাদের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় 'ওরাল ক্যান্সার' হওয়ার আশঙ্কা প্রায় পাঁচ গুণ বেশি! সমীক্ষায় জানা গেছে, আমাদের এ অঞ্চলে অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় পান, জর্দা খাওয়ার প্রচলন অনেক বেশি। ফলে বিশ্বের মোট 'মুখ এবং মুখ গহ্বরের ক্যান্সার'-এ আক্রান্ত রোগীর ৫৮ শতাংশই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রয়েছে।

অনেক সময় দেখা যায়, পান-কাঁচা সুপারি খাওয়ার পর হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দেয় কারও কারও। কাঁচা সুপারি এ ক্ষেত্রে উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। কাঁচা সুপারিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার সাইকোঅ্যাকটিভ এলকালয়েড। এ কারণেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কাঁচা সুপারি চিবালে শরীরে গরম অনুভূত হয়। এমনকি শরীর ঘেমে যেতে পারে, এমনকি হাইপারটেনশন বা রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এটির কার্যক্ষমতা এতটাই বেশি, নিকোটিন এবং অ্যালকোহলের পাশাপাশি কাঁচা সুপারিকেও বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানসিক বিভ্রমকারী মাদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

দীর্ঘমেয়াদে চুনসহ পান-কাঁচা সুপারি খেলে মুখের ভেতরে গালে সাদা সাদা ছোপ দেখা যায়, সেগুলো পরে শক্ত হয়ে স্থায়ী হয়ে যায় (ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস) এবং এই অবস্থাকে ক্যান্সারের পূর্বাবস্থা বলা হয়ে থাকে।

সুতরাং, মুখের ভেতরে গালে সাদা বা লাল ছোপ ছোপ দাগ দেখা দিলেই দেরি না করে অবশ্যই নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। আমরা যদি শুরু থেকে মুখ এবং মুখ গহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি তাহলে ক্যান্সারের সংক্রমণ পুরোটা না হলেও অর্ধেকটা কমিয়ে আনতে পারব আর এর জন্য চাই জনসচেতনতা। 
[নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন]