- ফিচার
- হরমোনজনিত বিভিন্ন সমস্যা
হরমোনজনিত বিভিন্ন সমস্যা

মিতু ২৪ বছরের তরুণী। এসেছিলেন ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে বলে। তিনি খুবই হতাশ যে তাঁর অল্প বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে এবং ওজন কমানোর চেষ্টা করার পরও ওজন কমছে না। রোগীর রোগের ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে- তাঁর পিরিয়ড অনিয়মিত এবং মুখে পুরুষালি পশম আছে; শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ঘাড়ে, বগল ও হাতের কনুইয়ের সামনে ত্বক কালো ও মোটা হয়ে যাচ্ছে। এসব লক্ষণ দেখেই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলাম।
তাতে তাঁর পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) রোগ শনাক্ত হয়। এটি একটি জটিল কিন্তু খুবই কমন হরমোনজনিত সমস্যা। এতে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য থাকে, যা একটি পুরুষ হরমোন, যেটা নির্দিষ্ট মাত্রায় নারীর দেহেও থাকে। এই অ্যান্ড্রোজেন বৃদ্ধির ফলে মুখ ও শরীরের অন্যান্য জায়গায় অবাঞ্ছিত পশম হয় এবং ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট হয়। ইনসুলিন হরমোনের অকার্যকারিতাও পিসিওএসের অন্যতম আরেকটি কারণ। এই ইনসুলিন হরমোনের অকার্যকারিতার জন্য দেহে বিভিন্ন রকমের জটিলতা দেখা যায়, যেমন ওজন বৃদ্ধি, রক্তে চর্বির আধিক্য, লিভারে চর্বি জমা, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি, গর্ভপাত ইত্যাদি।
এ রোগের রোগীরা বহুমুখী লক্ষণের জন্য বিভিন্ন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। এতে অনেক সময় অপচিকিৎসার শিকার হন। মিতু অনিয়মিত মাসিকের জন্য বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ সেবন করেছেন এবং ওজন কমানোর জন্য ওষুধ খেয়েছেন কিন্তু কাজ হয়নি। এখানে রোগ শনাক্তের পাশাপাশি সঠিক ও সর্বাঙ্গীণ চিকিৎসা প্রয়োজন। সঠিক জীবন ব্যবস্থাপনা মেনে চলা খুবই জরুরি। মিতু ওজন কমানোর জন্য ওষুধ খেয়েছেন বটে কিন্তু জীবন ব্যবস্থাপনা তেমন একটি মেনে চলতেন না। মনে রাখতে হবে পিসিওএস একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ।
শুধু সঠিক জীবন ব্যবস্থাপনা মেনে চললে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এর অধিকাংশ জটিলতা এড়ানো সম্ভব। মিতু শুধু তাঁর জীবনযাত্রার ধারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিচালনা করতে পারলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। শুধু তাই নয় তাঁর পিরিয়ডও নিয়মিত হয়ে যেত। এছাড়া লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা নিলে অন্যান্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। কিন্তু যেহেতু মিতুর ইতোমধ্যে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, এখন তাঁকে ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রিত রাখলে পরবর্তী ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে পারবেন।
মিতু অবিবাহিত এবং ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে ভেবে শঙ্কিত। তাঁর ধারণা ঠিক নয়, আবার অগ্রাহ্য করার মতো নয়। তিনি যদি সঠিক লাইফস্টাইল এবং সুচিকিৎসা নেন এ সমস্যাও সমস্যা হিসেবে থাকবে না। সুতরাং রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকলে অপচিকিৎসার সম্মুখীন হতে হবে না। বিলম্বিত চিকিৎসা বা অপচিকিৎসা বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি করে। যেমন বন্ধ্যত্ব, গর্ভপাত, জরায়ু ক্যান্সার, বিষণ্ণতাসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা।
[সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা]
মন্তব্য করুন