দুর্গাপূজা মানেই কবজি ডুবিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ। এ দিনে মাছ, মাংস, মিষ্টি সবই থাকে পাতে। দশমীর দিনে ঘরেই রান্না করে ফেলুন ভিন্ন স্বাদের খাবার। রেসিপি দিয়েছেন আলিফ রিফাত। ছবি তুলেছেন সৈয়দ আমিনুর রহমান আজম
মাছের মাথার কালিয়া
উপকরণ :কাতলা মাছের মাথা ৫০০/৬০০ গ্রাম ওজনের ১টি, আদা বাটা ২ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ কাপ, বেরেস্তা ১ কাপ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়া আধা চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ, কিশমিশ ১ টেবিল চামচ, এলাচ ২/৩টি, দারুচিনি ২/৩টি, লং ২/৩টি, আস্ত জিরা ১ চা চামচ, শুকনা মরিচ ৪টি, তেজপাতা ২/৩টি, কাঁচামরিচ ৪/৫টি, ফেটানো টক দই আধা কাপ, টমেটো ১ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ভাজার জন্য পরিমাণমতো, ঘি ১ কাপ।
প্রণালি :সামান্য হলুদ লবণ মাখিয়ে মাছের মাথা সোনালি করে ভেজে নিন। কড়াইয়ে ঘি দিয়ে জিরা, তেজপাতা, শুকনা মরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লংয়ের ফোড়ন দিতে হবে। সুগন্ধ বের হলে আদা, পেঁয়াজ, রসুন বাটা, টক দই দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। মসলার কাঁচা গন্ধ দূর হলে টমেটো দিয়ে আবার ভালো করে কষাতে হবে। কষানোতে অল্প অল্প গরম পানি ব্যবহার করুন। ঘি মসলার ওপরে চলে এলে ১ মগ গরম পানি দিন। ঝোল ফুটে উঠলে মাছের মাথা দিয়ে ফুল আঁচে রান্না করুন ৫ মিনিট। এর পর আঁচ কমিয়ে দিন। ঝোল কমে যখন মাখো মাখো হবে, তখন গরম মসলা দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।

খাসির কষা মাংস
উপকরণ :খাসির মাংস ১ কেজি, হলুদ বাটা ১ চা চামচ, ধনে বাটা আধা চা চামচ, আদা বাটা দেড় চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, ছোট এলাচ ৫/৬টি, বড় এলাচ ২টি, দারুচিনি ৩ টুকরা, লং ৫/৬টি, শাহি গরম মসলা ১ চা চামচ, তেজপাতা ২/৩টি, টক দই আধা কাপ, শুকনা মরিচ ৪/৫টি, কাঁচামরিচ ৫/৬টি, (কাঁচামরিচ ৪/৫টি + রসুন কোয়া বড় ৩/৪টি একসঙ্গে থেঁতো করে রাখতে হবে), বেরেস্তা ১ কাপ, তেল আধা কাপ, ঘি আধা কাপ, চিনি ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি :হলুদ গুঁড়া, শাহি গরম মসলা, লবণ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ বাটা দিয়ে মাংস ম্যারিনেট করে রাখুন ৮ ঘণ্টা। হাঁড়িতে সরিষার তেল দিয়ে তাতে শুকনা মরিচ, তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি, লং দিয়ে ফোড়ন দিন। ফোড়নের সুগন্ধ বের হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে সোনালি রং করে ভাজুন। এতে কাঁচামরিচ ও রসুন থেঁতো দিয়ে আবার ভাজুন। একটি বাটিতে চিনি, পরিমাণমতো লবণ, ১ টেবিল চামচ ঘি, জিরা, ধনে, ১০০ গ্রাম টক দই সামান্য পানি দিয়ে ফেটিয়ে ভাজা পেঁয়াজে দিয়ে আবার কষান। এবার ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। এ সময় মাংস থেকেই পানি উঠবে, তাই বেশি পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পানি শুকিয়ে এলে ১ কাপ গরম পানি দিয়ে মাংস সিদ্ধ করতে হবে। ঝোল কমে মাংস সিদ্ধ হলে আস্ত কাঁচামরিচ আর ঘি দিয়ে মাংস নামিয়ে ফেলুন। গরম ভাত, পরোটা, লুচি কিংবা পোলাও-খিচুড়ির সঙ্গে এই কষা মাংস খেতে অনন্য।

নারকেলের চাটনি
উপকরণ : নারকেল কোড়া আধা কাপ, ভাজা সাদা তিল ২ টেবিল চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, তেঁতুলের টক ৩/৪ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৩/৪টি, চিনি-লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ২/৩টি, সরিষা আধা চা চামচ।
প্রণালি : নারকেল, তিল, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা একসঙ্গে বেটে নিন। কড়াইয়ে তেল দিয়ে শুকনা মরিচ ও সরিষার ফোড়ন দিন। এর পর বাটা উপকরণ, লবণ, চিনি, তেঁতুলের টক দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। থকথকে হলে নামিয়ে ফেলতে হবে।

ছানার পোলাও
উপকরণ :বাসমতী চাল ২৫০ গ্রাম, পনির ২০০ গ্রাম, ঘি ১ পোয়া, কিশমিশ ১৫ গ্রাম, পেস্তাবাদাম ১৫ গ্রাম, কাঠবাদাম ১৫ গ্রাম, খোয়া ক্ষীর ১৫ গ্রাম, শুকনা মরিচ ৩টি, দুধে ভিজানো জাফরান ১ চিমটি, গোলাপজল ১ টেবিল চামচ, চিনি ১ চা চামচ, আস্ত ছোট এলাচ ২/৩টি, দারুচনি ১/২ টুকরো, লং ৩/৪টি, শুকনা মসলা ১ চা চামচ, আখনির পানি বা মসলার স্টক ১০০ গ্রাম, তেজপাতা-লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি :আখনির পানি বা মসলার স্টকের জন্য শাহি জিরা ৭ গ্রাম, সাদা গোলমরিচ ৭ গ্রাম, আদা ১৫ গ্রাম, তেজপাতা ২টি, লং ২/৩টি, শুকনা মরিচ ১টি, দারুচিনি ১ টুকরা, ছোলার ডাল ৩০ গ্রাম একটি পাতলা কাপড়ে রেখে পুঁটলি বানিয়ে ৭০০ গ্রাম পানিতে মৃদু আঁচে জ্বাল দিয়ে ১০০ গ্রাম আখনি বা মসলার স্টক বানিয়ে নিতে হবে। ফাকি মসলার জন্য শাহি জিরা, সাদা গোলমরিচ, দারুচিনি ৩ টুকরো, লং ৬/৭টি, এলাচ ৬টি জয়ফল অর্ধেকটি একসঙ্গে গুঁড়ো করে চেলে নিতে হবে। এবার চাল প্রস্তুতের পালা। বাসমতী চাল ভালোমতো ধুয়ে ২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার ১৫ গ্রাম লবণ ১ কেজি পানিতে দিয়ে ফুটান। ফুটে উঠলে চাল দিয়ে আধা সিদ্ধ করে নিতে হবে। ভালোমতো চালুনিতে পানি ঝরিয়ে ঝরঝরে করে নিন। ছানা ডুমো করে কেটে ৩টি মরিচ সামান্য লবণ দিয়ে পেস্ট করে সেই ছানাতে মেখে ঘিয়ে ভেজে নিন। কিশমিশ, বাদাম, পেস্তা, খোয়া ক্ষীর ও ঘিয়ে ভেজে নিন। রান্না করা ভাতে ১ চা চামচ ফাকি মসলা, ভাজা কিশমিশ, বাদাম, পেস্তা, আস্ত মসলা, চিনি ভাজা খোয়া ক্ষীর গুঁড়া করে মেশান। একটি ভারী তলাবিশিষ্ট পাত্রে তেজপাতা বিছিয়ে তাতে মসলা মাখানো চাল এক স্তর দিতে হবে। এরপর ভেজে রাখা পনির দিয়ে আবার চাল দিন। এবার গোলাপ জল ও জাফরান আর আখনির পানি দিন। এবার ভালো করে পাত্রটি ঢেকে কাঠকয়লায় দম দিন ১৫ মিনিট। তেজপাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।
উৎস :প্রজ্ঞা সুন্দরী দেবী (কবিগুরুর ভাতিজি)