দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপূজা। আর মাত্র কয়েকটা দিন। এই সময়ের সাজগোজ নিয়ে নিশ্চয় দুশ্চিন্তার ভাঁজ কপালে ঠেকেছে। একে তো গরম আবহাওয়া, তার ওপর হুটহাট বৃষ্টির ধাঁচ। মেকআপ পানিরোধী হবে, নাকি ন্যাচারাল- তা ভাবনারই বটে। তাই তো নন্দিতা রূপবিশেষজ্ঞ ও মেকআপশিল্পীর পরামর্শ নিয়ে কীভাবে সাজবেন তার পরিকল্পনা করছেন। ষষ্ঠী ও সপ্তমীর সাজে থাকা চাই স্নিগ্ধতা। নবমীতে একটু ভিন্নতা এনে দিতে পারে স্বস্তি। দশমীতে তো গর্জিয়াস লুকটাই চাই। এমন পরামর্শ দিয়েছেন জেআর মেকওভার বাই জুয়েল রানা পেজের স্বত্বাধিকারী ও মেকআপশিল্পী জুয়েল রানা। ষষ্ঠী থেকে দশমীর সাজ কেমন হবে, তা জানিয়েছেন তিনি।
বেস যেমন হবে :ষষ্ঠীতে শুরু হয় পূজা। এ দিনে স্নিগ্ধ থাকতে হালকা মেকআপ করতে পারেন। ঝটপট তৈরি হতে বিবি ক্রিম, ফেস পাউডার লাগিয়ে নিতে পারেন। ষষ্ঠী-অষ্টমীতে কুর্তি, ওয়ান পিস, স্কার্টের সঙ্গে টপস বা এই ধরনের পোশাক পরা হয়। এসব পোশাকের সঙ্গে মেকআপ করতে গেলে বেস হালকা রাখতে পারেন। এতে দেখতে ন্যাচারাল লাগবে। নয়তো মনে হবে খুব বেশি কিছু করা হয়েছে। নয়তো গরমে ও ঘামে বেস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। হালকা বেসের ওপর হালকা ব্লাশন বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। অল্প হাইলাইটার দেওয়া যেতে পারে। এড়িয়েও যেতে পারেন। এমনভাবে বেস করতে হবে যেন দেখতে সতেজ মনে হয়। নবমী-দশমীর দিনে বেস ন্যাচারাল রাখলে ভালো লাগবে। খুব ভারী বেস করলে ক্র্যাক পড়ে অনেক জায়গায়। লিকুইড ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস করা হলে অনেক সময় পর্যন্ত ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। এতে নিজের কাছেই নিজেকে ভালো লাগবে। অন্যরাও মনে করবে নন-মেকআপ লুক। দশমীতে লাল-সাদা শাড়ি পরার ট্র্যাডিশন অনেক আগে থেকে। লাল-সাদা তো পরতেই পারেন যে কেউ। চাইলে লাল-সাদার পরিবর্তে কমলা শেডের শাড়ি কিংবা দুর্গার প্রতিকৃতি-জবা ফুল-পদ্ম ফুল অথবা শঙ্খ আঁকা আছে এমন শাড়ি বেছে নেওয়া যেতে পারে। দশমীতে সিঁদুর খেলা হয়। এতে মুখ লাল হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে এই দিনে মেকআপের বেস একটু ভারী করা যেতে পারে। যেমনটা আপনার ইচ্ছে, ঠিক তেমনভাবেই সাজুন।
চোখের সাজ :সপ্তমী ও অষ্টমীতে দিনের বেলায় প্রোগ্রাম হয়। পূজা শুরুর দিন থেকে নবমী পর্যন্ত চোখ যতটা ন্যাচারাল রাখা যায়, ততই ভালো হবে। চোখের পাতায় চিকন করে আইলাইনার এবং নিচে হালকা করে কাজল লাগিয়ে নিন। ষষ্ঠী থেকে নবমীতে ব্রাউন ন্যুড চোখের সাজ দিতে পারেন। নবমীতে শাড়ি পরলে সেই শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে চোখে গ্লিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। ন্যাচারাল আইল্যাশ পরা যেতে পারে। চোখে আইলাইনার ও মাশকারা দিলে চোখ টানা টানা লাগবে। এই দিনে বেশি মোটা করে চোখ সাজানোর দরকার নেই। বেশি মোটা করে চোখ সাজালে নাচের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এমনটা মনে হবে। দশমীর দিনে চোখের সাজ ভারী হলেও ক্ষতি নেই। স্মোকি আই লুকটা এদিন মানিয়ে যাবে। চোখে টানা করে আইলাইনার দিতে পারেন। অনেকে বিজয়া দশমীতে দুর্গার লুক নিতে চান। শাড়ি ও সাজের সঙ্গে মিলিয়ে মাথায় শোলার চূড়া কিংবা মুকুট পরতে পারেন।
ভ্রু ঘন করি :যাঁরা সাজতে ভালোবাসেন, তাঁরা ভ্রু যুগলও সাজাতে পছন্দ করেন। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য ভ্রু এঁকে নিতে পারেন। ভ্রুতে একটু জেল দিয়ে বুশি করে নেওয়া যেতে পারে।
ঠোঁটের সাজ :লিপস্টিক ছাড়া সাজটাই অপূর্ণ রয়ে যাবে। নিজেকে স্নিগ্ধ রাখতে হালকা, ন্যুড, ন্যুড ব্রাউন কিংবা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিতে পারেন। নবমী ও দশমীর দিনে লাল রঙের বিভিন্ন শেডের লিপস্টিক দিতে পারেন। শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ঠোঁট সাজালে অনন্যা লাগবে সন্দেহ নেই।
নখের সাজ :শুধু মুখ সাজালে কি আর হবে? সাজাতে হবে হাত-পায়ের নখগুলোও। এ ক্ষেত্রে পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে যে কোনো নেইলপলিশ ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া ভিন্নতা আনতে চাইলে ন্যুড কালারের নেইলপলিশ লাগাতে পারেন। নবমী ও দশমীতে শাড়ির রঙের সঙ্গে মিল রেখে লাল, কমলা কিংবা এই ধরনের শেডের নেইলপলিশ ব্যবহার করলে নখের সৌন্দর্য বাড়বে। চাইলে নখে রঙিন আঁকিবুঁকি করে নিতে পারেন। নখে সাদা রঙের নেইলপলিশ বুলিয়ে নিন। তারপর এর ওপর লাল-কমলা বা অন্য রঙের নেইলপলিশ কিংবা নেইল পেইন্ট দিয়ে নখ সাজাতে পারেন। রাতের প্রোগ্রামে যাওয়ার আগে কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার আগে নখে স্টোন বসাতে পারেন।
চুল বাঁধব কি বাঁধব না :ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত যেহেতু টপস, সিঙ্গেল কামিজ, সালোয়ার-কামিজ পরা হয়- এ সময় চাইলে চুল ছেড়ে রাখতে পারেন। তবে অন্যদের চেয়ে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চাইলে কামিজ ও টপসের সঙ্গে খোঁপা করতে পারেন। এতে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে পূজা দেখার সময় গরম কম লাগবে। খোঁপায় শিউলি, বেলি কিংবা গাজরার মালাও পরতে পারেন। টপস ও স্কার্টের সঙ্গে এ ধরনের স্টাইল বেশ মানাবে। এ ছাড়া চুলের একপাশে টুইস্ট করে অন্যপাশ ছেড়ে রাখলেও মন্দ লাগবে না। নবমীর দিনে শাড়ি পরলে চুল খোলা রাখতে পারেন। দুই পাশের চুল ঢেউখেলানো কিংবা কার্ল করে নিলে বেশ মানাবে। শাড়ির সঙ্গে এমন হেয়ার স্টাইল আপনার লুক বদলে দেবে। দশমীর দিনে কুচিবিহীন এক প্যাঁচে শাড়ি পরা হয়। একে বাঙালি স্টাইলে শাড়ি পরা বলা হয়। এমন স্টাইলে শাড়ি পরলে চুল ছেড়ে রাখতে পারেন কিংবা মাঝবরাবর সিঁথি করে সামনের দিকে টুইস্ট করে পেছনে খোঁপা করতে পারেন। খোঁপায় পরে নিতে পারেন রজনীগন্ধা অথবা গাজরা।