- ফিচার
- ট্র্যাজেডি থেকেই প্রেরণা
ট্র্যাজেডি থেকেই প্রেরণা

জেমস নাখট্ওয়ে জন্ম : ১৪ মার্চ ১৯৪৮; যুক্তরাষ্ট্র
জেমস নাখট্ওয়ে। দু'বার 'ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো' অ্যাওয়ার্ড ও পাঁচবার 'রবার্ট ক্যাপা গোল্ড মেডেল' জয়ী আমেরিকান ফটোজার্নালিস্ট। কিংবদন্তি এই ওয়ার ফটোগ্রাফারের সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন জসিম উদ্দিন আকাশ
কলেজের পাঠ চুকিয়ে মার্চেন্ট মেরিনে যোগ দিয়েছিলাম। এরপর নানা অড-জব করার ফাঁকে শিখে নিই ফটোগ্রাফি। তারপর? ত্রিশ বছরেরও বেশিকাল ধরে ছুটে বেড়াচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে যুদ্ধমুখর নানা প্রান্তে; উত্তর আয়ারল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিদ্রোহ থেকে শুরু করে, এলসালভাদর, বলকান ও রুয়ান্ডার কিলিংজোন পর্যন্ত মানুষের অশেষ দুর্ভোগ ও অন্ধকার দিকগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে নথিভুক্তর স্বপ্ন নিয়ে।
হয়তো ফেরা হবে না আর
যেখানেই যাই, জেনে যাই- হয়তো ফেরা হবে না আর। বহুবারই এমনটা ঘটেছে- ঠিক আমার পাশের লোকটা হয়েছে গুলিবিদ্ধ, গেছে মরে; অথচ সৌভাগ্যক্রমে বুলেট আমার ঠিকানা পায়নি। একবার আমার ঠিক কয়েক ফুট পাশেই এসে আছড়ে পড়েছে একটা রকেট; কিন্তু কেন যেন বিস্ম্ফোরণ ঘটেনি সেটির! যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস হওয়ার সময় আমি দাঁড়িয়েছিলাম সেটির নর্থ টাওয়ারের ঠিক নিচে। কী করে যেন সে যাত্রাও বেঁচে গেছি! নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে, অনেক ট্র্যাজেডি চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি আমি। তার কোনোটার স্মৃতিই উধাও হয়নি মন থেকে। বরং সেগুলো থেকে প্রেরণা নিয়েই প্রতিনিয়ত সামনে বাড়াতে থাকি পা।
ক্যামেরার মাধ্যমে জোগান
ইরাকে তখন যুদ্ধ চলছে। গ্রেনেড বিস্ম্ফোরণে মারাত্মক আহত আমি বিশ্বাস রেখেছিলাম বেঁচে যাওয়ার। স্টোরিটার গুরুত্ব ছিল অনেক। কেননা, নিজ দেশের সামরিক সেনাদের এই আত্মবিসর্জনকে যেন আমার দেশের মানুষ সম্মান জানাতে ও শনাক্ত করতে পারে এবং ধরতে পারে যুদ্ধের আসল ক্ষতি ও তুলতে পারে এটির ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন- সেই রসদ ক্যামেরার মাধ্যমে জোগান দেওয়ার দায় ছিল আমার।
বিপজ্জনক ভূখণ্ডের সঙ্গে বোঝাপড়া
বাস্তব সময়ের অলিখিত ও অনির্দেশ্য ইতিহাসকে ছবিতে ধারণ করি আমি। ফলে এটি অজানারই এক আবিস্কার। তাই এ কাজে অকপটতা ও চিরন্তন সচেতনার প্রয়োজন। হাজারো বাধাবিপত্তি আর বিপজ্জনক ভূখণ্ডের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হয় আমায়। প্রতি মুহূর্তেই করতে হয় সামনে হাজির হওয়া ঘটনাকে ধারণ এবং সেটিকে দ্রুততার সঙ্গে বিশ্নেষণ। অনেক সময় সেটি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণকে হাজির করে দেয়। সচেতনতা ছাড়া কোনো কিছুই বদলায় না। এটিই আমাদের সামাজিক প্রক্রিয়া। আর এটি নিঃসন্দেহে প্রভাববিস্তারী।
ফটোগ্রাফিকে একেবারেই প্রচলিত ও ভিত্তিগত রূপে হাজির করার চেষ্টা থাকে আমার। আর সেটিই আমার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে নিজেকে
প্রতিনিয়ত নিয়োজিত করি। জেনারিক ইমেজ বানাতে চাই না।
মন্তব্য করুন