
ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। এটিকে বলা হয় দেশের লাইফলাইন। বন্দর সচল থাকলে ঘোরে অর্থনীতির চাকা। অচল হলে নেমে আসবে ঘোর অমানিশা। গুরুত্বপূর্ণ এমন স্থাপনার নিরাপত্তা কতটা সুরক্ষিত আছে- তা নিয়ে লিখেছেন সমকাল চট্টগ্রাম বিভাগের রিজিওনাল এডিটর সারোয়ার সুমন
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চলছে পাঁচ ত্রুটি নিয়ে। বছরে সাড়ে ৩২ লাখ কনটেইনার ওঠানামা করা চট্টগ্রাম বন্দরে নেই পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা। নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী। বাইরে থেকে ধার করে আনা আনসার সদস্য পালন করছেন নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব। বন্দরের ১২টি গেটসহ গুরুত্বপূর্ণ ২০টি স্থানে স্ক্যানার দরকার হলেও আছে মাত্র সাতটি। রেডিওঅ্যাক্টিভ পোর্টাল মনিটরও (আরপিএম) আছে চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ। সংকট আছে দক্ষ জনবলেরও। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্য শুল্ক্কায়নের দায়িত্বে থাকে কাস্টমস। অথচ সেই কাস্টমসের সঙ্গেও বন্দরের আছে সমন্বয়হীনতা। এসব কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট আমদানি করা পণ্যের মাত্র ১৪ শতাংশ এখন শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করতে পারছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২১ সালেও ১৫ লাখ একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার বিদেশে গেছে স্ক্যানিং ছাড়াই। এর ফলে বিপজ্জনক, নিষিদ্ধ ও অবৈধ পণ্য রপ্তানির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। থেকে যাচ্ছে খালি কনটেইনারে ফের মানুষ চলে যাওয়ার ঝুঁকিও।
এদিকে সংকটের সুযোগ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসছে অস্ত্র ও মাদকের চালান। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দরের একটি খালি কনটেইনারে করে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মালয়েশিয়ায় চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর আগেও একাধিকবার চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা কনটেইনার যথাযথভাবে পরীক্ষা না করায় সিঙ্গাপুর ও ভারতে চলে গেছেন একাধিক ব্যক্তি। অথচ বন্দরের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে পণ্য স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। উদ্যোগ নেওয়ার এক যুগ পরও আমদানি ও রপ্তানি পণ্য শতভাগ স্ক্যান করা যাচ্ছে না। নিরাপত্তা ঝুঁকিও কমছে না দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান সম্প্রতি সমকালকে বলেন, 'গত ১০ বছরে আধুনিক ৩৯০টি সরঞ্জাম যুক্ত হয়েছে বন্দরের বহরে। অপারেশনাল কাজে আনা হয়েছে রেকর্ডসংখ্যক কি গ্যান্টিক্রেন ও স্ট্যাডল ক্যারিয়ার। আরও শতাধিক যন্ত্রপাতি আছে পাইপলাইনে। সম্প্রতি খালি কনটেইনারে মানুষ যাওয়ার যে বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে, তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানায়নি কেউ।'
বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, 'কনটেইনারে যাঁর মরদেহ পাওয়া গেছে, তিনি চট্টগ্রাম থেকে গেছেন কিনা বা বাংলাদেশি নাগরিক কিনা- এ বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নই। বন্দরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে।'
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) মেজর ওয়াহিদুল হক বলেন, 'নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমরা বন্দর ব্যবহারকারী প্রায় এক লাখ ৫২ হাজার মানুষের ডাটাবেজ তৈরি করেছি। ৮৩ হাজার গাড়ির চালক-হেলপারের তথ্যও যুক্ত করেছি আমরা ডাটাবেজে। বেশ কিছু নিরাপত্তারক্ষী নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তবে স্ক্যানারের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি শুল্ক্ক আদায়কারী কর্তৃপক্ষের। এটির সংখ্যা বাড়াতে আমরা একাধিকবার তাদের তাগাদা দিয়েছি। এখন আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে দুটি নতুন স্ক্যানার কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।'
পোর্ট ইউজার্স ফোরাম ও চিটাগং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'বন্দর ও কাস্টমসের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে। এটি দূর করা দরকার। নিরাপত্তার ব্যাপারেও উভয় প্রতিষ্ঠানকে আরও মনোযোগ বাড়াতে হবে।'
পদে পদে নিরাপত্তা ঝুঁকি
বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলামের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সংরক্ষিত এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকার কথা দেড় হাজার। আছে এক হাজার ৪৮টি। সিসিটি ইয়ার্ডে বছরে সাত লক্ষাধিক কনটেইনার ওঠানামা হলেও ক্যামেরা আছে প্রয়োজনের দুই-তৃতীয়াংশ। নর্থ কনটেইনার ইয়ার্ড, কার্গো ফ্রেইট সার্ভিস শেড ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালেও নেই পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা। বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে এক সমীক্ষা রিপোর্টে সংরক্ষিত এলাকার চারশ পয়েন্টে দেড় হাজার নিরাপত্তারক্ষী প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করা হয়। আছেন মাত্র ৬০০ জন। বাইরে থেকে আনসার সদস্য ধার করে এখন সংরক্ষিত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এমন আনসারের সংখ্যা এক হাজার ১০০ জন। শৃঙ্খলা নেই চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতেও। কনটেইনার খুলে পণ্য খালাস হওয়ায় প্রতিদিন সাড়ে সাত হাজার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি প্রবেশ করে বন্দরের জেটিতে। নিরাপত্তার স্বার্থে এ কাজটি বন্দরের বাইরে করতে বলে আইএসপিএস কোড মনিটরিং কমিটি। সেই বিকল্প এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি ফের সামনে এলো যেভাবে
মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দরে একটি খালি কনটেইনার থেকে মানুষের মরদেহ পাওয়ার খবর আসে গত ১৪ অক্টোবর। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু না জানালেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যাওয়া 'এমভি সোয়াসদি আটলান্টিক' জাহাজের খালি কনটেইনারে পাওয়া গেছে মৃতদেহ। এ বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দরকে জানিয়েছে স্থানীয় শিপিং এজেন্ট গ্লোব লিংক অ্যাসোসিয়েটস। তারা দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সিনোকর শিপিং লাইন্সের লোকাল এজেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল হক চৌধুরী বলেন, 'গত ৪ অক্টোবর বিএম ডিপো থেকে খালি অবস্থাতেই কনটেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। সেখানে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয়। জাহাজটি ৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দিয়ে ৯ অক্টোবর মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দরে পৌঁছায়। ১০ অক্টোবর এটি জেটিতে নোঙর করে। কিন্তু খালি কনটেইনারটি পেনাং বন্দর থেকে ডিপোতে নিয়ে যাওয়ার পথে ১৪ অক্টোবর নিরাপত্তাকর্মীরা দুর্গন্ধ পেয়ে সেটি তল্লাশি করলে মরদেহটি পাওয়া যায়।'
চিঠি যায়, আসে না উত্তর
ক্রমবর্ধমান নৌ-বাণিজ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুল্ক্কায়নে আধুনিক সরঞ্জাম যুক্ত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে একাধিক চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সর্বশেষ এমন চিঠি দেওয়া হয় ২০২০ সালের ৫ জুলাই। কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে স্ক্যানারসহ আধুনিক সরঞ্জাম কোনটি কী পরিমাণ দরকার, তা উল্লেখ করা হয়। কেন এসব সরঞ্জাম এ মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে দরকার, তাও ব্যাখ্যা করেন তিনি।
জনবল সংকট দূর করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েও একাধিক চিঠি পাঠানো হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে। সে ব্যাপারেও অগ্রগতি সামান্য। এর মধ্যে গত সপ্তাহে এলো খালি কনটেইনারে বিদেশে মানুষ চলে যাওয়ার খবর।
২০১৬ সালের মার্চে এনবিআরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষের পাঠানো এক প্রতিবেদনে নতুন আরও ১২টি স্ক্যানার মেশিন, ১০টি বিস্টেম্ফারক পদার্থ শনাক্তকারী যন্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়। এ প্রস্তাব পাঠানোর তিন বছর পর আসে নতুন দুটি কনটেইনার স্ক্যানার ও আটটি আরপিএম। এর পর ২০১৯ সালে আবার এনবিআরের কাছে ১২টি স্ক্যানার ও ১০টি আরপিএম থাকা জরুরি দরকার বলে মতামত দিয়ে চিঠি পাঠায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কিন্তু নতুন করে আর আসেনি কোনো স্ক্যানার কিংবা আরপিএম।
নৌ-বাণিজ্য ৪৮ গুণ বাড়লেও সুদৃঢ় হয়নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা
১৯৭২ সালে মাত্র ৫০ লাখ টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সর্বশেষ ২০২১ সালে শুধু কার্গো পণ্যই লেনদেন হয়েছে সাড়ে ১১ কোটি টন। এখানে পণ্য ওঠানামা বেড়েছে প্রায় ৪৮ গুণ। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ওঠানামার কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালে এ বন্দরে ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ। প্রতি বছর গড়ে প্রবৃদ্ধি আছে ১২ শতাংশ হারে।
নৌ-বাণিজ্য এভাবে বাড়লেও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির পরিমাণ বাড়েনি সে হারে। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্যের শুল্ক্কায়ন করে গত অর্থবছরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে। আমদানি করা পণ্যের ভাড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ অর্থবছরে আয় করেছে তিন হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। তারপরও কেন সুরক্ষিত হচ্ছে না বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা- তা এক বিরাট প্রশ্ন।
চাহিদা অনুপাতে নেই স্ক্যানার
কাস্টমস কমিশনারের পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তাদের দপ্তরের টিওঅ্যান্ডইতে কনটেইনার স্ক্যানার আটটির মধ্যে বর্তমানে চালু আছে সাতটি। এসব স্ক্যানারের মধ্যে চারটি ২০০৮ সালে, একটি মোবাইল কনটেইনার স্ক্যানার চীন সরকারের অনুদানে ২০১৫ সালে এবং অপর দুটি স্ক্যানার ২০১৯ সালে কেনা হয়েছে। স্ক্যানারের অভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে আমদানি ও রপ্তানি করা মোট কনটেইনারের মাত্র ১৪ শতাংশ স্ক্যান করা সম্ভব হচ্ছে। আগামী ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি ও রপ্তানি করা কনটেইনারের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। তখন স্ক্যানারের মাধ্যমে কনটেইনার স্ক্যান করার প্রয়োজনীয়তাও দ্বিগুণ হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন মোট ১২টি গেটের মাধ্যমে কনটেইনার বা পণ্য প্রবেশ ও বের হয়। প্রতিটি গেটে অন্তত একটি করে স্ক্যানার স্থাপন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল উদ্বোধন হয়েছে। লালদিয়া মাল্টিপারপাস কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। এসব টার্মিনাল চালু হলে বন্দর গেটের বাইরে আরও অন্তত সাতটি স্ক্যানার দরকার হবে।
দরকার অন্তত ১৬টি রাসায়নিক পর্যবেক্ষণ যন্ত্র
চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি করা রাসায়নিক পদার্থের কায়িক পরীক্ষা করতে হয়। খালি চোখে এসব পণ্য শনাক্ত করা সম্ভব নয়। পণ্যের যথাযথ মান শনাক্তকরণের জন্য রাসায়নিক পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠাতে হয়। এতে সময়, শ্রম ও অর্থ বেশি ব্যয় হয়। দ্রুত রাসায়নিক পদার্থ শনাক্তকরণের জন্য ১৬টি রাসায়নিক পর্যবেক্ষণ যন্ত্র প্রয়োজন। এই ডিভাইসটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ শনাক্ত করতে সক্ষম। এটিরও ব্যাপক সংকট রয়েছে বন্দরে। এ বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় সেই চিঠিতে।
স্ক্যানিং ছাড়াই খালাস হচ্ছে ৫৫ শতাংশ পণ্য
ঘোষণাবহির্ভূত ও বিস্ম্ফোরক জাতীয় পণ্য আমদানির ঝুঁকি কমাতে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার আমদানির পরিমাণ প্রতি বছর বাড়ছে আনুপাতিক হারে। ১০ বছর আগের তুলনায় এখন দ্বিগুণের বেশি কনটেইনার ওঠানামা হচ্ছে এ বন্দরে। যে হারে বাণিজ্য বেড়েছে, সে হারে বাড়েনি স্ক্যানারের সংখ্যা। তাই আমদানিকৃত বর্ধিত পণ্যের একটি বড় অংশ বের হয়ে যাচ্ছে স্ক্যানিং ছাড়াই। চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানিংয়ের দায়িত্বে থাকা সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান এসজিএস এর আগে এক জরিপে উল্লেখ করে যে, পর্যাপ্ত স্ক্যানার না থাকায় বেশিরভাগ পণ্যেরই এখন স্ক্যানিং করতে পারছে না তারা। তাদের এক হিসাব বলছে, গড়ে ৫৫ শতাংশ পণ্যের স্ক্যানিং করতে পারছে না তারা। পাঁচ মাসে আমদানি-রপ্তানির ৯ লাখ ২ হাজার ৪৭০টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে মাত্র ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৯টি কনটেইনার স্ক্যানিং করার তথ্য দেয় তারা। আর স্ক্যানিং ছাড়া পণ্যভর্তি ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮১টি বা ৫৫ শতাংশ কনটেইনার বের হয়ে গেছে। অথচ তখন স্ক্যান করা কনটেইনারের মধ্যেই ৭ হাজার ৪৪৮টিতে ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আনার পাশাপাশি বিস্টেম্ফারক দ্রব্য, মাদক ও আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আনার প্রমাণ পেয়েছে তারা। পাঁচ বছর আগের এ জরিপ চিত্র অব্যাহত আছে এখনও। এখনও বেশিরভাগ পণ্য খালাস হচ্ছে স্ক্যানিং ছাড়াই।
আসছে অস্ত্র ও মাদকের চালান
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে বৈদেশিক ডাকের কার্টনে ইতালির তৈরি দুটি এইট এম এম পিস্তল এবং দুটি নকল পিস্তলসহ ২০ ধরনের পণ্য উদ্ধার করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ছিল ৬০ রাউন্ড বুলেটও। গৃহস্থালি পণ্যের ঘোষণা দিয়ে অস্ত্রসহ এসব পণ্য আসে ইতালি থেকে। দেশি-বিদেশি মাদক চোরাচালান চক্রও টার্গেট করেছে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির লাইফ লাইন চট্টগ্রাম বন্দরকে। ২০২১ সালের ৩ জুন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নিষিদ্ধ মাদক পপি বীজ আমদানি হয়। রাসায়নিক পরীক্ষায় ৫৪ হাজার কেজি সরিষার বীজ থাকার কথা থাকলেও মাত্র ১১ হাজার ৯৫০ কেজি সরিষা বীজ পাওয়া যায়। আর বাকি ৪৩ হাজার ১৪৬ কেজি পপি বীজ ঘোষণাবহির্ভূতভাবে আমদানি নিষিদ্ধ মাদক পপি বীজ আমদানি করা হয়।
মন্তব্য করুন