সমকাল: বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন ও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে থেকে আপনি চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কাজের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত আছেন ২৫ বছর ধরে। আসলে কতটা এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর?

শফিকুল ইসলাম জুয়েল: সময়ের হাত ধরে অনেকদূর এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আগের মতো এখন কথায় কথায় বন্ধ হয় না বন্দরের অপারেশনাল কাজ। এখন চাইলেও কেউ কাউকে জিম্মি করতে পারে না। আধুনিক যন্ত্রপাতির সংখ্যাও এখন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আগে একটি জাহাজকে ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত পণ্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হতো। এখন সেটি দুই থেকে তিন দিনে নেমে এসেছে। আগে জাহাজ ও কনটেইনারের জট থাকত। সেটিও এখন অনেক কমেছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে সেবার মান এখনও আন্তর্জাতিক হয়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এখনও অনেক ঘাটতি আছে। কাস্টমসের সঙ্গে আছে সমন্বয়হীনতা।

সমকাল: সম্প্রতি খালি কনটেইনারে মানুষ চলে যাওয়ার ঘটনা ফের ঘটেছে বন্দরে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলুন।

শফিকুল ইসলাম জুয়েল: ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর জাতিসংঘের অধীন আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থা বিভিন্ন বন্দরে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা বা আইএসপিএস কোড অর্থাৎ জাহাজ ও বন্দর স্থাপনার নিরাপত্তা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম প্রণয়ন করে। জাহাজ বা কনটেইনারে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহন করে কেউ যাতে এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্যই এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪৮টি দেশের বন্দরে তা বাস্তবায়িত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে এ উদ্যোগ প্রথম নেওয়া হয় ২০০৪ সালের ১ জুলাই। সেই হিসেবে বাংলাদেশ প্রস্তুতির জন্য সময় পেয়েছে প্রায় ১৮ বছর। এর মধ্যে এক লাখ ৫২ হাজার ব্যক্তিকে ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে তারা। ৮৩ হাজার গাড়ির চালক ও হেলপারের তথ্যও ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত স্ক্যানার এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি আমাদের প্রধান সমুদ্রবন্দর। মাত্র সাতটি স্ক্যানার দিয়ে এখন সাড়ে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডল করছে তারা। এ জন্য খালি কনটেইনারে চলে যায় মানুষ। আসে মাদক ও অস্ত্রের মতো চালানও। এখানে নজর না বাড়ালে বিদেশে আরও সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে দেশের।

সমকাল: ট্রানজিট বন্দর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে আমাদের সমুদ্রবন্দর। নিরাপত্তা ঝুঁকি রেখে এটি কতটা সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে চট্টগ্রাম বন্দর?

শফিকুল ইসলাম জুয়েল: কোনোভাবেই এই ঝুঁকি রাখা যাবে না। কারণ ট্রানিজট পণ্যে যে কোনো কিছু আসার ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি থাকে সাধারণ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমেও। এরই মধ্যে অস্ত্র ও মাদকের চালান ধরা পড়েছে বন্দরে। স্ক্যানার পর্যাপ্ত না থাকলে সাড়ে ৩২ লাখ কনটেইনার কোনোভাবেই পরীক্ষা করা সম্ভব নয় কাস্টমসের পক্ষে। তারপরও কেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের প্রধান সমুদ্রবন্দর মাত্র সাতটি স্ক্যানার দিয়ে চলছে, তা আমার বোধগম্য নয়। অথচ এই বন্দরে আসা পণ্যের শুল্ক্কায়ন করে সর্বশেষ অর্থবছরেও ৬০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে কাস্টমস। বন্দর আয় করেছে ৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। তবু স্ক্যানার কেনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না দায়িত্বশীলরা।

সমকাল: বন্দর ও কাস্টমসের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা বলছিলেন আপনি। একটু ব্যাখ্যা করে বলুন।

শফিকুল ইসলাম জুয়েল: চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কখন কোন পণ্য প্রবেশ করে ও খালাস হয়, তা জানা থাকার কথা কাস্টমসের। তাদের সার্ভারে এটি সংরক্ষণ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও তা হচ্ছে না। মিথ্যা ঘোষণায় যাঁরা পণ্য আনছেন, তাঁরা এর সুযোগ নিচ্ছেন। নিলামযোগ্য কিছু কনটেইনার ১৫-২০ বছর ধরে বন্দরে পড়ে থাকছে। সমন্বয় থাকলে এসব হতো না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হতো নিলাম। সহজে পণ্য খালাস করতে পারত না অসাধু চক্রও। নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও আন্তরিক হতে হবে উভয়কে। সেবাকে উন্নীত করতে হবে আন্তর্জাতিক মানে।