সমকাল: সমৃদ্ধির স্বর্ণদুয়ার বলা হয় চট্টগ্রাম বন্দরকে। কিন্তু এই দুয়ার কতটা নিরাপদ মনে করছেন আপনারা?

মাহবুবুল আলম: বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৪তম। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের দিক থেকে লয়েডস লিস্ট এ তালিকা করেছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার। আগের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে। আগের চেয়ে এখন অনেক সুরক্ষিত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা। সিসিটিভির সংখ্যা পাঁচ বছর আগে যা ছিল, এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীও নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তার পরও কিছু জায়গায় রয়ে গেছে ঘাটতি। পর্যাপ্ত স্ক্যানার বসানোর দাবি জানিয়ে আসছি আমরা অনেক আগে থেকে। এটি আছে চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ। এ জন্য শতভাগ পরীক্ষা না করেই বেশিরভাগ পণ্য খালাস করতে হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। এ অবস্থার অপব্যবহার করছে কেউ কেউ। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য নিয়ে আসছে। আবার অস্ত্র এবং মাদকও আনছে।

সমকাল: নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অগ্রগতি দেখছেন কোথায়?

মাহবুবুল আলম: আগে না থাকলেও এখন বন্দরের ১২টি গেটের প্রতিটিতে বসানো হয়েছে অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম। স্থাপন করা হয়েছে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর। বন্দর ব্যবহারকারী এক লাখ ৫২ হাজার ব্যক্তির বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে প্রতিদিন গড়ে প্রবেশ করে সাত সহস্রাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ট্রেইলার। এসব গাড়ির চালক ও সহকারীকেও আনা হয়েছে ডাটাবেজের আওতায়। প্রায় ৮৪ হাজার চালক ও সহকারীকে ডাটাবেজে এনে দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পাস। সংরক্ষিত এলাকায় এখন প্রায় সাড়ে ১২শ সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এ সংখ্যা অবশ্য আরও বাড়াতে হবে। দক্ষ জনবলের সংকট আছে; সেটাও দূর করতে হবে।

সমকাল: চট্টগ্রাম বন্দর ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি-আইএসপিএস কোড অনুসরণ করছে কতটা?

মাহবুবুল আলম: চট্টগ্রাম বন্দর আইএসপিএস কোড অনুসরণ করা একটি প্রথম শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ২০০৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর এ কোড অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কোস্টগার্ডও চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। সেটি মেনে কিছু সংস্কারমূলক কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বন্দর জেটির বাইরে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করা না হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি থেকেই যাবে। বিশ্বের কোনো আধুনিক বন্দরের জেটিতে এভাবে পণ্য খালাস করা হয় না। এখানে হচ্ছে। হচ্ছে বলেই প্রতিদিন সাড়ে সাত সহস্রাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি প্রবেশ করে বন্দরে। এতে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে। ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে এর উপযুক্ত সমাধান বের করতে হবে বন্দরকে। যারা পণ্য খালাস করছে, তাদের ভালো বিকল্প দিতে না পারলে তারা তো পণ্য বন্দর জেটিতেই খালাস করতে চাইবে।

সমকাল: সম্প্রতি আবারও খালি কনটেইনারে বিদেশে মানুষ যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটা রোধ করা যাবে কীভাবে?

মাহবুবুল আলম: আইএসপিএস কোড মানলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুরক্ষিত হবেই। বন্দরের অপারেশনাল কাজে আগের চেয়ে গতি বেড়েছে। এখন আর দিনের পর দিন জাহাজকে অপেক্ষা করতে হয় না। যেমন কি-গ্যান্টি ক্রেনের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতিও এসেছে পরপর কয়েকটি। এখন মনোযোগ বাড়াতে হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। খালি কনটেইনারে মানুষ চলে যাওয়া মানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গলদ আছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে যৌথভাবে কাজ করতে হবে বন্দর ও কাস্টমস উভয়কে। তাদের কাজে সমন্বয় বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রুততম সময়ে তাঁদের পণ্য শুল্কায়ন করতে পারেন, সে দায়িত্ব নিতে হবে উভয় প্রতিষ্ঠানকে।