তনিমা সিদ্দিকী শ্বেতা, যশোরের মেয়ে। একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। প্রায় এক যুগ ধরে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ পড়ার সময় থেকেই চাকরি করেছেন। চাকরির পাশাপাশি নিজে কিছু একটা করার প্রেরণা ছিল তাঁর ভেতর।

বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে সে স্বপ্ন এসে ধরা দেয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। যশোরে কেটেছে বন্দি সময়। সে সময় ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে কিছু করতে পণ করেন। খাদ্যপণ্য নিয়ে কাজ করা কষ্টকর। সেই কষ্টের পথই বেছে নেন শ্বেতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '২০২০ সালে মানসিকভাবে কমবেশি সবারই একটা বিশৃঙ্খল সময় কেটেছে। হঠাৎ মনে হলো এটাই সময়, যা আমি কাজে লাগাতে পারি। এ অসময়টাকে কাজে লাগিয়ে মূলত ভেজালের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। যাঁরা খাঁটি-বিশুদ্ধ পণ্যের সন্ধান করেন কিন্তু গ্রামের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, অথবা সময়-সুযোগের অভাবে বিশুদ্ধতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারছেন না, তাঁদের জন্য এবং আরও সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদে যশোর থেকে কিছু খাঁটি-বিশুদ্ধ পণ্য পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা শুরু করলাম। সেই থেকে মানুষের দুর্ভোগ আর অসহায়ত্ব কিছুটা লাঘবের লক্ষ্যে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে কাজ শুরু করলাম।'

যাত্রার পথটা অত মসৃণ ছিল না শ্বেতার। পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে জানানোর পরও কোনো সাড়া না পাওয়া, বিভিন্ন টিপ্পনি কাটা- এসব নিয়েই যাত্রা শুরু করে তাঁর দুই ফেসবুক পেজ 'তেহজিব গ্যালে' ও 'অ্যাপারেল অ্যান্ড মোর'। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, 'প্রথমেই মাত্র ৩ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করলাম। কুরিয়ার সার্ভিসে খুব ঝামেলার সম্মুখীন হলাম, প্রডাক্ট নষ্ট হলো। লিকুইড প্রডাক্ট ডেলিভারিতে নানা ঝামেলা।' তিনি আরও বলেন, 'তেহজিব যদিও আমার প্রথম সন্তানের নাম, যা আমার কাছে সবচেয়ে দামি। কিন্তু এর আক্ষরিক অর্থটা কিন্তু কম মূল্যবান নয়। শিষ্টাচার বা আদব। গতানুগতিক ব্যবসায়ী মনোভাবের সার্ভিস থেকে ভিন্ন, আস্থা আর শিষ্টাচার মিশ্রিত সেবা প্রদানের লক্ষ্য মাথায় রেখেই এই নাম। একই প্ল্যাটফর্মে গ্রোসারি, ক্লথিং এবং অন্যান্য সামগ্রী একসঙ্গে নিয়ে কাজ। তাই দুই পেজের সমন্বয়ে বিজনেসের নামটা তেহজিব'স ই-মার্ট।'

তিনি বলেন, 'শুরুটা ঢাকা দিয়েই। এখন দেশের বাইরেও কিছু কাস্টমার তৈরি হয়েছে। আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি রিপিট কাস্টমার। আমার পণ্য যে আলাদা, কিছুটা হলেও গ্রাহকদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।'

কাজ শুরু করেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে। এখন সম্পূর্ণ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সংগ্রহ করা গুঁড়া মসলা, ঘি, সরিষার তেল, নারকেল তেল, প্রাকৃতিক মধু, চুইঝাল, লাল চাল, লাল আটা, মাল্টিপারপাস আটা, খেজুরের গুড়, নলেন গুড়ের সন্দেশ, হাতের কাজের (নকশি) পোশাক, ধুতি, কুর্তি, স্কার্টের ফিউশন, নকশিকাঁথা, চাদর, সুতি শাড়ি, ব্লক প্রিন্ট, থিম বেসড কাজ ইত্যাদি পণ্য নিয়ে পরিধি বেড়েছে অনেকখানি। এখন তেহজিবের পরিচিতি শুধু কাছের মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সেটি ইতোমধ্যে প্রিয়জনের গণ্ডি পেরিয়ে অপরিচিতজনের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে।