
হোম লোন বা গৃহঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন সরকারি খাতে গৃহঋণের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি খাতেও ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সের মতো বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গৃহঋণ পণ্য রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গৃহঋণ পেতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় মোৗলিক কিছু বিষয়ে এখানে ধারণা দেওয়া হলো :
গ্রাহকের যোগ্যতা
গৃহঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে মূল মানদণ্ড হলো গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা এবং ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে প্রদেয় সম্পত্তির আইনগত ও কাঠামোগত বৈধতা। ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয় গ্রাহকের বয়স, মোট মাসিক ও পারিবারিক আয়, নিজস্ব বিনিয়োগের অর্থ সংকুলান ব্যবস্থা, গ্রাহকের অন্যান্য সম্পদ ও দায়সংক্রান্ত তথ্য, চাকরি বা ব্যবসার ধরন, স্থায়িত্ব, ধারাবাহিকতা ইত্যাদি।
ঋণের আবেদন করতে যা লাগে
যে কোনো সময় গৃহঋণের আবেদন করা যায়। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আয়সংক্রান্ত কাগজপত্র পূরণ করে আপনি গৃহঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রাথমিক বিবেচনার জন্য আয়সংক্রান্ত কাগজপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। চাকরিজীবী গ্রাহকের আবেদনপত্রে মোটাদাগে নিয়োগ সনদ, বেতনের সনদ, আয়কর রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, ব্যাংক বিবরণী, এনআইডির ফটোকপি এবং আবেদনকারী ও সহ-আবেদনকারীর ছবি লাগে।
আত্মকর্মসংস্থানে থাকা ব্যক্তির ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান দ্বারা নির্ধারিত সময়ের ব্যবসার লাভ-ক্ষতির হিসাব, ব্যবসার ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, আয়কর রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, ব্যাংক বিবরণী, এনআইডির ফটোকপি এবং আবেদনকারী ও সহ-আবেদনকারীর ছবি লাগে।
ফ্ল্যাট কেনার জন্য ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি/বরাদ্দপত্র, ডেভেলপারদের পরিশোধ করা অর্থের রিসিপ্ট এবং ডেভেলপার প্রদত্ত প্রকল্পের ডকুমেন্ট। নির্মাণকাজের জন্য ঋণ পেতে মূল মালিকানা দলিল, ২১ বছরের বায়া দলিল, নামখারিজ পত্র, হালনাগাদ খাজনার রসিদ, মহানগর জরিপ পর্চা, আরএস পর্চা, এসএ পর্চা, সিএস পর্চা, বন্ধকের অনুমতিপত্র এবং রাজউক বা অন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত পরিকল্পনা, লে-আউট পরিকল্পনা ও অনুমোদনপত্র লাগে।
ঋণ পরিশোধ যেভাবে
সাধারণত সম-মাসিক কিস্তির মাধ্যমে প্রতি মাসে গৃহঋণ পরিশোধ করতে হয়। সম-মাসিক কিস্তি সুদ এবং আসল উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত। গৃহঋণের বর্তমানে প্রযোজ্য সুদের হার এবং সেই অনুযায়ী মাসিক কিস্তির পরিমাণ ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের যে কোনো অফিস বা ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিন।
গৃহঋণ ইন্টারেস্ট রেটের ক্ষেত্রে ভেরিয়েবল অথবা ফিক্সড ইন্টারেস্ট বেছে নিতে পারেন। ভেরিয়েবল রেটের আওতায় গৃহঋণের সুদের হার পরিবর্তনশীল। অর্থবাজারে পরিবর্তন সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ সুদের হার পরিবর্তন করতে পারে। ফিক্সড রেটের ক্ষেত্রে পুরো মেয়াদে সুদহার অপরিবর্তিত থাকবে। অবশ্য ভেরিয়েবল রেটেই বেশিরভাগ গৃহঋণ বিতরণ করা হয়। কারণ গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠান উভয়পক্ষ এ বিকল্পকে অগ্রাধিকার দেয়।
নির্মাণকাজের অগ্রগতি ও তহবিলের প্রয়োজনীয়তার প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিষ্ঠানগুলো এককালীন বা সুবিধামতো কিস্তিতে ঋণের টাকা দিয়ে থাকে। উল্লেখ্য, নির্মাণকারীর সঙ্গে সময়ভিত্তিক পেমেন্ট শিডিউল না করে কাজের অগ্রগতির সঙ্গে পেমেন্ট শিডিউল করাই বাঞ্ছনীয়। তৈরি ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ঋণের টাকা এককালীন কিস্তিতে দেওয়া হয়।
নির্ধারিত সময়ের আগেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করা যায়। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত শর্ত প্রযোজ্য, যা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের যে কোনো অফিস থেকে জেনে নিতে হবে।
জামানত
যে সম্পত্তির বিপরীতে আপনি ঋণ নিচ্ছেন, সাধারণ তা-ই আপনাকে জামানত হিসেবে রাখতে হবে। তবে গ্রহণযোগ্য অন্য সম্পত্তির জামানতের বিনিময়েও গৃহঋণ দেওয়া হয়। বন্ধকসংক্রান্ত নিয়ম, আনুষঙ্গিক খরচ ইত্যাদি একেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একেক রকম। সে ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানে ঋণের আবেদন করবেন, তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নেওয়াই ভালো।
মন্তব্য করুন