- ফিচার
- সৌরবাতিতে আলোকিত উপকূল
সৌরবাতিতে আলোকিত উপকূল
-samakal-6365eebfa5a9d.jpg)
সৌরবিদ্যুৎ থাকায় অনেক রাত পর্যন্ত হাট-বাজারে চলে বেচাকেনা
উপকূলীয় জনপদ মানেই ছিল সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে আঁধার। দুর্গম চর আর গ্রামের মেঠোপথ ছিল পথচারীর কাছে 'আতঙ্ক'। গ্রামের হাট থেকে বাড়ি ফিরতে হতো দলবেঁধে। টর্চলাইট আর হারিকেনই ছিল যাত্রাপথের ভরসা। তবে সেদিন ফুরিয়েছে। দিনের সূর্যের আলো রাতে ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যবাতির মাধ্যমে। আগেকার কেরোসিনের বাতি আর হারিকেনের পরিবর্তে ঘরে ঘরে এখন জ্বলছে সৌরবাতি। এ বাতির আলোয় আলোকিত হচ্ছে প্রত্যন্ত উপকূলের ঘরবাড়ি। বদলে যাচ্ছে উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রা।
উপকূলীয় জনপদে এখন জ্বলছে স্ট্রিট লাইট। সন্ধ্যা নামলেও সড়ক, হাটবাজার ও মেঠোপথ থাকে আলোয় ভরা। উপকূলের জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে যেতেন কুপিবাতি নিয়ে। বাতাসে যেন বাতি নিভে না যায়, সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতেন তাঁরা। স্থানীয় ভাষায় এ পদ্ধতিতে আলো জ্বালানোকে 'বোম্বা বাতি' বলা হয়। কিন্তু তাতেও জেলেরা স্বাচ্ছন্দ্যে রাতের বেলা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারতেন না। জেলেদের এমন অনেক সমস্যা সহজ হয়ে এসেছে প্রযুক্তির কল্যাণে। ছোট ছোট নৌকা, ট্রলার, ছোট্ট কুঁড়েঘর কিংবা সাগরপাড়ের জেলেপল্লির সারি সারি ঘর আলোয় ঝলমলে। কোথাও কোথাও রেডিও, টেলিভিশন বা মিউজিক প্লেয়ারে গান-বাজনার শব্দও শোনা যায়।
রাতে বাতি জ্বালানোসহ বৈদ্যুতিক পাখা ও টেলিভিশন চালানোর মতো সুবিধা পাওয়ায় সৌরবিদ্যুৎ উপকূল অঞ্চলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আগে সন্ধ্যা নামলেই কাজ সেরে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তেন এ অঞ্চলের মানুষ। বর্তমানে সোলার প্যানেল হোম সিস্টেম বা সৌরবিদ্যুতের আলোয় বদলে যাচ্ছে তাঁদের জীবনমান। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের বলেশ্বর নদতীরের বাসিন্দা জব্বার আলী। তিনি জানান, আগে কেরোসিন দিয়ে কুপি জ্বালিয়ে ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করত। এখন সোলার প্যানেল সিস্টেম দিয়ে সৌরবিদ্যুতের আলোয় রাত জেগে পড়ালেখা করতে পারে তারা। আরেক বাসিন্দা রহিমা আক্তার জানান, সৌরবিদ্যুৎ বা সোলার প্যানেল সিস্টেমে এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হয়েছে। সৌরবিদ্যুতের আলোয় তাঁরা এখন রাতে সেলাই মেশিনে কাজসহ ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করতে পারছে।
উপকূলে বেশ কয়েকটি জনপদ ঘুরে দেখা গেছে, হাটবাজার ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে স্থাপন করা হয়েছে সৌরবাতি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠছে এসব বাতি। এতে চাপ কমছে জলবিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম পুড়িয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের ওপর। লোডশেডিংয়ের ঝামেলা না থাকায় এসব সড়কবাতি আলো দেয় সারারাত।
পাথরঘাটা এলাকার রফিজ উদ্দিন বলেন, 'আমাদের দেশে শহরে রাস্তায় বাতি দেওয়া হয়। গ্রামের মানুষ যে এ সুবিধা পাবে- আমরা কল্পনাও করিনি। কিন্তু এখন সৌরবিদ্যুতের কল্যাণে আমাদের গ্রামের বিভিন্ন অন্ধকার সড়কে আলো জ্বলছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনাও অনেক কমে এসেছে। আগে অন্ধকার রাস্তায় চলাচল করতে ভয় পেতাম। এখন রাস্তায় সৌরবাতি সারারাত জ্বলে। ফলে রাতে রাস্তায় চলতে কারও মনে তেমন কোনো ভয়-আতঙ্ক নেই।'
কৃষক ইউসুফ আলী জানান, সৌরবিদ্যুতের সবচেয়ে বড় সাফল্য পাচ্ছেন কৃষকরা। তাঁরা এখন সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প দিয়ে সেচকাজ চালিয়ে যেতে পারছেন। এ পাম্প দিয়ে ক্ষেতে পানি দিলে খরচ অনেক কম পড়ে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
হোগলপাতি গ্রামের রাস্তার পাশেই ইউনুস হাওলাদারের মুদির দোকান। দোকানটি সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। সৌরবিদ্যুৎ থাকায় অনেক রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলে, ফলে বিক্রিও বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। বাড়িতেও রয়েছে সৌরবিদ্যুতের সুবিধা। তাঁর স্ত্রী তহমিনা দর্জির কাজ করেন।
উপকূলের তরুণদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা হাতে খড়ি ফাউন্ডেশনের সামাজিক উদ্যোক্তা সুমন চন্দ্র মিস্ত্রি বলেন, 'শহরের সব সুবিধা পর্যায়ক্রমে পৌঁছে যাচ্ছে উপকূলের গ্রামাঞ্চলে। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, সড়কবাতিসহ নাগরিক সব সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে। সোলারের আলোয় উপকূলের চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষের জীবনমান অনেক পাল্টে গেছে।' া
মন্তব্য করুন