আবারও শুরু হয়েছে বিশ্বযুদ্ধ! কী, এ খবর শুনে ভয় পেলেন? ভয় পাবেন না। কারণ, আমরা যে যুদ্ধের কথা বলছি, সেখানে নেই কোনো মারণাস্ত্র; লড়াই হয় ফুটবল নামক এক চর্মগোলক দিয়ে। এবার নিশ্চয়ই বুঝেছেন- বলছি বিশ্বকাপ ফুটবলের কথা। চার বছরের প্রতীক্ষায় অবসান ঘটিয়ে আবার এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তাই আবারও বিশ্বের অগণিত মানুষ ঘুমকে ছুটি দিয়ে, কর্মক্লান্তি ভুলে হই-হট্টগোলের মধ্য দিয়ে মেতে উঠেছেন অন্যরকম এক উৎসবে। যাঁদের কেন্দ্র করে এই উৎসব, তাঁরা একেকজন ফুটবল যোদ্ধা। যাঁরা মনে করিয়ে দেন- এ এক বিশ্বযুদ্ধ! ২০২২ সালের এই যুদ্ধে কোন দেশের ফুটবল দল জয়ী হবে, কাদের হাতে উঠবে বিশ্বকাপ নামক স্বর্ণস্মারক- তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। প্রিয় দলের সমর্থনে অনেকে গায়ে তুলেছেন ভিনদেশের বর্ণিল সব জার্সি। বাড়ির দেয়াল রাঙিয়েছেন সমর্থিত দলের পতাকার রঙে। শুধু তাই নয়, বাড়ির আঙিনা, ছাদ, দোকানপাট, হাটবাজার থেকে শুরু করে এলাকার নানা প্রান্তে টাঙিয়েছেন ভিনদেশের পতাকা ও ব্যানার।

আর খেলা শুরু হওয়ার আগে ও পরে মেতে উঠছেন তর্কযুদ্ধে। কোন দল কত শক্তিশালী, কে ভালো খেলোয়াড়, কোন দল জিতবে বিশ্বকাপ- তা নিয়েই এই বাগ্‌যুদ্ধ। আবার খেলা চলাকালীন এই ফুটবলপ্রেমীরাই সংশয়ে থাকছেন এই ভেবে- প্রিয় দল নিয়ে প্রতিপক্ষকে বড় গলায় যেসব কথা বলেছেন, তা সত্যি হবে কিনা। খেলার মুহূর্তগুলো তাই কখনও ভয় জাগানিয়া, কখনও হৃদয় ভাঙার আবার কখনও উল্লাসে মেতে ওঠার। প্রিয় দলের পরাজয়ের পরও অনেকে নতুন করে গেঁথে চলেছেন স্বপ্নের বুনন। আসলে কেউ শেষ সুযোগের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল ছাড়তে চান না। আশায় বুক বেঁধে প্রহর গুনে যান কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের। সে দলে আছেন দেশের প্রতিটি অঙ্গনের তারকারাও। বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতে ওঠার বিষয়ে তাঁরাও পিছিয়ে নেই কোনো অংশে। তাই আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম তারকাদের।

জানতে চেয়েছিলাম, কাতার বিশ্বকাপে প্রিয় দলের কাছে তাঁদের প্রত্যাশা কী? বরেণ্য অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমি শুরু থেকেই ব্রাজিল ফুটবল দলের অন্ধ ভক্ত। হারলেও ব্রাজিল, জিতলেও ব্রাজিল। এই দলের কাছে বিশ্বকাপ শিরোপার প্রত্যাশা কখনোই ফুরাবে না।

এ রকম কথা শোনা যায় তারকা দম্পতি ওমর সানী-মৌসুমীর মুখেও। তবে নন্দিত কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ব্রাজিলের সমর্থক-ভক্ত হয়ে উঠেছেন তাদের শৈল্পিক ফুটবলের কারণে। তিনি বলেন, 'ফুটবল কতটা নান্দনিক হতে পারে, তা ব্রাজিল বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই প্রতিটি দশকেই ব্রাজিল দল থেকে উঠে এসেছে বিশ্ব কাঁপানো সব খেলোয়াড়। পেলে, জিকো, রোমারিও, বেবেতো, রবার্তো কার্লোস, রোনালদো, রোনালদিনহো থেকে শুরু করে নেইমার পর্যন্ত কত যে তারকা খেলেয়াড়ের জন্ম এই দেশে, তার হিসাব মেলানো কঠিন। এত কিছুর পরও ব্রাজিল ফুটবল দলের প্রেমে না পড়ে থাকা যায়? যায় না।' কুমার বিশ্বজিতের মতোই ব্রাজিলের ভক্ত অভিনেত্রী মেহজাবিন, বিদ্যা সিনহা মিম, অপু বিশ্বাস, উপস্থাপক নাবিলা।

তাঁদের সবারই প্রত্যাশা- ২০ বছর পর আবারও সাম্বার দেশে ফিরে যাবে বিশ্বকাপ ট্রফি। একই প্রত্যাশা নিয়ে টিভির সামনে বসে নিয়মিত খেলা দেখছেন আরেক ব্রাজিলভক্ত পড়শী। তরুণ অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ স্বপ্ন দেখছেন ব্রাজিলের ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা জয়ের। একই স্বপ্ন দেখছেন নন্দিত অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু, জয়া আহসান, কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর ও নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। শুধু তাঁরাই নন, দেশের আরও অনেক তারকাই ব্রাজিলের গোঁড়া সমর্থক। কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর তাঁদের অন্যতম। প্রিয় দলের সমর্থনে বাগ্‌যুদ্ধে নামতে দেখা যায় তাঁকে। অভিনেতা আফরান নিশো, অপূর্ব, আনিসুর রহমান মিলন, সজলকেও দেখা গেছে প্রিয় দলের সাফল্যে উল্লাসে ফেটে পড়তে। ব্রাজিলের মতো আর্জেন্টিনা সমর্থকরাও কিন্তু চুপচাপ বসে থাকার পাত্র নন। অভিনেতা জাহিদ হাসানের কথায়, 'হোঁচট খাওয়ার পরও কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, তার উদাহরণ যুগ যুগ ধরে দিয়ে এসেছে আর্জেন্টিনা ফুটবল দল। তাই এই দলের প্রতি কখনও বিশ্বাস হারাইনি। প্রতীক্ষার প্রহর গুনে যাচ্ছি লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার মুহূর্তটির। দিয়েগো ম্যারাডোনা যেভাবে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরে আমাদের আনন্দে আত্মহারা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, সেটাই এবার মেসি করে দেখাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।'

জাহিদ হাসানের মতো একই রকম প্রত্যাশার কথা শোনা গেছে অভিনেতা ফেরদৌসের মুখেও। তিনি বলেন, 'এক-দুটি ম্যাচ দিয়ে দলকে বিচার করা ঠিক নয়। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করার সব রকম সামর্থ্য রাখে, এর প্রমাণ দিতে খুব বেশি সময় নেবে না। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার ফুটবল জাদুতে মুগ্ধ হয়েছি। এখনও সেই মুগ্ধতা ধরে রেখেছে দলটি। মেসি বড় সাফল্য এনে দেবে- এমন প্রত্যাশা করছি।'

আর্জেন্টিনা দলের হাতে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি উঠবে- এই স্বপ্ন বুনে যাচ্ছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, নিরব, ইমন, মিশু সাব্বির, অভিনেত্রী পরীমণি, মাহিয়া মাহি, কণ্ঠশিল্পী ইমরান, কর্নিয়া, পুতুলসহ অনেকে। তবে কণ্ঠশিল্পী শাফিন আহমেদ, অভিনেতা ইরেশ যাকের, তৌসিফ মাহবুব, অভিনেত্রী সাবিলা নূরসহ আরও কয়েকজন শিল্পী আছেন, যাঁদের বিশ্বাস- সবকিছুর পর জার্মানি দলের হাতেই উঠবে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা। আবার সিয়ামের মতো কিছু তারকার চাওয়া ক্রিস্টিয়ান রোনালদোর পর্তুগাল কিংবা স্পেন ফুটবল দলের হাতে উঠুক বিশ্বকাপের শিরোপা।