ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভার্চুয়ালি ডাটা সংরক্ষণে ক্লাউড স্টোরেজ। পেনড্রাইভ বা হার্ডডিস্কে ডাটা সংরক্ষণের বদলে সহজে যে কোনো জায়গা থেকে ব্যবহার সুবিধা থাকায় ক্লাউড স্টোরেজের ব্যবহার বাড়ছে। পেনড্রাইভ বা হার্ডডিস্কের মতো বহন করার ঝামেলা নেই, সেবা হিসেবেও অধিক নিরাপদ ক্লাউড স্টোরেজ। হার্ডডিস্ক ক্র্যাশ করে কিংবা পেনড্রাইভ চুরি হয়ে ডাটা খোয়া যাওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু ক্লাউডে স্টোর করে রাখলে এই ভয় নেই। জরুরিভিত্তিতে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডাটা পাঠানো দরকার কিন্তু সেই ডাটা আছে বাসার হার্ডডিস্ক বা পেনড্রাইভে। কী করবেন তখন? সেই ডাটা যদি ক্লাউডে স্টোর করা থাকে, যে কোনো জায়গা থেকে সেটি ব্যবহার করা যাবে। তাই সবসময় স্টোরেজ এক্সেসরিজ বা পেনড্রাইভ নিয়ে চলাফেরা করতে হবে না। ফলে সহজে ডাটা ব্যবহারে অনেকে গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স কিংবা মাইক্রোসফটের ওয়ানড্রাইভ কিংবা অ্যাপল আইক্লাউড ব্যবহার করছেন। এখানে অ্যাকাউন্ট খুললেই বিনামূল্যে নির্দিষ্ট স্পেস দেওয়া হয়। পরে চাইলে আরও বাড়তি স্পেসও কিনে ব্যবহার করা যায়।

বিনামূল্যে ক্লাউড

অনলাইনে ৩০০ জিবির ওপর জায়গা পাওয়া যাবে বিনামূল্যেই। এখানে খুব সহজেই ফাইল আপলোড করে রাখতে পারবেন। আর সেগুলো যে কারও সঙ্গে শেয়ারও করতে পারবেন। তাই ক্লাউড স্টোরেজে ব্যাকআপ হিসেবে রেখে দেওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, ছবি কিংবা ভিডিও।

গুগল ড্রাইভ :সার্চ জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান গুগলের ক্লাউড স্টোরেজ সেবা গুগল ড্রাইভে বিনামূল্যে ১৫ জিবি পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণ সুবিধা রয়েছে। উইন্ডোজ বা ম্যাক কম্পিউটারের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মের স্মার্টফোনেও ব্যবহার করা যাবে। ঠিকানা : www.drive.google.com

ওয়ানড্রাইভ : মাইক্রোসফটের বর্তমান ক্লাউড স্টোরেজ সেবা ওয়ানড্রাইভ। এটি আগে স্কাইড্রাইভ নামে পরিচিত ছিল। ওয়ানড্রাইভ ক্লাউড স্টোরেজ সেবা উইন্ডোজ ৮ এবং এক্সবক্স ৩৬০-তে বিল্ট-ইন রয়েছে। পুরোনো সংস্করণের উইন্ডোজ বা ম্যাক কম্পিউটারের জন্য ওয়ানড্রাইভ ডাউনলোড করে নিতে হবে। এটি উইন্ডোজ ফোন, অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মের মোবাইল থেকেও ব্যবহার করা যাবে। ওয়ানড্রাইভে বিনামূল্যে ১৫ জিবি স্টোরেজ সুবিধা পাওয়া যাবে। ঠিকানা : www.onedrive.live.com

অন্যান্য :অনলাইনে ফাইল সংরক্ষণ, শেয়ার এবং নিরাপত্তা সুবিধার জন্য সেরা সাইটের কথা ধরা হলে তার মধ্যে থাকবে ড্রপবক্স (www.dropbox.com) এবং বক্স (www.box.com)। এই সাইটগুলোতে রয়েছে নানা ধরনের ফিচার ব্যবহারের সুবিধা, তবে বিনামূল্যে স্টোরেজ ব্যবহারের সুবিধা সাইট ভেদে ২ জিবি থেকে ১০ জিবি পর্যন্ত। তা ছাড়া রয়েছে www.icloud.com, www.copy.com, www.bitcasa.com, www.justcloud.com, www.amazon.com/clouddrive, www.spideroak.com, www.zipcloud.com-সহ আরও বেশ কিছু ক্লাউড স্টোরেজ সাইট।

হাইভ : হাইভের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো আনলিমিটেড ফ্রি স্টোরেজ, যেখানে অন্য সব ভেন্ডর সহজেই প্রদান করে না। এটি ফ্রি ও আনলিমিটেড হলেও দুটি সমস্যা রয়েছে। তা হলো- প্রচুর বিজ্ঞাপন অত্যাচার সহ্য করতে হবে এবং ডেস্কটপ কিংবা মোবাইলে ব্যবহার উপযোগী অ্যাপস নেই।

সারডক : অনলাইনে ডাটা স্টোর রাখার জন্য সারডক বিনামূল্যেই দিচ্ছে ১০০ জিবি জায়গা। সারডক ডটকমে সাইনআপ করলে বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে স্টোরেজ। শুধু তাই নয়, সাইটটির প্রচারণা চালিয়ে বন্ধুদের এই সাইটটি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে এক টেরাবাইট পর্যন্ত বিনামূল্যে তথ্য সংরক্ষণের সুবিধাও পাওয়া যায়। ঠিকানা : www.surdoc.com

মেগা : নিরাপদ তথ্য সংরক্ষণের সুবিধা দিচ্ছে 'মেগা'। এটি ব্যবহারকারীর ফাইলগুলো সার্ভারে এনক্রিপশন প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপদ রাখে। সাইটটিতে ৫০ জিবি পর্যন্ত বিনামূল্যে তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে। অ্যান্ড্রয়েড, ব্ল্যাকবেরি, আইওএস প্ল্যাটফর্মের স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারে ক্রোম ও ফায়ারফক্স ব্রাউজার থেকে 'মেগা'তে ফাইল আপলোড করা যাবে। স্মার্টফোনে অ্যাপস ও ব্রাউজারে এক্সটেনশন সিঙ্ক সুবিধা যে কোনো ডিভাইসে ফাইল ব্যবহার করা যাবে। ঠিকানা : www.mega.co.nz

এ ড্রাইভ : এ ড্রাইভে ৫০ জিবি পর্যন্ত বিনামূল্যে তথ্য সংরক্ষণ করার সুবিধা রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস স্মার্টফোনে অ্যাপস ব্যবহারের পাশাপাশি কম্পিউটারে ব্রাউজার থেকেও এ ড্রাইভে তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। শুধু তাই নয়, সংরক্ষিত ফাইল অনলাইনে এডিট করার সুবিধাও দিচ্ছে এ ড্রাইভ। ঠিকানা www.adrive.com ।

জনপ্রিয় ক্লাউড


বিনামূল্যে ক্লাউডগুলোতে বেশি স্টোরেজ সুবিধা পাওয়া যায় না। সেজন্য আপনি চাইলে জনপ্রিয় কিছু ক্লাউড থেকে মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।

মাইক্রোসফট ওয়ানড্রাইভ :গুগল ড্রাইভের মতোই এটি সমান জনপ্রিয় সাইট। অবশ্য এর আগের নাম ছিল স্কাইড্রাইভ। বর্তমানে ১৫ জিবি ফ্রি স্টোরেজ সুবিধা প্রদান করছে। মাসে ২ ডলার খরচ করলে ১০০ জিবি এবং ৭ ডলার খরচ করলে ১ টিবি স্টোরেজ পাওয়া যাবে। এখানে আরেকটি সুবিধা হলো, আপনার পরিচিতদের মধ্যে শেয়ার করলে অতিরিক্ত ৫ জিবি ফ্রি জায়গা পাবেন।

বক্স ক্লাউড স্টোরেজ :এখানে ১০ জিবি ফ্রি জায়গা পাওয়া যাবে। বন্ধুবান্ধবকে রেফার করলে সর্বোচ্চ ২২ জিবি পর্যন্ত জায়গা পেতে পারেন। যদি পেইড ব্যবহার করতে চান, তাহলে মাসে ৫ ডলারে ৫০ জিবি এবং ৫০ ডলারে ৫০০ জিবির সুবিধা পাওয়া যাবে। এই সার্ভিসটি পরিচালনা করছে হোস্ট ভিপিএন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন ফ্রগ।

কাবি :এই ক্লাউড স্টোরেজের আকর্ষণ হলো, ৫ জিবি পর্যন্ত ফ্রি জায়গা পাওয়া যাবে। মাসে ৪ ডলার খরচ করলে ১০০ জিবি স্টোরেজ সুবিধা পাবেন।
হাই ড্রাইভ :হাই ড্রাইভ নামের এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে স্টার্টো এজি নামের একটি জার্মান ভেন্ডর। এখানে সাইনআপ করলে ফ্রি ৫ জিবি জায়গা পাবেন। অতিরিক্ত যেমন ৫০০ জিবি নিতে গেলে আপনাকে মাসে ১২ ডলার গুনতে হবে।

কপি :ব্যারাকুডা নেটওয়ার্ক নামক একটি আইটি প্রতিষ্ঠান এই ক্লাউড স্টোরেজ সেবাটি প্রদান করছে। ব্যারাকুডার খ্যাতি সিকিউরিটি ও স্টোরেজের ক্ষেত্রে, যার ফলে এই সার্ভিসেও অসম নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। ফ্রিভাবে সাইনআপ করলে ১৫ জিবি জায়গা পাওয়া যাবে। মাসে ৫ ডলার খরচ করলে ১০০ জিবি স্টোরেজ পাওয়া যাবে।

বিটকাসা :বিটকাসা নামের প্রতিষ্ঠানটি ফ্রিভাবে ৫ জিবি স্টোরেজ সুবিধা প্রদান করছে। ৫ জিবির বেশি নিলে মাসে ১০ ডলার অর্থ ব্যয় করতে হবে।

অ্যামাজন ক্লাউড ড্রাইভ

অ্যামাজন ক্লাউড ড্রাইভ আগে সার্ভিস ফ্রি দিলেও বর্তমান সময়ে ফ্রি সেবা দিচ্ছে না। এখানে অ্যামাজন প্রাইম কাস্টমাররা পাবেন ফ্রি আনলিমিটেড ফটো স্টোরেজ সুবিধা। অ্যামাজনের বিজনেস ওরিয়েন্টেড ক্লাউড স্টোরেজ সেবার গ্রাহকরা সিম্পল স্টোরেজ সার্ভিসেস সামের প্যাকেজের আওতায় ৫ জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ সুবিধা পাবেন।

কতটা নিরাপদ ক্লাউড সেবা?

ই-মেইল থেকে শুরু করে ফেসবুক, ইউটিউবসহ অনলাইনভিত্তিক যেসব সেবা আমরা ব্যবহার করি তার অধিকাংশ ডাটাই ক্লাউডে সংরক্ষিত থাকে। তবে ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় ডাটা গোপনীয়তা বজায় রেখে এসব সেবায় সবসময় রাখা যায় না। এজন্য প্রয়োজন ক্লাউড স্টোরেজ। তবে ক্লাউড স্টোরেজে ডাটা রাখলে অনেকের মনে হ্যাক হওয়ার ভয় থাকে। সম্প্রতি ফেসবুক, ইয়াহু বা টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক বা তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যে প্রতিষ্ঠানের সেবা নিচ্ছেন, সেই প্রতিষ্ঠানটি কতটা সুরক্ষা দেয়, তা দেখতে হবে। এ গ্রাহক ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যামাজন, গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট ও ফেসবুক সবচেয়ে বড় ডাটা সেন্টারের মালিক।