১৯ নভেম্বর, শেষ হেমন্তের সকালটা ছিল রঙিন। ফুরফুরে মনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তনে অংশ নিতে সাতসকালে হাজির হয়েছিলাম কার্জন হল প্রাঙ্গণে। ক্যাম্পাসে এসে চোখে পড়ল হাজারো শিক্ষার্থীর উল্লাস। কারও গাউন গায়ে স্বতঃস্ম্ফূর্ততা, কারও আবার মাথার হ্যাট উড়ছে আকাশে। এসব দৃশ্য ধারণে চলছে ক্লিক ক্লিক। দেদার উঠছে সেলফি। মাঠজুড়ে আলোকচিত্রীদের ব্যস্ততার যেন কমতি নেই। স্বপ্ন পূরণের এক মাহেন্দ্রক্ষণে শিক্ষার্থীরা। এ তো গেল কার্জন হলের সামনের চিত্র। সমাবর্তন স্থল থেকে কার্জন হল কাছাকাছি হওয়ার কারণে আগেই পরিকল্পনা করেছিলাম প্রথমে কার্জন হলের সামনে ছবি তুলব। পরে সমাবর্তনে অংশ নেব।

ছবি তুলতে বেজে যায় ৯টা। আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখর হয়ে ওঠে ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের আশপাশ। চারদিকে সাজসাজ রব। কার্জন হল প্রাঙ্গণে চলে চ্যান্সেলরের শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। দুপুর ১২টা বাজার আগে ফাঁকা হতে থাকে হল প্রাঙ্গণ। সহপাঠী সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অপু মজুমদার, রাসেল মিয়া, বিবি রোকেয়া, বনি আমিন, জহিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, শহিদুল ইসলাম মোল্লা, শাখাওয়াত হোসেন, মাহমুদা খানমের সঙ্গে আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে ঢুকে পড়লাম সমাবর্তনস্থলে। বিশাল প্যান্ডেল। যতদূর চোখ যায় দেখা মেলে শিক্ষার্থীদের আসন গ্রহণের ব্যস্ততা।

জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল কার্যক্রম। নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যঁ তিরোল সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লস ডিগ্রি প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোঃ আবদুল হামিদ সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ডিগ্রি প্রদান করেন। অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে দেখা গেল, গ্র্যাজুয়েটরা দলে দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে গেছেন ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে। সমাবর্তনের মূল আয়োজন দুপুরের মধ্যে শেষ হয়ে গেলেও, দিনভর ক্যাম্পাসে ছিল শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। তাঁরা যেন খুঁজে ফিরছিলেন তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেইসব সোনালি দিনের। সুন্দর মুহূর্ত ভাগাভাগি করতে কেউ কেউ সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন পিতা-মাতাকেও। বিভিন্ন অনুষদ, প্রশাসনিক ভবন, কলা ভবন, অপরাজেয় বাংলাসহ ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। সেই ভিড় থেকে ভেসে আসছে 'কতদিন পর দেখা', 'বন্ধু কী খবর বল', 'তুই অনেক বদলে গেছিস'- এ রকম নানা কথামালা। দলবল বেঁধে দুপুরের খাবার খেতে জড়ো হয়েছিলাম ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের মাঠে। সেখানেই ছিল একদফা ফটোসেশন পর্ব। এরপর নানা গল্প আড্ডায় মেতে উঠি সবাই।

অপু মজুমদার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, 'এ রকম মুহূর্তের জন্য সবারই অনেক অপেক্ষা থাকে। দুই বছর পর সমাবর্তন হওয়ায় ঢাবির ইতিহাসে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে হয়েছে এবারের আয়োজনে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে কোর্স শেষ করার পর সমাবর্তনে উপস্থিত থাকার আনন্দই আলাদা। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছি। দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।' বিবি রোকেয়ার ভাষ্যে, 'অনুভূতি অসাধারণ; অনেক গর্বের। খুব মিস করব প্রিয় এই ক্যাম্পাসকে।' এক সময় ঢাবির বুকে বিকেল গড়িয়ে নেমে আসে সন্ধ্যা। সহপাঠীরা যেন ক্যাম্পাস ছাড়তেই চাইছেন না। রাতেও চলে আড্ডা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ক্যাম্পাস ফাঁকা হতে থাকে। এবার বিদায়ের পালা। সহপাঠীরা ছেড়ে চলে যাওয়ায় মুহূর্ত বেদনায় রূপ নিয়েছিল। কিছু সুখস্মৃতি নিয়ে আমিও ক্যাম্পাস ত্যাগ করি।