ডিটক্স পানি নিয়মিত পান করলে এক সপ্তাহের মধ্যে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন কমে যায়- এমন ভুল ধারণা অনেকের মধ্যেই আছে। তবে ডিটক্স পানি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ডিটক্স পানি :শরীরকে হাইড্রেট রাখতে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ দূষিত উপাদান বের করতে পানির সঙ্গে প্রাকৃতিক উপাদান মিশ্রিত করে যে ধরনের পানি গ্রহণ করা হয়, মূলত সে পানিই হচ্ছে ইনফিউজড বা ডিটক্স পানি। প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে বিভিন্ন জিনিস থাকতে পারে, যেমন- ফল, সবজি, ভেষজ উপাদান কিংবা বিভিন্ন মসলা। এ ছাড়া বিশুদ্ধ নরমাল পানিও ভালো একটি ডিটক্স পানি হিসেবে কাজ করে। কেননা শরীর থেকে দূষিত উপাদান নরমাল পানিই সবচেয়ে বেশি দূর করে থাকে। পানি সাধারণত দেহকে বিষমুক্ত করে। খালি পেটে পানি পান করলে দ্রুত বিষাক্ত পদার্থ বের হয়। কারণ, তখন টক্সিন ও পানির মধ্যে কোনো খাবার ডিটক্সিফাইড প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় না। এ ছাড়া খালি পেটে পানি পান করলে কোষের শ্বেত রক্তকণিকা, অর্থাৎ সাদা রক্ত প্রবাহে সাহায্য করে। ফলে দেহ রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে এবং মাইগ্রেন প্রতিরোধে কাজ করে।

বিভিন্ন ধরনের ডিটক্স পানি :গরমের দিন হোক কিংবা শীতের দিন, দৈনিক ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা উচিত। অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য শীতকালে দৈনিক আমাদের যে পরিমাণ পানি গ্রহণ করা দরকার সেটা পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করা হয় না। তাই কিছু কিছু উপাদান আছে যা হালকা কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশ্রিত করেও ডিটক্স পানি তৈরি করে পান করা যায়। পানির সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিশ্রিত করেও পানির স্বাদ বাড়িয়ে ডিটক্স পানি তৈরি করা যায়।

১. যাঁদের এসিডিটির সমস্যা আছে এবং যাঁদের অতিরিক্ত পরিমাণে মেদ আছে, তাঁরা লেবু, মধু ও দারুচিনি গুঁড়া অথবা তোকমা, চিয়া সিডস মিশিয়ে ডিটক্স পানি পান করতে পারেন। এটি কুসুম গরম করেও পান করতে পারেন।
২. মসলাজাতীয় উপাদান, যেমন- গোলমরিচ, লং, দারুচিনি, তেজপাতা, আদা, রসুন, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, তুলসীপাতা, জিরা, মেথি, কালিজিরা ইত্যাদির মাধ্যমেও ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করা যায়।
৩. ফলের ক্ষেত্রে আপেল, কমলা, তরমুজ, আঙুর, খেজুর ইত্যাদি দিয়েও ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করা যায়।
৪. যাঁদের কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি, তাঁরা মেথি কিংবা কিশমিশের ডিটক্স পানি পান করতে পারেন।
৫. বিভিন্ন ভেষজ উপাদানের সাহায্যেও ডিটক্স পানি বানাতে পারেন। অনেক ভেষজ উপাদান আছে যেগুলো অত্যন্ত উপকারী। এগুলো দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমকে বাড়িয়ে দেয় এবং অ্যান্টিবডি তৈরি হতে সাহায্য করে।

উপকার ও ক্ষতি

  • বিভিন্ন ধরনের ফল এবং উপকারী ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি ডিটক্স পানীয় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
  • ডিটক্স পানি দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং শরীরের বাড়তি মেদ কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • ডিটক্স পানি হজমের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরকে হাইড্রেট রেখে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ করে তোলে।
  • দেহের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এবং অবসাদ কমিয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ডিটক্স পানি গ্রহণ করলে এবং এক দিনের ডিটক্স পানি অন্য দিন গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। যাঁদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে, তাঁরা সব ধরনের ডিটক্স পানি গ্রহণ করতে পারবেন না।
  • অনেকেই অ্যাপল সিডার ভিনেগার ডিটক্স পানির সঙ্গে মিশিয়ে গ্রহণ করে থাকেন। এটি শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সঠিক পন্থা অবলম্বন করে ডিটক্স পানি তৈরি করতে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী পান করতে হবে।
  • তোকমা, চিয়া সিডস, ইসবগুলের ভুসি- এসব উপাদান ডিটক্স ওয়াটারে পরিমাণমতো ব্যবহার করতে হবে।

ডিটক্স পানি পান করলে কি ওজন কমে?
হ্যাঁ, অবশ্যই ওজন কমে। তবে তা সঠিক নিয়ম মেনে পান করতে হবে। সঠিক জীবনযাপনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে। যাঁরা ক্রাশ ডায়েটে আসক্ত এবং যাঁরা ভাবেন এক সপ্তাহে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন কমে যাবে, তা ঠিক নয়। এটি ভুল ধারণা। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। া
লেখক :পুষ্টিবিদ

বিষয় : ডিটক্স পানি ওয়েট লস

মন্তব্য করুন